Story
বি পি এন ডেস্কঃ ফেলে দেওয়া ফেলনা জিনিস পুনর্ব্যবহারের ব্যবসা ক্রমশ জনপ্রিয়তা পাচ্ছে বিশ্বজুড়ে। সলিড ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্টের পাশাপাশি প্লাস্টিক রিসাইক্লিংয়ের ব্যবসাও রয়েছে তালিকার শীর্ষে। ভারতও পিছিয়ে নেই এই ব্যবসায়। হাজার হাজার মানুষ ভারতে এই ব্যবসা করে সফল হয়েছেন। পশ্চিমবঙ্গে একটু দেরিতে হলেও গজিয়ে উঠছে প্লাস্টিক রিসাইক্লিংয়ের একের পর এক ইউনিট।
তথ্য বলছে ক্রমশ বড় হচ্ছে প্লাস্টিক রিসাইক্লিংয়ের এই দুনিয়া। এর দুনিয়া যত বাড়ছে ততই খুলছে বিশ্বজুড়ে কর্মসংস্থানের সুযোগ। করোনা পরবর্তী আনলক পর্বে অনেক পরিসর ধীরে ধীরে খুললেও খোলেনি কর্মসংস্থানের দরজা। বন্ধ দরজা খুলতে, ব্যবসার পালে হাওয়া জোগাতে ছোট পুঁজিতে স্বনির্ভর হতে ভরসা থাকুক প্লাস্টিক রিসাইকেল ইউনিটে।
সাড়া বিশ্বে বছরে ২৫৮ মিলিয়ন টন প্লাস্টিক রিসাইক্লিংয়ে আসে। এর মধ্যে ৪৬ মিলিয়ন টন ফিনিশড প্লাস্টিক পণ্য তৈরি হয়। যা শতাংশের হিসেবে প্রায় ১৮%। ভারতেও এই সংখ্যাটা নেহাতই কম নয়। ভারতে মোট প্লাস্টিক পণ্যের ৬০ শতাংশ রিসাইক্লিংয়ে আসে। রাষ্ট্রপুঞ্জের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, পৃথিবীতে মোট বর্জ্যের ৯ শতাংশ প্লাস্টিক রিসাইকেলড হয়।
প্লাস্টিক রিসাইকেলড খতিয়ানঃ
বিশ্বে বছরে ২৫৮ মিলিয়ন টন প্লাস্টিক আসে রিসাইক্লিংয়ে
তৈরি হয় ৪৬ মিলিয়ন টন ফিনিশড প্রোডাক্ট
শতাংশের বিচারে পরিমাণ ১৮%
ভারতে ৬০ শতাংশ প্লাস্টিক রিসাইক্লিংয়ে আসে
কলকাতা সংলগ্ন দু’একটি জেলা বাদে রাজ্যের সর্বত্রই করা যায় এই ইউনিট। পাওয়া যাবে সংস্থা স্থাপনের প্রয়োজনীয় পরামর্শ। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের দুটি বিভাগ যেমন সেন্টার ফোর কোয়ালিটি ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম এবং মেকানিকাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ থেকেই মিলবে এ টু জেড পরামর্শ। ছোট জমিতে মাত্র তিন থেকে পাঁচ লক্ষ টাকার পুঁজি দিয়েই তৈরি করতে পারবেন আপনার স্বপ্নের রিসাইকেল ইউনিট।
কারখানার পরিমাপঃ
দরকার পরিমাণ মত ওয়েস্ট প্লাস্টিক রাখার জায়গা। চাই পর্যাপ্ত জলের জোগান। ছোট ইউনিট করতে দরকার সামান্য জায়গা। যেমন ২৫ ফুট লম্বা ও ১৫ ফুট চওড়া জায়গাই এর জন্য যথেষ্ট।
কাঁচামালের ধরনঃ
দৈনন্দিন জীবনে ফেলে দেওয়া জিনিস যেমন দুধের পাউচ, প্যাকেজিং সামগ্রি, পেস্ট কন্টেনার এবং কারখানার ওয়েস্ট।
