Trending
এবার কি মূল্যবৃদ্ধির কোপে পড়তে চলেছে মুসুর ডাল? চাহিদা পূরণ করতে গেলে বেশি দাম দিতে হবে? আম জনতার হেঁসেল খরচ কি তাহলে আরও বৃদ্ধি পাবে? ভারতের সঙ্গে কানাডার সম্পর্ক অবনতি হবার জেরেই মুসুর ডালের আমদানি নিয়ে চিন্তার ভাঁজ পড়েছে কেন্দ্রীয় সরকারের কপালে। দেশের বাজারে মুসুর ডালের দাম বাড়লে তখন ভারতের হাতে কি প্ল্যান বি তৈরি রয়েছে? কানাডার থেকে মুসুর ডাল কত পরিমাণ আমদানি করে ভারত? কানাডার একটা স্ট্রোকে ভারতের বাজারে মুসুর ডালের মূল্যবৃদ্ধি যথেষ্ট চিন্তার। তাহলে উপায়? আজকের প্রতিবেদন শুরু করা যাক এই নিয়েই, কানাডা মুসুর ডাল রফতানিতে নিষেধাজ্ঞা জারি করলে তার প্রভাব কতটা পড়বে ভারতে?
মুসুর ডালের চাহিদা ভারতের আভ্যন্তরীণ বাজারে কতটা, সেটা আলাদা করে বলার কোন প্রয়োজন নেই। একটা তথ্য থেকে জানা যাচ্ছে, ভারতে প্রতি বছর মুসুর ডালের চাহিদা গড়ে থাকে ২৩ লক্ষ টন মতন। তার মধ্যে কানাডার থেকে ভারত মুসুর ডাল আমদানি করে অনেকটাই। ২০২২-২৩ অর্থবর্ষে ভারত কানাডা থেকে মুসুর ডাল আমদানি করেছে প্রায় ৪.৮৫ লক্ষ টন। খরচ পড়েছে প্রায় ৩ হাজার ১২ কোটি ডলার। এখন প্রশ্ন জাগতে পারে, তাহলে কি ভারতে মুসুর ডালের চাষ হয় না? নিশ্চয়ই হয়। ভারতে মুসুর ডাল উৎপন্ন হয় বছরে প্রায় ১৬ লক্ষ টন। আভ্যন্তরীণ বাজারের খামতি মিটিয়ে মুসুর ডাল রফতানি করে ভারত। বাংলাদেশ, নেপাল, ভুটান এবং আমেরিকায় মুসুর ডাল রফতানি করে ভারত। তবে এখন যা পরিস্থিতি, তারপর হয়ত কানাডা মুসুর ডাল রফতানিতে নিষেধাজ্ঞা জারি করতে পারে। এই আশঙ্কার খবর চাউর হতেই কার্যত মাথায় হাত পড়েছে বহু ব্যবসায়ীর। তাঁরা ভয় পাচ্ছেন, কে বলতে পারে হয়ত মুসুর ডাল আমদানি বন্ধ হলে দেশের বাজারে তখন ভালোরকম দাম বাড়তে পারে মুসুর ডালের। তখন উপায়?
