Story
লঙ্কায় লঙ্কাকাণ্ডের কথা অনেকেরই পরিচিত। কিন্তু লালমাটির দেশ পুরুলিয়ায় তালকাণ্ডের কথা কেউ শুনেছেন? না দেখেছেন? পুরুলিয়া জুড়ে এখন শুরু হয়েছে তালকাণ্ড। সেই তালকাণ্ডের এক্সক্লুজিভ ছবি দেখুন বিজনেস প্রাইম নিউজে।
জেলার বড়াবাজার ব্লক সহ ভাঙাবাঁধ ও রাউতারা গ্রামের মত অসংখ্য গ্রামে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে সারি সারি তালগাছ। আর তালগাছ সম্পর্কে এই কথা খুবই পরিচিত। এক পুরুষে তাল লাগায়, চোদ্দ পুরুষ পরে ফল পায়।
তাল থেকে যে এত কিছু হতে পারে, ধারণাই ছিল না পুরুলিয়ার প্রত্যন্ত এই গ্রামের বাসিন্দাদের। তাই জেলাতে যখন তিনি জেলার গ্রামোন্নয়ন বিভাগের ডেপুটি প্রোজেক্ট ডিরেক্টর ছিলেন, তখন হঠাৎই গ্রাম পরিদর্শনে এসে শয়ে শয়ে তালগাছ দেখে সুশান্তবাবুর মাথায় আসে তাল কর্মযজ্ঞের কথা। তিনি নিজে না বললেও বলছেন স্বনির্ভর গোষ্ঠীর সদস্যা সঙ্গীতা কোলে।
বর্তমানে কলকাতার বংহাটের হাত ধরে রাজ্যের গণ্ডি পেরিয়ে ভারতের বিভিন্ন জায়গায় তো বটেই, এমনকি সুদূর আমেরিকা আর লন্ডনেও পৌঁছে যাবে পুরুলিয়ার ভাঙাবাঁধের তালের জ্যাম, মারি সহ একাধিক বাই-প্রোডাক্ট। রাউতারা আর ভাঙাবাঁধে স্বনির্ভর দলের ৫০ জন মহিলাকে নিয়ে গড়ে উঠেছে তালশিল্প সমবায় সমিতি। এই সমিতি শুধু গ্রামীণ মহিলাদের যে ক্ষমতায়ন করছে তাই নয়, গ্রামীণ মহিলাদের শিল্পকলাকে বিশেষত খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ শিল্পে পুরুলিয়ার কথাকে পৌঁছে দিচ্ছে বিশ্বের দরবারে।
গ্রামীণ মহিলারা বাড়ির কাজ শেষ করে দুপুরের দিকে সমিতিতে উপস্থিত হয়ে তৈরি করেন তালের বিভিন্ন সামগ্রী। বাঙালির বারো মাসের তেরো পার্বণের তালের জোগান ঠিক রাখতে বদ্ধপরিকর পুরুলিয়ার এই সমবায় সমিতি। তাই কেউ তাল ছাড়াচ্ছেন, কেউ তাল সংগ্রহ করছেন। কেউবা আবার তাল ঘষে তালের পাল্প বার করার কাজে ব্যস্ত রয়েছেন। একেবারে বিধি মেনে মাথায় ক্যাপ, অ্যাপ্রন পরে রীতিমত কর্মযজ্ঞ চলছে সমবায় সমিতির অফিসে।
পড়ে থাকা তালগাছকে কাজে লাগিয়ে যে এতকিছু করা যায় তা বিশ্বাসই করতে পারেননি এখানকার মানুষরা। কিন্তু মাত্র ১৫ দিনের প্রশিক্ষণ ও যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের কারিগরি সহযোগিতায় আর বংহাটের মত সংস্থার মার্কেটিংয়ে আত্মবিশ্বাসটাই বদলে গিয়েছে এখানকার মহিলাদের। সেই আত্মবিশ্বাসের ছোঁয়াই ধরা পড়ল সমিতির সম্পাদিকা মনামী অধিকারীর গলায়।
তাল থেকে যে শুধু তালের বড়া আর তালক্ষীরই তৈরি হবে তা নয়। তৈরি হবে তালের কেক, তালের জ্যাম, জেলি সহ আরও অনেক ধরণের ভোগ্যপণ্য। তাই তালগাছ সংরক্ষণে এবং নতুন তালের চারা লাগাতেও উদ্যোগী হল তালশিল্প সমবায় সমিতি।
শিল্পসমিতিতে কিভাবে কাজটা হয় তার ব্যাখ্যা দিলেন ইউনিট ইনচার্জ জবারানী মাহাতো। বেশ কিছুদিন প্রশিক্ষনের পর সুশান্তবাবু নিয়মিত এই সমিতিতে মিটিং করে উৎপাদনের নানান দিকের কথা যখন তুলে ধরলেন তখনই আত্মবিশ্বাস ফিরে পেলেন জবারানির মত অনেক মহিলারা। শুরু হল উৎপাদন।
তবে পুরুলিয়ার তালের তৈরি ভোগ্যপণ্য যে বিশ্বের দরবারে খুব শিগগিরই পৌঁছে যাবে সেই বিষয়ে একশো ভাগ নিশ্চিত সংস্থার সম্পাদিকা।
একদিকে কর্মসংস্থান, অন্যদিকে বিশ্বের দরবারে ছৌ এর পাশাপাশি তালশিল্প সমবায় সমিতির হাত ধরে বিরাট পরিবর্তন আসছে এখানকার গ্রামগুলোতে। সেই পরিবর্তনে সাড়া দেওয়ার আবেদন জানালেন সুশান্তবাবু।
একেকটা তালগাছ থেকে কমপক্ষে বছরে ২৫-৩০ হাজার টাকা আয় হতে পারে। গড়ে উঠতে পারে জেলা জুড়ে খাদ্য প্রক্রিয়াকরণের নতুন দিগন্ত তালশিল্পতালুক। কর্মসংস্থান আর বিপননের এই বিপুল বাজারে জায়গা করে নেবে বিশ্বের দরবারে পুরুলিয়ার সমাদৃত তাল।
সন্দীপ সরকার
পুরুলিয়া