Story
ভাষার মধ্যেই লুকিয়ে থাকে একটি জনজাতির ভবিষ্যৎ। ভাষার অস্তিত্ব বিপন্ন হলে সেই জাতির ভবিষ্যতও সংকটের মধ্যে পড়ে। ঠিক যেমন কোচ রাভা জনগোষ্ঠী। ইন্দো-মঙ্গোলীয় গোষ্ঠীর এই কোচ ভাষা আসলে চিন, তিব্বত ও বার্মা ভাষার অন্তর্গত। যাদের রয়েছে স্বতন্ত্র সংস্কৃতি, কৃষ্টি, পোশাক পরিচ্ছদ। এই জনগোষ্ঠীর অনেকে থাকেন অসমে আবার অনেকে থাকেন পশ্চিমবঙ্গে। নিজস্ব কোন লিপি না থাকার কারণে বহুদিন ধরেই উচ্চারণগত সমস্যার মধ্যে পড়তে হচ্ছিল কোচ রাভা জনগোষ্ঠীর মানুষদের। ক্রমশই বিলুপ্তির দিকে এগিয়ে যাচ্ছিল একটি ভাষা। তাই ভাষার গুরুত্ব বুঝে তাকে বিলুপ্তির হাত থেকে রক্ষা করার জন্য এবার লিপি তৈরি করলেন কোচ রাভা জনজাতির গবেষক দয়চাঁদ রাভা। যিনি নিজেও একজন পেশায় রাজ্য সরকারি কর্মচারী।
সম্প্রতি এই নতুন লিপি নিয়ে এক সেমিনার অনুষ্ঠিত হয় অসম বাংলা সীমানাবর্তী বারোবিশাতে। এই সেমিনারে উপস্থিত ছিলেন রায়গঞ্জ বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা ও বাণিজ্য বিভাগের ডিন অধ্যাপক দীপক কুমার রায়। এখানে তুলে ধরা হয় এই কোচ লিপির গুরুত্ব। ৭ টি স্বরবর্ণ, ২৭ টি ব্যঞ্জনবর্ণ এবং ০ থেকে ৯ অবধি সংখ্যা দিয়ে সমৃদ্ধ হয়েছে এই কোচ লিপি। এই লিপির গুরুত্ব নিয়ে বিজনেস প্রাইম নিউজকে সরাসরি বললেন লিপির আবিষ্কারক এবং গবেষক দয়চাঁদ রাভা নিজেই।
লিপি বিজ্ঞানের গুরুত্ব ঠিক কতটা সেবিষয়ে ভাষা সচেতন মানুষ ছাড়া আর তেমন একটা কেউ জানেন না। কিন্তু এই লিপি বিজ্ঞানের মাধ্যমেই একটি ভাষা তার মেরুদণ্ড শক্ত রাখতে পারে। বজায় রাখতে পারে অস্তিত্ব। তাই দয়চাঁদবাবুর এই অসাধ্য সাধনের ভূয়সী প্রশংসা করলেন রায়গঞ্জ বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা ও বাণিজ্য বিভাগের ডিন অধ্যাপক দীপক কুমার রায়।
একটি ভাষাই হচ্ছে জনজাতির আগামীর ভবিষ্যৎ। কোচ ভাষা অসমিয়া এবং বাংলার মধ্যে পড়ে কোথাও যেন তার সম্পূর্ণতা হারিয়ে ফেলছিল। যা এই ভাষাকে ক্রমশই টেনে নিয়ে যাচ্ছিল বিলুপ্তির দিকে। কিন্তু ভাষার মধ্যেই যে লুকিয়ে থাকে মানুষের আইডেন্টিটি। তাই কোচ রাভা জনগোষ্ঠীর মানুষের মুখের ভাষা যাতে বিলুপ্ত না হয়ে যায় তাই দীর্ঘদিনের গবেষণা করে কোচ লিপি আবিষ্কার করলেন দয়চাঁদবাবু। আশা করা যায় এই লিপি একদিন কোচ রাভা জনগোষ্ঠীর অস্তিত্বের উইল হিসেবে থেকে যাবে।
অভিজিৎ চক্রবর্তী
আলিপুরদুয়ার