Trending
দিকে দিকে রাম নাম, লাফিয়ে বাড়ছে জমির দাম
লাখে নয়, রামরাজ্যে জমি বিক্রি হচ্ছে কোটিতে
২ লাখের জমি এখন বিক্রি হচ্ছে এক কোটি টাকায়
সোজা কথায়, রামমন্দিরের হাত ধরেই লক্ষ্মীলাভ হচ্ছে রামরাজ্যে
আফসোস! পাঁচ বছর আগেও যদি অযোধ্যায় এক কাঠা জমি কিনে রাখা যেত তাহলে হয়তো কোটিপতি হয়ে যাওয়া যেত আজ। ভগবান রামের কৃপায় জেগে উঠছে ঘুমন্ত নগরী অযোধ্যা। সেখানকার ধুলোর দামও সোনার মতই আকাশছোঁয়া। তৈরি হচ্ছে লাক্সারি হোটেল, আবাসন। আসছে বিপুল অঙ্কের বিনিয়োগ। প্রতিমুহূর্তে জমির হাতবদল হচ্ছে। কোটি কোটি টাকার রাজস্ব আদায় করে ভাঁড়ার ভরাচ্ছেন যোগী সরকার। হিসেব বলছে আগামী ১০ বছরে হয়তো অযোধ্যার অর্থনীতির অঙ্কটা এক লক্ষ কোটি ছাড়িয়ে যাবে।
কথা মতই কাজ হচ্ছে। অযোধ্যায় রাম মন্দির তৈরির বিষয়ে সুপ্রিম কোর্ট রায় দেওয়ার চার বছরের মাথাতেই চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছেছে মন্দির তৈরির কাজ। তড়তড় করে এগিয়ে চলেছে রামমন্দির তৈরির কাজ। সবকিছু ঠিক থাকলে নতুন বছরেই রামলালা বিরাজমানের মূর্তি বসবে অযোধ্যায়। ২২ জানুয়ারি উদ্বোধন রাম মন্দির উদ্বোধন করা হবে। আর তারপরই পর্যটক আর তীর্থযাত্রীদের ভিড় উপচে পড়বে। স্বাভাবিকভাবেই থাকার জায়গার চাহিদা তৈরি হবে। একবার সেই ভিড় জমতে শুরু করলেই জমির দাম আকাশছোঁয়া হবে। সেটাই স্বাভাবিক। হচ্ছেও তেমনটাই।
রাজনীতির প্রাণকেন্দ্র অযোধ্যা এখন প্রাসাদ নগরী। জমি নিয়ে শুরু হয়েছে নিলাম। ৫০ লাখেও মিলছে না হাফ কাঠা জমি। অথচ শীর্ষ আদালত রায় দেওয়ার আগে উন্নয়নের আলো থেকে বেশখানিকটা দুরেই ছিল অযোধ্যা। পাঁচ বছর আগেও সেখানে কাঠা প্রতি জমির দাম ছিল বড়োজোর ২ লক্ষ টাকা। আর আজ সেই জমির দাম শুনবেন? এক লাফে এক কোটি। তাতেও জমি মিলছে না। অনেক প্রমোটার এখন প্রতি বর্গফুট ২৫ হাজার টাকা দিতেও রাজি হয়ে যাচ্ছেন। ভাবা যায়! একটা সময় যে অযোধ্যায় জমি কেনা নিয়ে কারও কোন মাথাব্যথাই ছিল, আজ সেখানে পিলপিল করে প্রমোটাররা আসছেন। একটু মাটি কিনবেন বলে। অবিশ্বাস্য! একইসঙ্গে হুহু করে বাড়ছে রাজস্ব আদায়ের পরিমাণও। সবই ঐ টাকা মাটি মাটি টাকার হিসেব।
