Trending
চাল সংকট কি আরও তীব্র হচ্ছে? প্রবাসী ভারতীয়দের মাথায় পড়েছে হাত। নেপথ্যে কেন্দ্রীয় সরকার। নয়াদিল্লির অঙ্গুলিহেলনে আমেরিকা, ব্রিটেনের মুদির দোকানে এমনিই লাইন পড়েছে। বাসমতী ছাড়া আর কিছু রফতানি হবে না বলেছে নয়া দিল্লি। শুনেই ফোঁস করেছেন প্রবাসীরা। এই বিষয়ে আমরা অলরেডি একটা প্রতিবেদন বানিয়েছি। আই বটনে ক্লিক করে দেখে নিতে পারেন। তবে আজ ভারতের চাল নিষেধাজ্ঞা নিয়ে যত না বলব, তার থেকে বেশি নজর ঘোরাব রাশিয়ার দিকে। হ্যাঁ, ক্রেমলিন সাফ জানিয়ে দিয়েছে রাশিয়া চাল রফতানিতে নিষেধাজ্ঞা জারি করল। কিন্তু ভারতের পায়ে পা মেলানোর কারণ? বিষয়টা ক্লিয়ার করার জন্য স্কিপ না করে দেখুন গোটা ভিডিও।
আচ্ছা, প্রথমেই বলি পশ্চিমা দেশের তর্জন গর্জনকে রাশিয়া শুরু থেকেই একেবারে পাত্তা দেয় নি। আর ভবিষ্যতেও দেবে বলে মনে হয় না। রাশিয়ার হাতে মোক্ষম কিছু অস্ত্র আছে। অস্ত্র মানে কিন্তু হাতে মারার অস্ত্রের কথা বলছি না। ভাতে মারার অস্ত্রের কথা বলছি। সেগুলো কী কী? একঃ তেল, দুইঃ ন্যাচারাল গ্যাস এবং তিনঃ চাল সহ অন্যান্য ফসল। রাশিয়ার ওপর যখন ইউরোপ এবং আমেরিকা প্রত্যেকেই নির্ভরশীল, তখন রাশিয়ার দিকে এতো আঙুল না-তুললেই ঝামেলা মিটে যেত। মুশকিল হচ্ছে, আমেরিকা সর্বত্র এতো দাদাগিরি দেখায় যে কিছু বলার নেই। আর ইউরোপীয় ইউনিয়ন এখন হ্যাঁ হ্যাঁ বলা সং গোছের হয়ে গেছে। আসলে ডলারের দাপট, বুঝলেন কিনা। ফরেক্স রিজার্ভে ডলার কমলে সবার চাপ। তাই আমেরিকার দিকে তাকিয়ে প্রত্যেকেই রাশিয়ার সামনে দেয়াল তৈরির চেষ্টা করেছে। পুতিন সাফ জানিয়েছিলেন, ইউক্রেনের প্রতি যদি বেশি মানবিক হন তাহলে রাশিয়ার অমানবিক হতে বেশি সময় লাগবে না। তেল নিয়ে, গ্যাস নিয়ে আগে একটা ওয়ার্নিং দেওয়া হয়েছিল ক্রেমলিন থেকে। এবার হল চাল।
পুতিন বলে দিয়েছেন, চাল রফতানি এখন সম্ভব নয়। তাই কিছুদিনের জন্য রাশিয়া বিদেশে চাল রফতানি করবে না। এখন তারা নজর দেবে নিজের দেশের আভ্যন্তরীণ বাজারে। দেশের মানুষের পেট ভরানোর পর যদি উদ্বৃত্ত কিছু থাকে তখন সেটা বিদেশে রফতানি করা হয়। রাশিয়ায় যে পরিমাণ প্রক্রিয়াজাত চাল উৎপাদন হয়, তাতে দেশের মানুষের পেট ভরবে না, এটা বাজে কথা বলা হবে। আসলে রাশিয়া আভ্যন্তরীণ বাজারে ফ্লো বজায় রাখার জন্য যে কারণটা তুলে ধরেছে সেখান থেকে পরিষ্কার যে, বিদেশে চাল রফতানিতে নিষেধাজ্ঞা বজায় রাখার জন্য যে পয়েন্ট ক্রেমলিন তুলে ধরেছে সেটা আসলে প্যাঁচে ফেলার জন্যই। আচ্ছা এখানে বলে দিই, এই যে বললাম, কিছুদিনের জন্য- এই কিছুদিন কত জানেন? এই বছরের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত। মানে, রাশিয়ার বিরুদ্ধে যে রক্তচক্ষু দেখানোর জন্য গণ্ডায় গণ্ডায় অস্ত্র পৌঁছচ্ছিল ইউক্রেনে, এটা পুতিনের একটা মধুর