Trending
রাশিয়া-ইউক্রেনের যুদ্ধ চলছে এক বছর হয়ে গেল। বর্তমান সময়ে দাঁড়িয়ে কেন ইউক্রেনের বিরুদ্ধে রাশিয়া যুদ্ধ ঘোষণা করল, এই উত্তর সকলেরই জানা। এই নিয়ে ইউরোপীয় প্রশাসন, মার্কিনী প্রশাসন এবং অন্যদিকে রাশিয়ার একক স্ট্যান্ডপয়েন্ট। জিও পলিটিক্স অত্যন্ত সিরিয়াস একটি ইস্যু- আমরা সকলেই জানি। একেকটি দেশ কিভাবে নিজের সুচতুর মুভমেন্টের মাধ্যমে নিজেকে টপ অফ দ্য ওয়ার্ল্ড রাখতে পারে, তার জন্য নিয়ত চলে যুদ্ধ। পলিটিকাল ওয়ার। আজ কার সঙ্গে হাত মেলাব, কাল কার সঙ্গে হাত ধরব। মুশকিল হচ্ছে, এই টানাপোড়েনের মধ্যে পড়ে সাধারণ মানুষ এবং হাজার হাজার ছাত্র ছাত্রী। যারা এক দেশ থেকে অন্য দেশে পড়াশুনো করতে যান, তাঁদের ভবিষ্যৎ কোথায় গিয়ে দাঁড়াতে পারে? সেই কথা কি আর রাষ্ট্রনায়কদের ভাববার বিষয়? না-হলে ইউক্রেনে পড়তে যাওয়া এতো এতো ভারতীয় পড়ুয়ার ভবিষ্যৎ নিয়ে প্রশ্নচিহ্ন তৈরি হয়। তবে আজ, এই সব পলিটিকাল কচকচানির মধ্যে যাব না। বরং বলব, ভারতের পড়ুয়াদের কথা। যারা প্রতি বছর ডাক্তারি পড়বার জন্য পাড়ি দেন ইউক্রেনে। এখন প্রশ্নটা হচ্ছে, ভারতে ডাক্তারি পড়ার সুযোগ তো রয়েছেই। তারপরেও কেন ডাক্তারি পড়ুয়ারা ইউক্রেনে ছোটেন ভবিষ্যৎ সুরক্ষিত করার জন্য? গাফিলতি কি তাহলে ভারত সরকারের? এখানকার প্রতিষ্ঠানগুলোর? আসুন, আজ এই বিষয়েই একটু কাটাছেঁড়া করা যাক।
একটি তথ্য বলছে, ভারতে মেডিক্যাল কলেজের সংখ্যা বিগত কয়েক বছরে বৃদ্ধি পেয়েছে ৬৭% মতন। ২০১৪ সালের পর থেকে ভারতে মেডিক্যাল কলেজ খোলা হয়েছে ২৬১টি মতন। কিন্তু তারপরেও কেন ভারতীয় পড়ুয়াদের বিদেশভ্রমণ করতে হয়? বিদেশে কতজন মেডিক্যাল পড়ুয়া রয়েছেন? এই প্রশ্নটা একবার তুলেছিলেন তৃণমূলের সাংসদ সৌগত রায়। সেই সময় এই প্রশ্নের সঠিক কোন উত্তর দিতে পারে নি স্বাস্থ্যমন্ত্রক। তার অন্যতম কারণ, ভারতে ডাক্তারি পড়ুয়ার সংখ্যা বিদেশের থেকে যেন অনেকটাই কম। পড়ুয়াদের বিদেশ স্পেশ্যালি ডাক্তারি পড়ার জন্য ইউক্রেন যাওয়ার অন্যতম কারণ হল কম প্রতিযোগিতা। ভারতে পড়ুয়ার সংখ্যা বেশি। সেই হিসেবে মেডিক্যাল কলেজের সংখ্যা কম। ফলে প্রতিযোগিতা অনেকটাই বেশি হয়। সেদিক থেকে দেখতে গেলে, ইউক্রেনে মেডিক্যাল কলেজের সংখ্যা রয়েছে যথেষ্ট। এছাড়া আরেকটা বড় কারণ হল, ভারতে এমবিবিএস