Trending
সম্প্রতি অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী অ্যান্টনি অ্যালবানিজ ঘুরে গেছেন ভারত। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী নিজে করে এসেছেন অস্ট্রেলিয়া সফর। অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী মিঃ অ্যালবানিজ মোদীকে ‘রিয়েল বস’ বলেও সম্বোধন করেছেন। (রিয়েল বস ভিডিও)
স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠছে, অস্ট্রেলিয়ার এই ভারত স্তুতির কারণ কী? মোদী বন্দনা করে কেন অস্ট্রেলিয়া ভারতের কাছে আসতে চাইছে? নিশ্চয়ই শুধু জিও পলিটিক্যাল ব্যপারটা নয়। এর সঙ্গে রয়েছে দুই দেশের মধ্যে তৈরি হওয়া বাইল্যাটেরাল সম্পর্ক। দ্বি-পাক্ষিক বাণিজ্য যাতে ধীরে ধীরে আকাশ ছুঁতে পারে, সেই কারণেই নিজের ঘুঁটি সাজাচ্ছে অস্ট্রেলিয়া। কিন্তু ভারতের কাছাকাছি এসে অস্ট্রেলিয়া কাকে নির্দেশ দিতে চাইছে? আসুন, আজকের প্রতিবেদনে এই নিয়ে সারব আলোচনা। বলব, কেন অস্ট্রেলিয়ার প্রায়োরিটি লিস্টে এখন শুধুই ভারত। জানতে হলে, প্রতিবেদনটি দেখুন একেবারে শেষ পর্যন্ত।
১৯৮৬ সালে অস্ট্রেলিয়া প্রথম সফর করেছিলেন রাজীব গান্ধী। তারপর পেরিয়ে গেল মাঝে অনেকগুলো বছর। ২০১৪ সালে প্রধানমন্ত্রী হলেন নরেন্দ্র মোদী। রাজীব গান্ধীর পর মোদী অস্ট্রেলিয়া সফর করে একটা শক্তপোক্ত বাণিজ্যিক সম্পর্ক তৈরি করতে চাইছিলেন। আর সেটাই হল। এরপর যখন আবার মোদীর রিসেন্ট ভিজিট হল, তখন মোদীর পপুলারিটি নিয়ে আর কোন দ্বি-মত থাকার কথা নয়। অবশ্যই এর পিছনে কাজ করেছে ভারতের অ্যাগ্রেসিভ ফরেন পলিসি। দেখা গেল, সময় যত এগোচ্ছে ততই ভারত এবং অস্ট্রেলিয়ার রিলেশন আরও মজবুত হচ্ছে। এর পিছনে আরেকটা বিষয় রয়েছে। দুই দেশের ডেমোক্র্যাটিক ট্র্যাডিশন ভালো রকম। দুই দেশেই ইংলিশ ভাষাকে প্রায়োরিটি দেওয়া হয়। আর দুই দেশের ইকোনমিক এনার্জি মোটামুটি একইরকম। কিন্তু এতো কিছুর পরেও পলিটিক্যাল নেগলিজেন্স, জিও পলিটিক্যাল রিলেশন- এগুলো দুই দেশের রিলেশনকে আর খুব একটা এগিয়ে যেতে দেয়নি। কিন্তু পরিস্থিতি এখন পাল্টানোর সময় এসে গিয়েছে। ভারত এবং অস্ট্রেলিয়ার মধ্যে সম্পর্ক আরও জোরদার হচ্ছে কারণ এই দুটো দেশ ভালোভাবে নিজেদের মধ্যে ইকোনমিক স্ট্র্যাটেজি তৈরি করছে। যা দুই দেশের সায়েন্স সেক্টরকে আরও অনেকটা বুস্ট করবে। তার মধ্যে অন্যতম অস্ট্রেলিয়া-ইন্ডিয়া স্ট্র্যাটেজিক রিসার্চ ফান্ড। জানা যাচ্ছে, স্পেস রিসার্চে আরও ভালোভাবে ছাপ ফেলার জন্য খরচ করা হবে ১.৫ বিলিয়ন ডলার। অস্ট্রেলিয়ান স্পেস এজেন্সি এবং ইসরো- যৌথভাবে কাজ করবে। এছাড়াও টেকনোলজি, মাইনিং, এনার্জিতে রিসার্চ, ডেভেলপমেন্ট এবং প্রোডাকশনের জন্য ২ বিলিয়ন ডলারের চুক্তি হয়েছে। এখানেই শেষ নয়। অস্ট্রেলিয়ায় উচ্চ শিক্ষা করতে আসা ভারতীয় পড়ুয়াদের জন্য স্টাইপেন্ড, ফেলোশীপ, গ্র্যান্টের ব্যবস্থাও করা হয়েছে অস্ট্রেলিয়া সরকারের তরফ থেকে। একইসঙ্গে অস্ট্রেলিয়ায় ভারতের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে আলাদাভাবে রেকগনিশন দেওয়া হবে। তার জন্য দুই দেশের মধ্যে তৈরি করা হচ্ছে টাস্ক ফোর্স। কিন্তু কেন অস্ট্রেলিয়ার এমন ভারতপ্রেম?