প্রতিশোধ বলা কি খুব কঠিন হবে? তবে হ্যাঁ। রাশিয়ার বক্তব্য খানিকটা ভারতের মতই। ধানের ফলন কম হয়েছে। তাই চাল উৎপাদন কম হয়েছে। রাশিয়ায় এখন ভয়ঙ্কর ডলার ক্রাইসিস। অতএব আগে ঘর, শেষে পর। তবে বিশ্ব জুড়ে কিন্তু পুতিনের এই নিষেধাজ্ঞা নেই। ইউরেশিয়ান ইকোনমিক ইউনিয়নের সদস্য দেশগুলো রাশিয়ার থেকে চাল সরবরাহ পাবে। এঁরা কারা জানেন? বেলারুস, আর্মেনিয়া, কাজাখস্তান, কিরগিস্তান। পুতিন বলে দিয়েছেন, এই সব দেশে চাল রফতানি হবে। কিন্তু ঐ আমেরিকা, ইউরোপ- এসব জায়গায় রফতানি নয়।
আর এসব দেখে বেজায় ঝামেলায় পড়েছে আইএমএফ মানে ইন্টারন্যাশনাল মানিটারি ফান্ড। নয়া দিল্লির সিদ্ধান্ত পেয়ে বুকে ধাক্কা খেয়েছিল বহু দেশ। কারণ বিশ্ব বাজারে চাল রফতানি ভারত বন্ধ করলে কী ছবি দেখতে হতে পারে, সেটা আইএমএফ আশঙ্কা করেছিল। আর সেটা সত্যিও হয়। তাই ভারতকে তারা অনুরোধ করেছিল যাতে চাল রফতানিতে নিষেধাজ্ঞা জারি না করা হয়। কিন্তু রাশিয়াকে? আইএমএফ চলে ডলারে। মানে আমেরিকার পাপেট। ফলে, আইএমএফ যেমন ভারতের সঙ্গে একটু বিগলিত ভাবে অনুরোধ দেখাচ্ছে, রাশিয়ার সঙ্গে সেটাও তো করতে পারছে না। সেখানে রুবলের কোন দাম নেই। এদিকে রাশিয়াকে অনুরোধ করাও সম্ভব নয়। কারণ বাইডেনের ভ্রু আবার কুঁচকে যাবে। আইএমএফ কি জানে না যে গোটা বিশ্বে ৩০০ কোটি মানুষ চালের ওপর নির্ভরশীল। চাল তাদের অন্যতম প্রধান খাদ্যশস্য। যার ৯০ শতাংশ আসে এশিয়া থেকে। ভারত এবং রাশিয়া এই দুটো দেশ যদি একসঙ্গে চাল রফতানি বন্ধ করে তাহলে বিশ্ব বাজারে হাহাকার তৈরি হওয়া খুব একটা কঠিন নয়। তখন? আইএমএফ ভারতকে অনুরোধ করতে পারছে, কিন্তু রাশিয়াকে তো কিছুই বলতে পারছে না।
তবে শেষে একটা কথা। পুতিন কিন্তু এতটাও অমানবিক নন। অন্তত রাশিয়ার একটা যুক্তি সেটাই বলছে। পুতিন জানিয়ে দিয়েছেন, রাশিয়া হয়ত চাল রফতানি বন্ধ করেছে। তার মানে এটা নয় যে রাশিয়া ভূখণ্ডের ওপর দিয়েও কোন চাল পরিবহন করা যাবে না। তেমন কোন নিষেধাজ্ঞা সেভাবে নেই। কিন্তু তাতে কি দিনের শেষে সমস্যার গভীরতা খানিক লঘু হবে? মনে হয় না। কারণ ভারত বন্ধ করেছে চাল রফতানি। সেই দেখাদেখি রাশিয়াও বন্ধ করল চাল রফতানি। গ্লোবাল পলিটিক্সে ভারত খুব ভালো করে জানে, আমেরিকা পাশে দাঁড়ায় একমাত্র সে নিজে যখন বিপদে পড়ে আর না-হলে বিশ্ব মানচিত্রে নিজের ভাবধারা অক্ষুন্ন রাখতে। সুতরাং আমেরিকার ওপর বেশি ভরসা করে লাভ নেই। তার থেকে সুখে দুঃখে আপদে বিপদে রাশিয়াকে পাশে পেয়েছে ভারত। তাহলে কি ভারত আর রাশিয়া ঘুরিয়ে আমেরিকা আর ইউরোপকে শায়েস্তা করতে ছক্কা হাঁকাল? আপনারা কি মনে করেন, সেটা বরং আমাদের জানিয়ে ফেলুন কমেন্ট বক্সে। সঙ্গে লাইক করুন শেয়ার করুন। আর চ্যানেলে নতুন হলে সাবস্ক্রাইব করে নিন বিজনেস প্রাইম নিউজ।
জীবন হোক অর্থবহ