ডিগ্রি পাবার জন্য যেখানে একজন পড়ুয়ার সার্বিক খরচের অঙ্কটা পৌঁছে যায় প্রায় ১ কোটি টাকায়, সেখানে ইউক্রেনে ছয় বছরের পড়াশোনার খরচ মেরেকেটে ২৫-৩৫ লক্ষ টাকা। এছাড়া ইউক্রেনে পড়াশোনা করতে গেলে ভাষাটা কোন বাধা হয়ে দাঁড়ায় না। কারণ, সেই সকল জায়গায় পড়াশোনা হয় ইংলিশে। যা ভারতীয় পড়ুয়াদের জন্য আলাদা একটা মাইলেজ দেয়।
আর একটা বড় বিষয় হল, ভারতে ডাক্তারি পড়তে গেলে প্রবেশিকা পরীক্ষা অনেকটাই বাধ্যতামূলক। কিন্তু ইউক্রেনে সেসবের কোন ঝামেলা নেই। ভারতে নিট পরীক্ষার পাশাপাশি এমবিবিএস ডিগ্রি পাবার জন্য ভালো রেজাল্ট করাটাও বাধ্যতামূলক। সেখানে দাঁড়িয়ে ইউক্রেনের মত দেশে শুধু পাশ করলেই হবে। তার মানে এটা ভাবার কোন কারণ নেই যে, ইউক্রেনে ডাক্তারি পড়ার মান কম। বরং উল্টো। ইউক্রেনের প্রত্যেকটি মেডিক্যাল কলেজ ওয়ার্ল্ড হেলথ কাউন্সিল, ইউরোপিয়ান কাউন্সিল অফ মেডিসিনের স্বীকৃতি পেয়েছে। ফলে, যে সকল ছাত্রছাত্রীরা ভারতে ডাক্তারি পড়ার সুযোগ সেভাবে পান না প্রতিযোগিতা এবং নম্বর সিস্টেমের দৌরাত্ম্যে, সেখানে ইউক্রেনে তাঁরা সহজেই পড়াশোনা করার সুযোগ পেয়ে যান। সেই দেশে আসন সংখ্যাও ভারতের থেকে অনেকটা বেশি। একইসঙ্গে ভর্তির প্রক্রিয়াও ভারতের মতন এমন জটিল নয়। আর সবথেকে দামি কথা হল, ইউক্রেনের মেডিক্যাল কলেজগুলোতে পড়াশোনা শেষ করার পর, নির্দিষ্ট পড়ুয়াকে স্বীকৃতি দেয় গোটা বিশ্ব। মানে তার কর্মক্ষেত্রে কোন বাধা তৈরি হয়না। এমনকি ইউক্রেন থেকে পড়াশোনা করে আসা পড়ুয়ার চাহিদা রয়েছে খোদ ভারতেই।
ইউক্রেন সরকারের একটি তথ্য থেকে জানা গিয়েছে, সেই দেশে প্রায় ১৮ হাজারের বেশি ভারতীয় পড়ুয়াদের স্বপ্ন তৈরি হবার কথা ছিল। যুদ্ধ চলাকালীন তাঁরা আজ ফিরে এসেছেন দেশে। অবশ্যই, সেক্ষেত্রে ভারতীয় বিদেশমন্ত্রক উল্লেখযোগ্য ছাপ রেখেছে। কিন্তু সেটা বড় কথা নয়। ভারতীয় পড়ুয়াদের যদি বিদেশ শিক্ষার প্রতি এতো ঝোঁক থাকে, তাহলে আমাদের দেশে শিক্ষার মানোন্নয়ন নিয়ে একটা প্রশ্নচিহ্ন তো তৈরিই হয়। প্রত্যেক বাবা-মা চান, তাঁদের সন্তানরা নিজের দেশেই পড়াশুনো করুক। সুতরাং, ভারতে অহেতুক পড়াশোনার চাপ, অত্যধিক প্রতিযোগিতা নাকি শিক্ষার পরিকাঠামোয় অভাব- কোনটা দায়ি থেকে যায় দিনের শেষে?
বিজনেস প্রাইম্ন নিউজ।
জীবন হোক অর্থবহ