কোথায় মিলবে কাঁচামালঃ
কলকাতার আশেপাশে ইউনিট হলে খাস কলকাতাতেই মিলবে এর কাঁচামাল। আর দক্ষিণবঙ্গের দূরের জেলাগুলিতে কিংবা উত্তরবঙ্গেও স্থানীয় স্তরে মিলবে কাঁচামাল। ট্যাংরা, বড়বাজার, কাশীপুর, বেলুড়, বেহালা, লিলুয়া, মালদা, শিলিগুড়িতেও পাওয়া যাবে।
মেশিনারিঃ
মেশিনারির মধ্যে লাগে গ্রিন রিসাইক্লিং প্রসেস মেশিন। এই মেশিনের সাহায্যেই পরিত্যক্ত প্লাস্টিক থেকেই তৈরি হয় হাই ডেনসিটি, লো ডেনসিটি, পি পি জাতীয় প্লাস্টিক দানা। মেশিন চলে ৪৪০ ভোল্টেজে। এর ক্ষমতা সাড়ে সাত হর্স পাওয়ার। মেশিনে যেমন দূষণ নিয়ন্ত্রণ হয়, তেমন বিদ্যুতও সাশ্রয় হয়।
মেশিনের দামঃ
ছোট ইউনিটের জন্য সাড়ে তিন থেকে পাঁচ লক্ষ টাকার মেশিনই যথেষ্ট। তবে ৩৫ লক্ষ থেকে ১ কোটি টাকার মেশিনও পাওয়া যায়। অবশ্যই সামর্থ্য অনুযায়ী। মেশিন কিনতে পাবেন বিভিন্ন অনলাইন কোম্পানিতে। ইন্ডিয়া মার্ট, ট্রেড ইন্ডিয়া থেকেও। এছাড়াও অন্যান্য সাইটে যাচাই করে কিনতে পারেন মেশিন।
মেশিন কেনার সহায়তা কোথায় পাবেনঃ
পশ্চিমবঙ্গ সরকারের ক্রীড়া ও যুবকল্যাণ দপ্তরের বিভিন্ন স্বনির্ভর পরিকল্পনায় যদি এই প্রকল্প অনুমোদিত হয়, তাহলে ব্যাঙ্ক ঋণ পাওয়াটা সহজ হয়ে যায়। কিংবা যেকোন রাষ্ট্রায়ত্ত বা বেসরকারি ব্যাঙ্কে এমএসএমই স্কিমে এই প্রোজেক্ট অনুমোদিত হলে ব্যাঙ্কই তখন ফাইনান্স করে মেশিন কিনতে।
লোকবল কত লাগেঃ
ছোট ইউনিট শুরু করতে প্রথমেই একজন দক্ষ অপারেটর ও একজন হেল্পার নিয়ে শুরু করা যায়।
শুরু করার পদ্ধতিঃ
প্রথমেই ইউনিটে এসে জমা হওয়া নোংরা প্লাস্টিকগুলোকে ভালো করে ধুতে হবে। তারপর কাঁচি ও ছুরি দিয়ে কেটে ওয়েস্টমেশিনে দিলেই তা থেকে বেরিয়ে আসে প্রয়োজন অনুযায়ী বিভিন্ন ধরণের প্লাস্টিক দানা।
কি কাজে লাগেঃ
এই দানা থেকে তৈরি হয় প্লাস্টিকের পাইপ, ফার্নিচার, ফিল্ম, কলম ও বিভিন্ন ধরণের শখের জিনিস
কোথায় বিক্রি করবেনঃ
কলকাতার বড়বাজারে এই প্লাস্টিকের দানা কেনার বিভিন্ন ঘর রয়েছে। সেখানেই এই দানা আপনি বিক্রি করতে পারেন। এছাড়াও অনলাইনে বিভিন্ন ফার্নিচার কোম্পানি, পাইপ কোম্পানিতেও সরাসরি যোগাযোগ করে আপনার উৎপাদিত পণ্য বিক্রি করতে পারবেন।
তাই প্লাস্টিক রিসাইক্লিংয়ের এই ইউনিট তৈরি করে অল্প দিনে যেমন আপনি নিজে স্বনির্ভর হতে পারবেন তেমনই অন্যকেও কাজ দিয়ে সামাজিক দায়বদ্ধতাও পালন করতে পারবেন।
ঋতিঙ্কর বসুর রিপোর্ট, বিজনেস প্রাইম নিউজ