Daily
ঠিক যেন বাস্তবের মির্জাপুর। গুলি ছুটছে মুহুর্মুহু। একদিকে সাতজন বেপরোয়া রিভলভরধারী। অন্যদিকে আগ্নেয়াস্ত্র হাতে একা একজন। লড়াই চলছে রাজপথে। একেবারে ভরদুপুরে। রবিবারের বারবেলায় রানিগঞ্জের রাজপথে ঘটে যাওয়া এই হাড়হিম করা ঘটনার কথা আপনারা অনেকেই জানেন।
আসানসোলের শিল্পতালুকে ফের দুষ্কৃতিরাজ। গমগম করছে রানিগঞ্জের ভরা বাজার। সোনার দোকানে লুঠপাট চালাচ্ছে সশস্ত্র সাত ডাকাতের দল। ঘটনাস্থল থেকে ঢিলছোঁড়া দূরত্বে ব্যক্তিগত কিছু কাজে এসেছিলেন জামুরিয়া শ্রীপুর থানার ওসি, সাব-ইন্সপেক্টর মেঘনাদ মণ্ডল। এসেছিলেন সিভিল ড্রেসে। সঙ্গে ছিল তাঁর সার্ভিস রিভলভার। পরিস্থিতি বেসামাল বুঝে ঝাঁপিয়ে পড়েন মেঘনাদ। মাত্র কয়েক ইঞ্চির এক লাইটপোস্টের আড়ালে দাঁড়িয়ে লড়াই শুরু করেন মেঘনাদ। দেখুন সেই ভিডিও।
ভিডিওঃ
সাত জার্মান, জগাই একা। তবুও জগাই লড়ে। সুকুমার রায়ের সেই বিখ্যাত লাইন। সাত জন ডাকাতের দল গুলি চালাচ্ছে। এদিকে কয়েক ইঞ্চি চওড়া লাইট পোস্টকে ঢাল করে লড়াই করছেন মেঘনাদ। প্রায় ৩ কোটি টাকার গয়না লুঠ করার ফন্দী এঁটেছিল ডাকাতের দল। কিন্তু দাবাং পুলিশ অফিসারের উপস্তিতি পুরো প্ল্যান ভেস্তে দিল তাদের। ডাকাত দলের একজনের গায়ে মেঘনাদের গুলি লাগতেই তারা বুঝতে পারে। পরিস্থিতি সুবিধের নয় বুঝে পালানোর চেষ্টা করে তারা। কিন্তু পালাতে পারলে তো? প্রাণের ঝুঁকিকে থোড়াই কেয়ার করে ডাকাতের বাইকের পিছনে ছুটতে শুরু করেন সেই ওয়ান ম্যান আর্মি। বিপরীত তরফে ছুটে আসছে গুলি। ঠিক যেমনটা সিনেমাতে হয়। কিন্তু হাইওয়েতে উঠতেই বেপাত্তা হয়ে যায় ডাকাতের বাইক বাহিনী। নিজে না পারলেও ততক্ষনে আশেপাশের সমস্ত নাকা পস্তে খবর পাঠিয়ে দেন তিনি। খবর চলে যায় ঝাড়খণ্ডের পুলিশের কাছেও। তাই বেশিক্ষন তাদের কারসাজি কাজ করেনি। পুলিশের জালে ধরা পরে ঐ সাত ডাকাতের দল। দ্রুত উদ্ধার করা হয় সেই ৩ কোটির গয়না। সঙ্গে ডাকাতদের কাছে থাকা যাবতীয় আগ্নেয়াস্ত্র। আর ওদিকে মেঘনাদের কী খবর?
সে নির্বিকার। যেন কিছুই হয়নি। ফিরে গিয়েছেন কাজে। ঘটনা সংক্ষেপে বলি তাহলে। উভয় পক্ষে মোট ২০ রাউন্ড গুলি বিনিময় হয়েছে। খালি হয়ে গিয়েছে পুলিশ অফিসারের সার্ভিস রিভলভার। আশেপাশের গাড়ি বাইক ইত্যাদি ভেদ করে চলেছে গুলি। স্রেফ একটা বিদ্যুতের খুঁটিকে মেঘ বানিয়ে নির্ভয়ে যুদ্ধ চালিয়েছেন মেঘনাদ। নিজের জীবনের বিন্দুমাত্র চিন্তা না করেই। রোমহর্ষক সেই কাহিনী পরিচিতদের অনেকেই শুনেছেন। কিন্তু তাঁর সেই এক উত্তর। একগাল হেসে বলছেন, ‘আমি আআর ডিউটি করেছি’।
জানা গিয়েছে, ঐ একই কায়দায় এর আগে রানাঘাটের এক অভিজাত সোনার দোকানে লুঠপাট চালায় ঐ ডাকাতের দল। রানিগঞ্জেও সেই একই ছক। জাতীয় সড়কের উপরে থাকা সেই অভিজাত সোনার গয়নার দোকান থেকে প্রায় ৩ কোটি টাকার গয়না নিয়ে চম্পট দেয় তারা। যদিও পুলিশি তৎপরতায় তা হয়ে ওঠা সম্ভব হয়নি। একইসঙ্গে বিপুল ব্যবসায়িক ক্ষতির হাত থেকে বাঁচে ঐ দোকান। উদ্ধার করা হয় সোনার গয়না।
দেখতে থাকুন বিজনেস প্রাইম নিউজ। জীবন হোক অর্থবহ।