নিউ দিল্লির অবশ্য প্ল্যান বি তৈরি রয়েছে। সরকারের তরফ থেকে জানানো হয়েছে, কানাডা যদি এমন কোন পদক্ষেপ নেয় তারপরেও কিন্তু মুসুর ডালের দাম দেশিয় বাজারে বৃদ্ধি পাবার সম্ভাবনা কম। কারণ বাজারে মুসুর ডালের টান পড়বে না। ভারতকে মুসুর ডালের সংকট থেকে বের করে আনতে পারবে একটি দেশ, অস্ট্রেলিয়া। ইতিমধ্যেই অস্ট্রেলিয়া থেকে ভারতে মুসুর ডালের আমদানি পৌঁছে গিয়েছে প্রায় ২ লক্ষ টনে। মনে করা হচ্ছে, কানাডা যদি বেশি বেগরবাই করে তাহলে কানাডাকে পাত্তা না দিয়ে ভারত অস্ট্রেলিয়ার থেকেই মুসুর ডাল আমদানি করবে। ভবিষ্যতে আমদানির পরিমাণ আরও বাড়াতে পারে। আর অস্ট্রেলিয়ার কাছ থেকেও যদি চাহিদা পূরণে সমস্যা হয় তাহলে তো রয়েছেই ভারতের বেস্টিজ- রাশিয়া। রাশিয়া মুসুর ডাল রফতানি করবে ভারতকে। মনে করছেন, রাশিয়ার থেকে তো ভারত এতদিনে ক্রুড অয়েল নিত। তাহলে আবার মুসুর ডাল? গত অগাস্ট মাসেই মুসুর ডালবাহী জাহাজ রাশিয়া থেকে সটান এসে পৌঁছয় চেন্নাই বন্দরে। তবে মুসুর ডাল আমদানি নিয়ে সূক্ষ্ম একটা সমস্যা রয়েছে। আসলে মস্কো থেকে মুসুর ডাল কেনার বিষয়টা আজকের নয়। কেন্দ্রীয় সরকার ২০২১ সালেই মস্কো থেকে মুসুর ডাল কেনার ব্যপারে ছাড়পত্র দেয়। তবে সমস্যা হচ্ছে রাশিয়ার মুসুর ডালের দাম একটু বেশি। অর্থাৎ ভারত যদি আমদানি করেও তাহলে কিন্তু মুসুর ডালের দাম একটু হলেও বাড়তে পারে। অবশ্য দিনের শেষে রাশিয়া তো। বলা যায় না, হয়ত কম দামে মুসুর ডাল রাশিয়া ভারতকে রফতানি করতেও পারে। সেক্ষেত্রে ভারত এবং রাশিয়ার ডিপ্লোম্যাসি কোন পথে এগোবে সেটা বলবে ভবিষ্যৎ। কিন্তু এখন?
কেন্দ্রীয় সরকার বলছে, দেশের বাজারে মুসুর ডালের দাম বৃদ্ধির আশঙ্কা এখনো পর্যন্ত অমূলক। কারণ ভারত এবং কানাডার বিবাদ কূটনৈতিক স্তরে। চলতি বছরে ইতিমধ্যেই কানাডা থেকে ১ লক্ষ টন মুসুর ডাল কানাডা থেকে ভারতে পৌঁছেও গিয়েছে। আর ভারতের বিভিন্ন বন্দরে এখনো পর্যন্ত ৬ লক্ষ টন মুসুর ডাল পৌঁছে গিয়েছে। সব মিলিয়ে এই বছরে মুসুর ডালের যা চাহিদা রয়েছে ভারতে, সেটা যথেষ্ট। আভ্যন্তরীণ চাহিদা মেটানোর ক্ষেত্রে কোন সমস্যা তৈরি হবে না। তার মানে এই বছরের জন্য আম জনতার স্বস্তি। তবে ঐ, ভবিষ্যতের কথা ভেবে অস্বস্তি তো যায় না। কূটনীতিকরা বলছেন, ভারতের সঙ্গে চিনের সম্পর্ক ভালো না হলেও দুটো দেশ নিজেদের ব্যবসায় কোন ক্ষতি আনতে দেয়নি। কানাডা-ভারতের বাণিজ্যিক সম্পর্কেও কোন প্রভাব পড়বে না। আর যদি পড়ে তখন ভারতের পাশে রাশিয়া তো রয়েছেই। সঙ্গে রয়েছে অস্ট্রেলিয়া। সুতরাং আমজনতার আতঙ্কিত হবার এখনই কোন কারণ দেখা যাচ্ছে না। আপনারা কি মনে করেন, মতামত জানান কমেন্ট বক্সে। সঙ্গে লাইক করুন, শেয়ার করুন। আর সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের চ্যানেল বিজনেস প্রাইম নিউজ।
জীবন হোক অর্থবহ