Story
ভাত-ডালে বাঙালির সম্পর্কে অনেকটাই রয়েছে নাড়ির টান। নাড়ির টান আছে বলেই আপামর বাঙালির প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় জুড়ে রয়েছে কোন না কোন ডাল।
অর্থনীতির পরিভাষায় বাঙালি আর ডালের সম্পর্কটা অনেকটাই গিফেন গুডসের মত। তাই দাম যতই বাড়ুক না কেন বাঙালির পাত থেকে যেমন উধাও হয় না ডাল, তেমনি দাম কমলেও যে বিপুল চাহিদা বাড়ে এমনও নয়।
খাদ্য গুণে ভরপুর সেই ডাল শস্যে রয়েছে বাংলার ঘাটতি। এখনো ডাল শস্য উৎপাদনে স্বনির্ভর হতে পারেনি বাংলা। ফি বছর অন্যান্য রাজ্য থেকে ডালের আমদানির পরিমাণ তাই বলে দেয় এই রাজ্যে ডালের চাহিদা কত।
সেই ডাল শস্য উৎপাদনে এবার বিশেষ পদক্ষেপ নিল পুরুলিয়ার কল্যাণ কৃষিবিজ্ঞান কেন্দ্রের বিজ্ঞানীরা। লক্ষ্য একটাই। আমদানি কমিয়ে ডাল শস্য উৎপাদনে বাংলাকে স্বনির্ভর করা। সেই স্বনির্ভরতার লক্ষ্যে জেলার কৃষিবিজ্ঞান কেন্দ্রের বিজ্ঞানীরা প্রশিক্ষণ দিয়ে কাজে লাগালেন পুরুলিয়া ২ নং ব্লকের জামবাদ গ্রামের মা সারদা মহিলা কল্যাণ সমিতি স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মহিলাদের।
পুরুলিয়ায় বছরের পর বছর ধরে পড়ে রয়েছে বিঘের পর বিঘে উঁচু পতিত জমি। জলের অভাব থাকায় এই জমিতে আমন ধান চাষ করাও সম্ভব নয়। কিন্তু কৃষি বিজ্ঞানীরা বলছেন এই শুকনো পতিত জমিই খারিফ মরশুমে হয়ে উঠতে পারে বিড়ি, কলাই, মুগের মত ডাল শস্য চাষের জন্য আদর্শ। প্রায় জলসেচ ছাড়াই শুধু বর্ষার জলে ডাল শস্য চাষ ব্যাপক আকার নিতে পারে। যা লাভবান করবে কৃষকদের।
আর এই গোটা বিষয়টি খুব সহজে বিজনেস প্রাইম নিউজের ক্যামেরায় তুলে ধরলেন পুরুলিয়া কল্যাণ কৃষি বিজ্ঞান কেন্দ্রের বিষয়বস্তু বিশেষজ্ঞ অনির্বাণ চক্রবর্তী।
পুরুলিয়ার কৃষি বিজ্ঞানীদের লক্ষ্য স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মহিলাদের কৃষিকাজে আগ্রহী করে তোলা। তাই উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহারের ট্রেনিং দিয়ে তাঁদের ডাল শস্য চাষে আরও বেশি উৎসাহী করে তোলা হচ্ছে।
ডাল শস্য চাষ না করার অন্যতম কারণ লাভের অঙ্ক কমে যাওয়া। দীর্ঘদিন ধরে এক জাতের বীজ ব্যবহার, বীজ শোধন না করা, জমিতে আগাছা সমস্যা, রোগপোকার আক্রমণের জন্য এমনিতে ফলন কম হয়। ফলে উৎসাহ হারিয়ে ফেলেন কৃষকরা। কিন্তু উন্নত প্রযুক্তি সঠিক উপায়ে ব্যবহার করলে লাভবান হবেন তাঁরাই।
আর লাভের জন্য প্রয়োজন সঠিক পদ্ধতিতে ডালশস্য চাষ। কিন্তু চাষ করলে আগাছা জন্মানোর লক্ষণ দেখা যায়। যা আটকানো সম্ভব খুব সহজে।
প্রান্তিক কৃষকদের পাশাপাশি আজ স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মহিলারা ডাল শস্য চাষে যথেষ্ট উৎসাহ দেখিয়েছেন। তাঁদের মধ্যে একজন বন্দনা মাহাতো।
জামবাদ গ্রামে স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মহিলারা যেমন ২৫ বিঘা জমিতে ডাল শস্য চাষ করছেন, তেমনই গোটা পুরুলিয়া জেলাতে মোট ৭৫ বিঘা জমিতে এই ডালশস্য চাষের লক্ষ্যমাত্রা নিয়েছে পুরুলিয়ার কল্যাণ কৃষি বিজ্ঞান কেন্দ্র। যদি সঠিক উপায়ে চাষ করা যায় তবে ফলন বাড়তে পারে প্রতি হেক্টর জমিতে দুই থেকে আড়াই গুণ। আর যত বাড়বে ফলন ততই লাভবান হবেন কৃষকরা। একইসঙ্গে মূল্যবৃদ্ধির দাপট থেকে রেহাই পাবেন মধ্যবিত্তরাও।
সন্দীপ সরকার
পুরুলিয়া