Daily
ভারত করোনার সাগরে ডুবতে বসেছে। অথচ কয়েক মাস আগে যখন করোনার দ্বিতীয় ঢেউ সুনামির চেহারা নিয়ে আছে পড়েনি ভারতীয় তটে তখনো আত্মতুষ্টিতে ভুগছিল ভারতের শাসক শিবির। প্রধানমন্ত্রী থেকে স্বাস্থ্যমন্ত্রী, সরকারের কর্তাব্যক্তি থেকে নীতি আয়োগের সদস্যরা কে ছিল না এই তালিকাতে। বাদ ছিল না কেন্দ্রের শাসক দল ভারতীয় জনতা পার্টি পর্যন্ত।
২৮ জানুয়ারি, ২০২১ – স্থান: ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বিশ্বকে শুনিয়েছিলেন,
“বিশেষজ্ঞরা বলেছিলেন, ভারতে কোভিড সংক্রমনের সুনামি আসবে। আজ ভারতে কোভিড কেস দ্রুত কমছে।…… সারা বিশ্বকে অতিমারির সঙ্গে লড়াই করতে সাহায্য করেছি।”
বাস্তব চিত্র: আজ মে মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে দাঁড়িয়ে ভারতের দৈনিক সংক্রমণ গত ২৪ ঘন্টায় ৩ লক্ষ ৬২ হাজার ৭২৭। প্রশ্ন এখানেই, গোটা বিশ্বকে সাহায্য করতে গিয়ে আপনি কি নিজের দেশের জনগণকে হাড়িকাঠে তুললেন? প্রশ্ন তুলছেন বিরোধীরা।
২১ ফেব্রুয়ারি, ২০২১ – স্থান: বিজেপির জাতীয় কর্মসমিতির বৈঠক
দিল্লিতে বিজেপির জাতীয় কর্মসমিতির বৈঠকের সর্বসম্মতিক্রমে প্রস্তাব গ্রহণ করে বলা হয় যে,
“গর্বের সঙ্গে বলা যায়, নরেন্দ্র মোদির দক্ষ, সংবেদনশীল, দায়বদ্ধ ও দূরদর্শী নেতৃত্বে ভারত কোভিডকে পরাজিত করেছে।”
বাস্তব চিত্র: বিরোধীদের সম্মিলিত অভিযোগ, গতবছর কোভিড ছড়ানোর জন্য তবলিগ-জমিয়তকে না হয় সংক্রমনের জন্য কাঠগড়ায় তোলা হয়েছিল। কিন্তু এবার তো তবলিগ ছিলনা, তবুও কি করে বাড়ল সংক্রমনের বহর? কি করে জেনে বুঝেও করতে দেয়া হল কুম্ভ মেলার আসর? কি করে প্রধানমন্ত্রী পশ্চিমবঙ্গ সহ পাঁচ রাজ্যের ভার্চুয়াল জনসভার পরিবর্তে ভিড়ে ঠাসা র্যালি ও সভা-সমাবেশ করলেন? বিরোধীদের প্রশ্ন, তখন তো আপনি জানতেন দেশে প্রতিদিনই বাড়ছে কোভিডের সংক্রমণ তাও কিকরে এই কাজগুলো আপনি করলেন? মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সহ অনেকেই প্রশ্ন করলেন, আপনার আসল লক্ষ্য কি কোভিড কমানো না রাজ্যগুলিতে ক্ষমতা দখল।
৮ মার্চ, ২০২১ – স্থান দিল্লির মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের সম্মেলন
দিল্লিতে চিকিৎসকদের এই সম্মেলনে দাঁড়িয়ে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী যিনি নিজে চিকিৎসক, সেই ডাক্তার হর্ষবর্ধন দাবি করলেন “আমরা অতিমারির শেষ পর্বে পৌঁছে গিয়েছি।”
বাস্তব চিত্র: করোনার দ্বিতীয় ঢেউ ভারতের বুকে আছড়ে পড়তেই বেআব্রু হয়ে পড়ল ভারতের হাসপাতালগুলিতে স্বাস্থ্য পরিকাঠামো। সরকারি-বেসরকারি মিলিয়ে হাসপাতালগুলি যেন হয়ে উঠেছে নেই রাজ্যের স্বর্গরাজ্য। বেড নেই, অক্সিজেন নেই, ভেন্টিলেটর নেই, পর্যাপ্ত ডাক্তার নেই, নেই পর্যাপ্ত নার্সও। যদিও দৈনিক মৃত্যুর হার এখনো ভারতে বেশ কম। যদিও ভারতে সুস্থতার হার এখনো বেশ বেশি। দেশের বেশিরভাগ হাসপাতালগুলিতে যে নিজস্ব কোন অক্সিজেন প্লান্ট নেই এই প্রথম দেশবাসী তা জানতে পারল।
টিকা তৈরীর কৃতিত্ব আপনি নিলেও বিরোধীদের বক্তব্য, আগে দেশের প্রয়োজন না মিটিয়ে কেন আপনি পড়শি দেশগুলোতে দিতে গেলেন? কেন আমজনতা মাস্ক না পড়লে ধরপাকড় করলেন না? বিরোধীদের আরও অভিযোগ, সমাজ মাধ্যমে কেউ সরকার বিরোধী বক্তব্য লিখলে সঙ্গে সঙ্গে শুরু হয় পুলিশি তৎপরতা তবে এ ক্ষেত্রে মাস্ক না পড়লে, দূরত্ব বিধি না মানলে কেন কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হলনা?
কেন দেশের আইআইটিগুলিতে ইঞ্জিনিয়ারদের দিয়ে জরুরী ভিত্তিতে যুদ্ধকালীন তৎপরতায় লক্ষ লক্ষ ভেন্টিলেটার তৈরি করা হলো না ? এগুলি তো সবই আপনার সরকারের বা আপনার দলের রেকর্ড বক্তব্য। তাই বিরোধীরা তো প্রশ্ন তুলবেই। কেন আপনি করোনার সুনামির মধ্যে সামনে দাঁড়িয়ে নেতৃত্ব দেবার বদলে রাজ্যগুলির অধিকারে হস্তক্ষেপ করতে নামলেন সেই প্রশ্ন তুলতে শুরু করেছেন বিরোধীরা। এখন যখন যুদ্ধকালীন তৎপরতায় টিকার উৎপাদন শুরু করা উচিত, দেশের সেনাবাহিনীকে কাজে লাগানো উচিত সেখানে প্রথমে মুখ্যমন্ত্রীদের এড়িয়ে সরাসরি জেলাশাসকদের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপনটা কি খুবই জরুরী ছিল মিস্টার প্রধানমন্ত্রী? গত এক মাসে সরকারিভাবে ৭৫ লক্ষেরও বেশি আর বেসরকারিভাবে প্রায় দেড় কোটিরও বেশি মানুষ কাজ হারিয়ে, পেটে খিদে নিয়ে খড়কুটোর মতো বাঁচতে চাইছে করোনার বিরুদ্ধে। দেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে আপনি সেই দায়িত্ব এড়িয়ে যেতে পারেন কি? কি জবাব আপনি জনগণকে দেবেন বা বিরোধীদের দেবেন সেটাই এখন দেখার।
ব্যুরো রিপোর্ট