Daily
বাংলার জন্য দিনটা তেমন ভালো ছিল না। স্পেশ্যালি বাংলার অর্থনীতির জন্য। টাটার মত বিজনেস এমপায়ার যখন রাজ্য থেকে কার্যত ব্যবসা গোটানোর সিদ্ধান্ত নিচ্ছে, সেটা যে আর যাই হোক, আগামী কয়েক প্রজন্মের জন্য যে বেশ দুশ্চিন্তার হয়ে দাঁড়াচ্ছে, সেটা বলার অপেক্ষা রাখে না। ফলে বঙ্গ রাজনীতির ইতিহাসে টাটার ন্যানো প্রোজেক্ট বন্ধ হয়ে যাওয়াটা নিঃসন্দেহে একটা কালো দিন হিসেবেই বিবেচিত হবে। কিন্তু আবারও বঙ্গ রাজনীতির অধ্যায়ে উঠে এলো মমতা-বাম দ্বৈরথের সুর। উঠে এলো সিঙ্গুরে টাটার ন্যানো প্রকল্প।
চলুন, একবার ইতিহাসটা একটু ঝালিয়ে নেওয়া যাক। ২০০৬ সালে মে’মাসে রতন টাটা সিঙ্গুরে ন্যানো তৈরির প্রকল্পের কথা প্রথম সর্বসমক্ষে আনেন। ৯৯৭ একর কৃষিজমি নেওয়াও হয়েছিল। এই জমি অধিগ্রহণের পথটা খুব ভালো চোখে দেখেননি তৎকালীন বিরোধী দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। শুরু হয় বিক্ষোভ। বিক্ষোভের আঁচ ছড়িয়ে পড়তেও খুব একটা সময় লাগেনি। এরপর চলতে থাকে শুধুই অশান্তি। তৎকালীন বাম সরকার বিষয়টা নিয়ে বিরোধী নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে আলোচনাতেও বসতে চায়। কিন্তু চিঁড়ে ভেজে না। এই আন্দোলনে মমতার পাশে দাঁড়ান একাধিক বুদ্ধিজীবী। যার মধ্যে ছিলেন, মেধা পাটকর, অরুন্ধতী রায়, মহাশ্বেতা দেবী, অপর্ণা সেনের মতন মানুষজন। পরিস্থিতি এমনই জায়গায় পৌঁছয় যে, রতন টাটা তৎকালীন বিরোধী নেত্রীর বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগড়ে দেন। এবং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অবস্থানকে ট্রিগার চালানোর সঙ্গে তুলনা টানেন। সেই সময় তুমুল আলোচিত হয় বাম সরকারের অবস্থান, জমি অধিগ্রহণ নীতি নিয়ে। অবশেষে টাটার প্রোজেক্ট কার্যত বন্ধ হয়ে যায়। কারখানা নিয়ে যাওয়া হয় গুজরাতে। সেই সময় গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন আজকের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই আন্দোলন সফল হয়। প্রচুর মানুষের সমর্থন পাশে পাওয়ার জন্য সরকার বদল হতেও সময় বেশি লাগে নি। বরং সেটাই অনুঘটকের কাজ করেছে। সরকারে আসার পর মুখ্যমন্ত্রীর চেয়ারে বসে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, সবাইকে জমি ফেরত দেওয়া হবে। সেই কাজও হয়েছে কিছুটা। কিন্তু তাতে কি সেই জমিতে কৃষকরা আর চাষ করতে পেরেছেন? বাংলার অর্থনীতির ক্ষতি হয়েছে অনেকটাই। এদিকে টাটা মোটরস সেই সময় রাজ্যে প্রকল্প বাতিলের জন্য ১৪০০ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ চেয়েছিল। কারণ গুজরাতের সানন্দে ন্যানো গাড়ির কারখানা তৈরির জন্য প্রাথমিক পর্যায়ে টাটার খরচের অঙ্কটা পৌঁছে যাচ্ছিল প্রায় ২,২৪৬ কোটি টাকায়। সবমিলিয়ে টাটার মতন সংস্থাকেও খরচের বিষয়টা মাথায় রাখতে হয়েছিল।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে, বঙ্গ রাজনীতির জন্য না-হয় টাটার সিঙ্গুর ছাড়ার প্রকল্প চিরস্থায়ী ক্ষত হিসেবে থেকেই যাবে। তার চেয়েও বড় বিষয় হল, এর ফলে বাংলার অর্থনীতি এবং সর্বোপরি বাংলার কয়েক প্রজন্ম টাটার সঙ্গে কাজ করা থেকে বঞ্চিত থাকলেন। হয়ত এই কারখানা বাংলায় হলে, বাংলার তরুণ প্রজন্মকে টাটার সংস্থায় কাজ করার জন্য ভিন রাজ্যে পাড়ি দিতে হত না। এখন সবই অতীত। সম্প্রতি, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় টাটার সিঙ্গুর ছাড়া নিয়ে বামেদের ঘাড়েই চাপিয়েছেন দোষ। তাই নিয়ে আবারও রাজ্য রাজনীতি তোলপাড় হয়ে গেল। কিন্তু আখেরে লাভ কার হল? বাংলার? বাংলার অর্থনীতির? বাংলার তরুণ প্রজন্মের? উত্তর আপনারা দিন। প্রশ্ন রাখলাম আমাদের থেকে। দেখতে থাকুন বিজনেস প্রাইম নিউজ।
বিজনেস প্রাইম নিউজ
জীবন হোক অর্থবহ