বিগত পাঁচ বছরের হিসেব দেখলে বোঝা যাবে, ঠিক কী পরিমাণে জমির দাম বেড়েছে অযোধ্যায়। ২০১৮ সালে জমি বিক্রির ডিড হয়েছে ৬ হাজার টাকায়। ২০২০ সালে সুপ্রিম কোর্টের রায় শোনার পর সেই অঙ্কটা বেড়ে পৌঁছয় ১৫ হাজারে। এখন ২০২৩ সালে দাঁড়িয়ে সংখ্যাটা জানেন কত? ২৯ হাজার ৩২৫ টাকা।
ভোল বদলাচ্ছে অযোধ্যার অর্থনীতি। প্রভু রামের কৃপায় শুধু জমি মালিকদেরই লক্ষ্মীলাভ হয়নি। সেখানকার হোটেল মালিকদেরও এখন রামরাজত্ব। পাঁচ বছর আগেও যে রুমগুলো ১ থেকে ১০ হাজার টাকার মধ্যে বুকিং করা যেত এখন সেগুলোর দাম ধরাছোঁয়ার বাইরে। সাধারণ হোটেলগুলিতে রুম বুক করতে হচ্ছে প্রায় ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকা দিয়ে। থ্রি স্টার হোটেলে রুম ভাড়া ৮০ থেকে ৯০ হাজার টাকার আশেপাশে। আর ফাইভ স্টারে? ২ লক্ষ টাকা পার নাইট। ২১ থেকে ২৩ জানুয়ারি টার্গেট রেখে কেউ আর সাত-পাঁচ না ভেবেই রুম বুকিং শুরু করে দিয়েছে। আর সুযোগের সদ্ব্যবহার করছেন কিছু অসাধু হোটেল ব্যবসায়ী। ইচ্ছাকৃত হোটেল বুকিং বন্ধ রেখেছে তারা। স্বাভাবিকভাবেই ঐ কটা দিন ধর্মশালায় মাথা গোঁজার ঠাই খুজছেন তীর্থযাত্রীরা। কিন্তু সেখানেও ঠাই নাই অবস্থা।
অযোধ্যার হোটেল মালিকদের সংগঠন জানিয়েছে, সেখানে মোট হোটেলের সংখ্যা ১৩৮। যেখানে ঘর আছে ৪ হাজারের মতো। এছাড়াও বেশ কিছু গেস্টহাউস এবং ধর্মশালা রয়েছে। সমীক্ষা বলছে, রাম মন্দির উদ্বোধন উপলক্ষে ঐসময় ৫ থেকে ১০ লক্ষ তীর্থযাত্রী আসবেন অযোধ্যায়। যার জন্য কমপক্ষে ৮০ হাজার ঘরের প্রয়োজন। কাজেই নতুন হোটেল বা গেস্ট হাউস তৈরি করতে হবে, অন্য কোন উপায়ও নেই। দেশের বেশ কিছু নামী হোটেল সংস্থা সেখানে ইতিমধ্যেই হোটেল তৈরির জন্য কোটি কোটি টাকা বিনিয়োগ করে ফেলেছে। মউকা বুঝে জমি প্রতি বিপুল লাভ করছেন জমি ব্যবসায়ীরা।
হোটেলিয়ার্স অ্যাসোসিয়েশন অফ ইন্ডিয়া জানাচ্ছে, অযোধ্যা আগামী ৫ বছরে ৭ হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগ হবে হোটেল ইন্ডাস্ট্রিতে। কেন্দ্রীয় পর্যটন মন্ত্রকের বক্তব্য, মন্দির উদ্বোধনের পর আগামী ৫ বছরে কম করে ২৫ লক্ষ পর্যটক আসবেন রামরাজ্যে। রাম মন্দিরকে কেন্দ্র করে ৫০ হাজার কোটি টাকার ব্যবসা হবে। ১০ বছর পর পর্যটন খাতে হয়তো ১ লক্ষ কোটি টাকারও বেশি আয় করতে পারে যোগী সরকার। সব মিলিয়ে রামরাজ্যের অর্থনীতি যে আগামী দিনে বেশ লক্ষ্মীমন্ত হবে, তা আশা করাই যায়। দেখতে থাকুন বিজনেস প্রাইম নিউজ। জীবন হোক অর্থবহ।