Market
ইউক্রেনের সঙ্গে যুদ্ধ শুরুর পর থেকেই নামতে শুরু করে রুবলের দাম। পরিস্থিতি এতটাই বাড়াবাড়ির দিকে চলে যাচ্ছিল যে রাশিয়ার মুদ্রা ক্রমশই তার আভিজাত্য হারাতে বসছিল। একইসঙ্গে আন্তর্জাতিক মহলে খলনায়ক হয়ে উঠছিলেন পুতিন। আমেরিকা থেকে ইউরোপ প্রকাশ্যে রাশিয়ার এই আগ্রাসী মনোভাবের কড়া জবাবও দিচ্ছিল। ফলে দেশ-বিদেশের আর্থিক বিশেষজ্ঞরা মনে করছিলেন, এবার হয়ত রুশ অর্থনীতিতে ধস নামা সময়ের অপেক্ষা। কারণ শুধু যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার জন্য রাশিয়াকে প্রতিদিন ২০ বিলিয়ন ডলার খরচ করতে হচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে ক্রেমলিনের কি মাষ্টারস্ট্রোক থাকতে পারে, সেটা নিয়েই সন্দেহ দানা বাঁধছিল। কিন্তু রুবলের ভ্যালু আবারও ঘুরে দাঁড়াতে পারছে। চ্যালেঞ্জ জানাচ্ছে বিশ্বের সবথেকে শক্তিশালী মুদ্রা ডলারকে। বলাই বাহুল্য, এর পেছনে যিনি মগজ লাগিয়েছেন তিনি আর কেউ নন স্বয়ং পুতিন। কী, সেটাই বলছি।
রাশিয়া থেকে ইউরোপের বাজারে যা সর্বাধিক রফতানি করা হয়ে থাকে, সেটা রুশ তেল এবং গ্যাস। ইউরোপের জন্য রাশিয়ার এই দুটি রফতানি পণ্যের ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আর এখানেই চেকমেট করল রাশিয়া। পুতিন যুদ্ধ শুরুর ডাক দেওয়ার পর থেকেই বিশ্ব বাজারে তেল এবং গ্যাসের দাম বাড়তে শুরু করে। আমেরিকা এবং ইউরোপের চোখ রাঙানির ভয় পুতিন পাননি। যে কারণে ক্রেমলিন থেকে জানিয়ে দেওয়া হয়, বেশি ট্যাঁফুঁ করলে রাশিয়া হয়ত তেল এবং গ্যাস রফতানি নিয়ে ভাবনাচিন্তায় বসতে পারে। এদিকে রাশিয়ার দুই বন্ধু দেশ চিন এবং ভারতকে বরাবর কম দামে তেল কিনতে খোঁচা দিয়েছে রাশিয়া। সেই সুযোগ এই দুটো দেশ কখনই হাতছাড়া করেনি। অন্যদিকে ইউরোপের বাজার রাশিয়ার হুমকি পেয়ে নড়েচড়ে বসে। কারণ রাশিয়া যা পণ্য রফতানি করে তার ৬০ শতাংশই তেল এবং প্রাকৃতিক গ্যাস। ইউরোপের বাজারে যখন এই দুটোই অগ্নিমূল্য হতে শুরু করে তখন ফের রাশিয়ার থেকে তেল এবং গ্যাস কিনতে আর কোন দ্বিধাবোধ করেনা। অর্থাৎ বাজিমাৎ করলেন পুতিন। কিন্তু এখানেই শেষ নয়। পুতিন দিলেন অন্য একটা চাল। এতদিন পর্যন্ত রাশিয়া থেকে তেল এবং প্রাকৃতিক গ্যাস কিনতে হলে মুদ্রা হিসেবে ব্যবহার করা হত ইউরোকে। পুতিন জানিয়ে দিলেন, সেসব কিছু হবে না। কিনতে হলে রুবলেই কিনতে হবে। ফলে ইউরোকে রুবলে কনভার্ট করিয়ে আমদানি করতে শুরু করল ইউরোপ। ব্যস, আর আটকায় কে? ইউরোপের বাজারে শক্তিশালী হতে শুরু করল রুবলের ভ্যালু। এখন ইউরোপের বাজারে ভালোরকম চাহিদা তৈরি হয়েছে রুবলের।
বর্তমানে ১ মার্কিন ডলার ৬২ রুবলের সমান। কিন্তু যেভাবে রুবল বিশ্ব বাজারে অপ্রতিরোধ্য গতিতে ছুটছে, তাতে হয়ত দেখা যাবে ১ মার্কিন ডলার ৫০ রুবলের সমান হয়ে যেতে পারে। নিঃসন্দেহে সেটা পুতিনের জন্য হতে পারে এক অভাবনীয় সাফল্য। তবে এই বিষয়টা খুব একটা ভালো চোখে দেখতে চায়না রাশিয়া। সেই দেশের অনেক আর্থিক বিশেষজ্ঞরা চায় না রুশ মুদ্রার এমন ভ্যালু বেশি বাড়তে শুরু করুক। সেটা তাদের পণ্য রফতানির জন্য বাধা তৈরি করতে পারে। তাই সবমিলিয়ে বলাই যায়, যখন গোটা বিশ্ব যখন ভাবছিল রুবলের ভ্যালু কমে যাওয়া বা পুতিনের অসুস্থতা রাশিয়ার অর্থনীতিতে ভাঙন ধরাতে পারে, ঠিক তখনই বল বাউন্ডারির বাইরে পাঠিয়ে হাসতে হাসতে ছড়ি ঘোরানোর প্রস্তুতি নিতে থাকলেন পুতিন। আর যে কারণে আবারও দর বাড়তে শুরু করল রুবলের। প্রতিবেদনটি যদি ভালো লেগে থাকে, তবে শেয়ার করুন ব্যপকভাবে সঙ্গে সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের চ্যানেল বিজনেস প্রাইম নিউজ।