Daily

পুরুলিয়া বলতে চোখের সামনে ভেসে ওঠে রুখাশুখা জমির ছবিটাই। যেখানে নিত্যদিন লেগে থাকে জলের সমস্যা। প্রান্তিক জেলা হওয়ার কারণে পুরুলিয়ার মাটি অনেকটাই ভূমিক্ষয়প্রবণ। তাই পুরুলিয়ার মত জেলাতে কৃষিকাজ হওয়াটা বেশ কঠিন। কিন্তু এই চিরাচরিত গতে বাঁধা ধারণাটা একেবারে বদলে যেতে পারে যদি পুরুলিয়ায় কৃষি দফতরের সাফল্যকে নিজের চোখে দেখে আসা সম্ভব হয় পুরুলিয়া জেলার ১নং ব্লকের কোটলুই মৌজার রায়বাঁধ এলাকায় পৌঁছে।
প্রান্তিক জেলা হওয়ার কারণে পুরুলিয়ায় তেমন একটা চাষের কাজ হত না জলের ব্যপক সমস্যা থাকার জন্য। কিন্তু এটা ভাবা একেবারেই ভুল যে পুরুলিয়ায় বৃষ্টিপাত কম হয়। কারণ এই জেলা বছরে গড়ে ১২৫০-১৩০০ মিলিমিটার পর্যন্ত বৃষ্টি পেয়ে থাকে। শুধু ভূ-প্রকৃতিগত কারণের জন্যই পুরুলিয়ার মাটি বৃষ্টির জল ধরে রাখতে পারেনা। সংরক্ষনের অভাব থাকার কারণে এই জলকে সঠিকভাবে চাষের কাজে ব্যবহার করা যায় না। বিপন্ন হয় কৃষিকাজ। অথচ এই জেলার মানুষের জীবন – জীবিকা নির্ভরশীল চাষবাসের উপরেই। বর্ষাকালে কিছু ডালশস্য বা বাদামের চাষ হলেও বছরের অন্যান্য সময় এই জমিগুলো স্রেফ পড়ে থাকত। ফলে আর্থিক সমস্যা যেন এখানকার কৃষকদের কাছে প্রতিদিনের স্বাভাবিক ব্যপার হয়ে উঠত। কিন্তু এখানেই কৃষি দফতরের কেরামতি। গ্রামীণ এলাকার প্রান্তিক কৃষক পরিবারগুলির জীবনযাত্রার মানন্নয়নের লক্ষ্যে বিভিন্ন পরিকল্পনার সার্থক রূপায়ণ করছে পুরুলিয়া কৃষি দপ্তরের ভূমি সংরক্ষণ শাখা। জেলার বিভিন্ন এলাকায় নতুন জলাশয় খনন করে বৃষ্টির জল ধরে রেখে তা চাষের কাজে ব্যবহার করতে কৃষকদের উৎসাহিত করা হচ্ছে। সব মিলিয়ে বছরভর শাকসব্জি চাষ করতে পারায় কৃষকদের অবস্থাও আগের থেকে কিছুটা সাবলীল হয়েছে।
২০১৮-১৯ অর্থবর্ষে কৃষিদপ্তরের ভূমি সংরক্ষণ শাখার উদ্যোগে এই এলাকায় জাতীয় খাদ্য সুরক্ষা মিশন ১লক্ষ ৮১হাজার টাকা ব্যায়ে একটি সেচকুয়া ও ২ লক্ষ ৭০হাজার টাকা ব্যায়ে জল সংরক্ষনের জন্য একটি পুকুর খনন করা হয়। বর্তমানে এই পুকুর এবং কুয়োর জল ব্যবহার করা হচ্ছে চাষবাসের জন্য। গ্রীষ্মকালীন বিভিন্ন ফসল চাষের পাশাপাশি শীতকালীন বিভিন্ন শাকসব্জি, তৈলবীজের চাষও হচ্ছে ব্যপক। যা স্বাভাবিকভাবেই কৃষি দফতরের সাফল্যের খতিয়ান তুলে ধরছে ভালোরকম।
একদিকে কৃষিকাজ। অন্যদিকে মাছ চাষ। সবমিলিয়ে পুরুলিয়া জেলার এই কৃষকরা আর্থিকভাবে আরো অনেকটা স্বচ্ছল হয়েছেন। কৃষিদফতরের পক্ষ থেকে কৃষকদের বিভিন্ন আনাজের বীজ যেমন বিনামূল্যে কৃষকবন্ধুদের দেওয়া হচ্ছে, তেমনি আপৎকালীন পরিস্থিতিতে খারিফ ধান চাষে জলের অভাব দেখা দিলে ব্যবহার করা হচ্ছে এই জল। ফলে সবদিক থেকেই যেন কৃষকবন্ধুদের আয়ের পথ সুনিশ্চিত হয়েছে। এখন কৃষি দফতরের লক্ষ্য যাতে ভবিষ্যতে কৃষকবন্ধুদের আর কোন সমস্যার মধ্যে না পড়তে হয়।
এই প্রকল্প রূপায়নের ফলে এলাকার প্রায় ৭০-৮০বিঘা জমিকে সারাবছর ধরে চাষের আওতায় নিয়ে আসা সম্ভব হয়েছে। প্রায় ৩০-৪০জন কৃষক সারা বছর ধরে বিভিন্ন সব্জী চাষ করে আর্থিকভাবে উপকৃত হচ্ছেন। এখন এলাকার ছবিটাই একেবারে বদলে যেতে শুরু করেছে। জলের সংস্থান হওয়ায় এখন এলাকার চতুর্দিকে শুধুই সবুজের সমারোহ। রুখা জমিকে সবুজ ফসলে ভরিয়ে দিয়ে কৃষি দফতর আবারো প্রমাণ করে দিল তারা আছে কৃষকের পাশেই।
সন্দীপ সরকার
পুরুলিয়া