অস্ট্রেলিয়া সরকারের আসল লক্ষ্য ভারতের বাজার। ব্যবসা এবং ব্যবসায়িক সমৃদ্ধির জন্য যেখানে ফিনানশিয়াল সিকিওরিটি একটা বড় ব্যপার হয়ে দাঁড়াচ্ছে, সেখানে অস্ট্রেলিয়াকে এই মুহূর্তে একমাত্র সাধ দিতে পারে ভারত। কারণ অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে চিনের সম্পর্কে অবনতি। বিষয়টা কী একটু স্পষ্ট করে বলা যাক। অস্ট্রেলিয়ার অন্যতম বিজনেস পার্টনার ছিল চিন। ২০২১ সালের ডেটা দেখলে বুঝতে পারব, দুই দেশের মধ্যে ব্যবসার অঙ্কটা পৌঁছে গিয়েছিল ১৩৮ বিলিয়ন ডলারে। যার মধ্যে ৯৫ বিলিয়ন ডলারের বেশি আয়রন ওর, ১৫ বিলিয়ন ডলার মতন পেট্রোলিয়াম গ্যাস, এবং সাড়ে ৫ বিলিয়ন ডলারের বেশি সোনা। অস্ট্রেলিয়া এবং চিনের মধ্যে বাণিজ্যিক সম্পর্ক ১৯৯৫ সালের পর একধাক্কায় বৃদ্ধি পেয়েছে ১৭.২ শতাংশ। কিন্তু তারপরেই চিনের সঙ্গে অস্ট্রেলিয়ার সম্পর্ক ক্রমশ খারাপ হতে শুরু করল। এবং সম্পর্কের অবনতি এমন জায়গায় গিয়ে ঠেকল যে চিনের সর্বময় কর্তা জিংপিং অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে বাণিজ্যে আর তেমন উৎসাহ দেখাতে আগ্রহী হলেন না। বেশ কিছু পণ্যের ওপর জারি করা হল নিষেধাজ্ঞা। তার মধ্যে অন্যতম ওয়াইন। চিনে ওয়াইনের খুব বড় এক্সপোর্টার অস্ট্রেলিয়া। চিনের সঙ্গে সম্পর্ক খারাপ হবার কারণে ওয়াইনের ব্যবসা ভালোরকম ব্যহত হল। ২০২০ সালের তুলনায় ২০২১ সালে চিনে অস্ট্রেলিয়ার ওয়াইন এক্সপোর্ট এক ধাক্কায় কমল ৯৭%! তারপরেই কার্যত নড়েচড়ে বসে অস্ট্রেলিয়ার সরকার। তারা ঠিক করে এবার হয়ত প্রয়োজন এসেছে চিনের বিকল্প কারুর সঙ্গে ব্যবসায়িক সম্পর্ক মজবুত করা। আর সেটা একমাত্র করতে পারে ভারত। যেহেতু চিনে সবথেকে বেশি আয়রন ওর অস্ট্রেলিয়া এক্সপোর্ট করত, তারপর ঠিক হয় যে, অস্ট্রেলিয়া এবার চিনের বিকল্প কোন দেশে নিজের মার্কেট এক্সপ্যান্ড করবে। আর যে কারণে ভারতের দিকে নজর ঘুরেছে অস্ট্রেলিয়ার। তার জন্য ভারত সরকারের সঙ্গে অস্ট্রেলিয়া সরকার নিজের পলিটিক্যাল স্টেবিলিটি, ইকোনমিক স্টেবিলিটি নিয়ে ভালোরকম আলোচনা করেছে। অস্ট্রেলিয়ার এই এগিয়ে আসাটাকেও রেসপেক্ট জানিয়েছে ভারত। তার ফল কী হল?
