Trending
দুর্নীতি, দুর্নীতি, দুর্নীতি। আর্থিক দুর্নীতির আশ্রয় না নিলে কাতার হয়ত বিশ্বকাপের আয়োজন করতেই পারত না। সেই অভিযোগ তুলেছিল আমেরিকা, ইংল্যান্ড বা জার্মানির মতন দেশ। কিন্তু সত্যিই কি দুর্নীতির আশ্রয় নিয়েছে কাতার? আসুন, কাতার কেলেঙ্কারি নিয়ে আজ আমরা আলোচনা করব আজকের প্রতিবেদনে।
চলতি বিশ্বকাপের আয়োজন করেছে কাতার। ছোট্ট একটি দেশ হলেও, কাতার আর্থিকভাবে বিশ্বের অন্যতম শক্তিশালী একটি দেশ। এবং একমাত্র মুসলিম গরিষ্ঠ দেশ, যারা বিশ্বকাপের আয়োজন করল। তার জন্য ভালোরকম খেসারত দিতে হয়েছে কাতারকে। ফিফার সঙ্গে চলা দীর্ঘমেয়াদি আলোচনা ছাড়াও আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া বা জার্মানিকে হারিয়ে কাতারে আয়োজিত হচ্ছে ফিফা বিশ্বকাপ। ফুটবল বিশ্বকাপ সাধারণত আয়োজন করা হয় জুন-জুলাই মাসে। কিন্তু চলতি বিশ্বকাপের আয়োজন হয়েছে নভেম্বরে। চলবে ডিসেম্বর পর্যন্ত। তার একটাই কারণঃ কাতারের গরম। জুন-জুলাই মাসে কাতারে তাপমাত্রা পৌঁছে যায় প্রায় ৫০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের কাছে। তাই শীতের মরশুমে বিশ্বকাপের আয়োজন করার সিদ্ধান্ত নেয় বিশ্ব ফুটবল নিয়ন্ত্রক সংস্থা ফিফা। অবশ্য, কাতারে শীতের সময় যে গরম থাকে তা ইউরোপের দেশগুলোকে ভালো রকম গোল দিতে পারছে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, কাতার কিভাবে একটি ছোট্ট এবং মুসলিম শাসিত দেশ হয়ে ফিফার আস্থা অর্জন করল? অনেকেই আবার বলছেন যে, নিজের দেশে বিশ্বকাপ আয়োজন করার জন্য কিছু আর্থিক দুর্নীতিও নাকি করতে হয়েছে কাতারকে। আসুন, বিষয়টা আরেকটু খোলসা করে বলা যাক।
কাতার এই চলতি বিশ্বকাপ আয়োজন করতে শুধুমাত্র খরচ করেছে ২২০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। স্টেডিয়াম থেকে শুরু করে আধুনিক রাস্তা, হোটেল নির্মাণ- কোন কিছুতেই নিজেদের আটকে রাখে নি। খেয়াল রাখে নি সীমাবদ্ধতার কথা। তাই যথেচ্ছে টাকা খরচ করতেও পিছপা হয়নি মুসলিম শাসিত এই দেশটি। তবে অভিযোগ রয়েছে নাকি যে কাতারে বিশ্বকাপ আয়োজন করার জন্য মিলিয়ন মিলিয়ন ডলার ঘুষ দেওয়া হয় ফিফার উচ্চপদস্থ আধিকারিকদের। মনে করা হয় আর্থিক কেলেঙ্কারিতে জর্জরিত থাকলেও স্রেফ টাকার জোরেই কাতার হয়েছে ফুটবল বিশ্বকাপের আয়োজক দেশ। প্রথমেই বলি, কোন দেশ ফুটবল বিশ্বকাপ আয়োজন করবে সেটা নির্ধারণ করে ফিফা। তার জন্য আট থেকে দশ বছর আগে থেকেই ফিফায় নির্বাচনের মাধ্যমে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় কোন দেশ আয়োজক হিসেবে কাজ করবে। প্রায় ১২ বছর আগে অর্থাৎ ২০১০ সালে কাতারকে বিশ্বকাপ ফুটবলের আয়োজক দেশ হিসেবে নির্বাচন করে ফিফা। এরপর বিরোধিতায় নামে আমেরিকা, ব্রিটেন, জার্মানির মত দেশগুলি। এমনকি দুর্নীতির অভিযোগ তোলা হয় ফিফার বিরুদ্ধে। বিষয়টি প্রকাশ্যে এলে আর্থিক দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে ফিফার তৎকালীন সাবেক প্রেসিডেন্ট সেপ ব্লাটারের বিরুদ্ধে। তারপর ফিফার তরফ থেকে তাঁকে আজীবন নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়। কারণ মনে করা হয়, কাতারের মহম্মদ বিন হাম্মান এশিয়ার ফুটবল কাউন্সিলের প্রেসিডেন্ট ছিলেন ২০০২ থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত। এছাড়াও ২০১১ সাল পর্যন্ত তিনি ছিলেন ফিফার সদস্য। কিন্তু দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে তাঁর বিরুদ্ধে। দেওয়া হয় আজীবন নিষেধাজ্ঞার ফরমান। মনে করা হচ্ছে, সেপ ব্লাটারের ফিফা প্রেসিডেন্ট হওয়ার পেছনে কাজ করেছে এই সমীকরণ।
এছাড়াও জানা গিয়েছে, কাতার নিজের দেশে ফিফা আয়োজন করানোর জন্য ইউরোপের কিছু দেশকে বড় রকম প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। তার মধ্যে একটি যেমন ফ্রান্স, তেমনি অন্যটি হল জার্মানি। ফ্রান্সের তৈরি করা বিমান কেনার জন্য কাতার প্রতিশ্রুতি দেয়। একইসঙ্গে বার্সেলোনা ক্লাবের পিছনে মিলিয়ন ডলার খরচ করে কাতার। একইভাবে বিশ্বকাপ আয়োজনের জন্য যাবতীয় স্টেডিয়াম তৈরির বরাত দেওয়া হবে জার্মানির প্রতিষ্ঠানগুলি। এছাড়াও ইউরোপের বিভিন্ন টুর্নামেন্টের সম্প্রচার সত্ত্ব কিনে নেয় আল জাজিরা। সেটাও কাতারকে অনেকটাই এগিয়ে রাখতে সাহায্য করে। সত্যি বলতে, একটি বিশ্বকাপ আয়োজন করার জন্য কাতার যেভাবে জলের মতন টাকা খরচ করেছে, তা অন্যান্য দেশের পক্ষে এই বিশ্বমন্দার বাজারে খরচ করাটা প্রায় অসম্ভব ছিল। অনেকেই বলছেন, কাতার যেভাবে লবি করে নিজের দেশে বিশ্বকাপের আয়োজন করল, সেটা আমেরিকা, ব্রিটেন বা জার্মানির মত দেশগুলি হয়ত কল্পনাও করতে পারেনি। হ্যাঁ, এটা সত্যি যে, একটি দেশ বিশ্বকাপ ফুটবল আয়োজন করলে সেটা সংশ্লিষ্ট দেশকে বিশ্বমানচিত্রে রাজনৈতিক, আর্থিক এবং কূটনৈতিক দিক থেকে অনেকটাই শক্তিশালী করবে। কাতার সরকার মনে করছে, বিশ্বকাপের আয়োজন করে কাতার সুদূরপ্রসারী ভাবনাচিন্তা করেছে। যার মধ্যে অন্যতম পর্যটন শিল্প।
বিজনেস প্রাইম নিউজ
জীবন হোক অর্থবহ