দুই দেশের মধ্যে যে ফ্রি ট্রেড এগ্রিমেন্ট হবার কথা ছিল, সেই চুক্তি বাস্তবায়িত হয়েছে। এছাড়া এনআরআই। বন্ধুরা, অস্ট্রেলিয়ায় প্রচুর ভারতীয় থাকেন। যাদের হাত ধরে সেই দেশের ইকোনমি আরও অনেক বেশি স্টেবল হয়। অস্ট্রেলিয়া’জ ইন্ডিয়ান ডায়াসপোরাঃ এ ন্যাশনাল অ্যাসেট শীর্ষক পেপারে বলা হয়েছে, অস্ট্রেলিয়ায় বসবাস করেন ৭ লক্ষ ২১ হাজার ভারতীয়। সেই রিপোর্টে আলাদা করে অস্ট্রেলিয়ায় থাকা প্রবাসী ভারতীয়দের দিকে আরও বেশি করে নজর দিতে বলা হয়েছে। ঐ যে বললাম, সেই দেশের ইকোনমিকে স্টেবল করার জন্য ভারতীয়দের অবদান অনেক। একটা রিপোর্ট থেকে জানা গিয়েছে, অস্ট্রেলিয়ার নিজের দেশের নাগরিকদের যদি বাদ দিই, তাহলে বলব যে, অস্ট্রেলিয়ায় যত ইমিগ্রেন্ট থাকেন, তাদের মধ্যে সবথেকে বেশি ট্যাক্স আসে এই ভারতীয়দের থেকেই। মোদ্দা কথা, অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক যদি মজবুত করতে হয় তাহলে এই দেশে থাকা এনআরআই-দের ব্রিজ হিসেবেই দেখতে হবে। অর্থাৎ, ভারতের সঙ্গে অস্ট্রেলিয়ার সম্পর্ক আরও মজবুত করতে পারবেন এরাই। এনআরআই-দের ভূমিকা কতটা সেটা নিয়ে আমরা একটা প্রতিবেদন করেছিলাম। আই বটনে ক্লিক করে সেই প্রতিবেদনটা একবার দেখে নিতে পারেন। এসব কারণ ছাড়াও অস্ট্রেলিয়া এবং ভারতের মধ্যে বাইল্যাটারাল রিলেশন আরও বেটার করার অন্যতম কারণ কোয়াড। এই কোয়াড গ্রুপের মেম্বার হল অস্ট্রেলিয়া, ইন্ডিয়া, জাপান এবং আমেরিকা। সুতরাং স্ট্র্যাটেজিক পার্টনার হিসেবেও অস্ট্রেলিয়া ভারতের আরও কাছাকাছি আসতে চাইবেই। এছাড়াও দুটো দেশ একটা জয়েন্ট এক্সারসাইজ করেছে। যার নাম হল- ‘অস্ট্রাহিন্দ’। ২০২২ সালে ২৮ নভেম্বর থেকে ১১ ডিসেম্বর পর্যন্ত রাজস্থানের মহাজন ফিল্ড ফায়ারিং রেঞ্জে দুটো দেশ একসঙ্গে এই মিলিটারি এক্সারসাইজ করেছে।
বন্ধুরা, অস্ট্রেলিয়া এবং ভারতের মধ্যে সম্পর্ক আগেও ছিল। কিন্তু সেই সম্পর্ক কোনভাবেই দুই দেশের ইকোনমিক ডেভেলপমেন্টে প্রভাব ফেলতে পারেনি। কিন্তু এখন দু’তরফ থেকে সেই তাগিদ লক্ষ্য করা গিয়েছে। অস্ট্রেলিয়া এবং ভারতের মধ্যে যদি সম্পর্ক আরও মজবুত হয়, তাহলে ভারতের কাছে অস্ট্রেলিয়া যেমন বিজনেস ডেভেলপমেন্টের জন্য বহু স্পেস ক্রিয়েট করে দেবে, তেমনই ভারতের জন্য এটা হবে চিনকে জবাব দেবার এক মোক্ষম উপায়। আপনারা কী মনে করেন? মতামত জানান কমেন্ট বক্সে। সঙ্গে শেয়ার করুন আমাদের প্রতিবেদন। আর নজর রাখুন আমাদের চ্যানেল বিজনেস প্রাইম নিউজে।
জীবন হোক অর্থবহ