Trending
পলিটিক্যাল অ্যানালিস্ট হিসেবে কি পিকে হচ্ছেন ফিকে- দিনদিন? হঠাৎ উধাও কেন তিনি? আসছেন না জন সমক্ষে, আসছেন না মিডিয়া বাইট দিতে। তাহলে কি ধরে নিতে হবে যে পিকের কেরিয়ার গ্রাফ এখন ক্রমশ নীচের দিকে? ভবিষ্যদ্বাণী না মেলার কারণে পিকে নিজেকে সরিয়ে রাখছেন সব জায়গা থেকে? তাহলে কি বামেদের পাশেও আর পিকে থাকবেন না? থাকবেন না আর কোনরকম ভবিষ্যদ্বাণী করার বিচারে? মানে নম্বর গেম নিয়ে খেলতে রাজি হচ্ছেন না তিনি?
এই লোকসভা নির্বাচনে পিকে যা যা ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন, সবই আজ খরচের খাতায়। মানে নম্বর গেমে পিকে বরং অনেকটাই পিছিয়ে গেছেন যোগেন্দ্র যাদবের থেকে। সেদিক থেকে দেখতে গেলে যোগেন্দ্র যাদবের ফোরকাস্ট প্রায় মিলে যায়, তিনি মনে করেছিলেন যে, বিজেপি এবার হয়ত ২৪০ থেকে ২৪২ আসনের বেশি পাবেন না। সেখানে পিকের নম্বর গেম ধারে কাছে পৌঁছতে পারেনি। তারপরেও পিকের কথাকেই অনেক বেশি বেদবাক্য বলে মনে করেছিলেন সাধারণ মানুষ। পিকে এই লোকসভা নির্বাচনে কী কী প্রেডিক্ট করেছিলেন? ফার্স্টঃ বিজেপি এবারেও ৩০০ পেরিয়ে যাবে, তিনি বলেছিলেন বাংলায় বিজেপি ১ নম্বর দল হিসেবে উঠে আসবে তৃণমূলকে পিছনে ফেলে উঠে আসবে, এছাড়া মহারাষ্ট্র, উত্তরপ্রদেশ, রাজস্থান নিয়েও পিকের ভবিষ্যদ্বাণী একেবারেই মেলেনি। পিকে যা অনুমান করেছিলেন তার সঙ্গে বিজেপির আসন সংখ্যা জেতার ফারাকটা প্রায় ২০%। স্বাভাবিকভাবেই পিকের ভবিষ্যদ্বাণী না মেলার কারণে পলিটিকাল অ্যানালিস্ট হিসেবে এখন পিকে কতটা গুরুত্ব ধরে রাখতে পারছেন সেই প্রশ্নটা আরও ভালোভাবে ছড়াতে শুরু করে। তারপরই পিকে’কে নম্বর গেম নিয়ে বারবার পড়তে হয়েছে সমালোচনার মুখে। এই অবস্থায় দাঁড়িয়ে পিকে কি আদৌ নিজের স্ট্যান্ডপয়েন্ট ধরে রাখবেন?
পিকের বক্তব্য একটু আলাদা অবশ্য। তাঁর বক্তব্যকে পোস্টমরটেম করলে এটা বোঝা যাচ্ছে যে তিনি বলতে চেয়েছেন, একজন অ্যানালিস্টকে নির্ভর করতে হয় নানারকম ডেটার উপর। তার সঙ্গে করতে হয় ভালোরকম তথ্য বিশ্লেষণ। তাই যদি নম্বর গেমে না পড়ে পিকের অ্যানালিসিস লক্ষ্য করা যায়, তাহলে দেখা যাবে, পিকের অ্যানালিসিস একেবারে মিথ্যেও নয় আবার পুরোটা সত্যিও হয়নি। কেন জানেন? পিকে বলেছেন, মোদী তৃতীয়বারের জন্য প্রধানমন্ত্রী হবেন, সেটা হয়েছে। এনডিএ সরকার গঠন করবে মেজরিটি নিয়ে সেটাও হয়েছে। পিকে মনে করেছিলেন, এখনো পর্যন্ত মোদীর বিরুদ্ধে দেশের সর্বপ্রান্তে ক্ষোভ বা অসন্তোষের কোন ছবি আমরা লক্ষ্য করিনি। ফলে মোদীর সঙ্গে দাঁড়িয়েছেন ২৩ কোটি ভোটার। বেশ কিছু রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন এবারে নির্বাচন যেটা হয়েছে সেটা ভালোরকম হাড্ডাহাড্ডির মধ্যে দিয়েই হয়েছে। ফলে বিজেপি জিতলেও তা দেশবাসীর মধ্যে ছড়িয়েছে কিছুটা নৈতিক পরাজয়ের মত, কারণ মোদীর ভবিষ্যদ্বাণী যা ছিল- ইস বার, ৪০০ পার সেটার ধারেকাছে পৌঁছতে পারে নি এনডিএ। আবার অন্যদিকে কংগ্রেস ১০০টি আসন দখল করলেও তারা পিছিয়ে রয়েছে বিজেপির থেকে। তবে তারপরেও বলা হচ্ছে, কংগ্রেসের এক নৈতিক জয় হয়েছে। রাহুল গান্ধী আগেও বেশ কয়েকবার বলেছিলেন, এবারের নির্বাচনী লড়াই সরকার তৈরির লড়াই-এর থেকেও বেশি সংবিধান রক্ষার লড়াই। আর সেটাই হয়েছে বলে মনে করেন কংগ্রেস সমর্থকরা। কারণ তাঁরা একটা বিষয় প্রাক-নির্বাচনে ছড়িয়ে ছিলেন যে এবার মোদী সরকার এক্সট্রিম মেজরিটি নিয়ে এলে সংবিধান বদলে যেতে পারে। কিন্তু সেটা এবার হয়নি। আর যে কারণে বিজেপি জিতেও হেরেছে অন্যদিকে কংগ্রেস হেরেও জিতেছে।
পিকে আইপ্যাক ছেড়ে এসেছেন। এখন তিনি নিজের একটি দল তৈরি করেছেন যার নাম জন সুরজ পার্টি তার প্রেসিডেন্ট এখন নিজে প্রশান্ত কিশোর। তিনি ইতিমধ্যেই সাফ জানিয়ে দিয়েছেন যে, লোকসভা নির্বাচনের আগে পিকে যা ধারণা করেছিলেন তার অনেকটাই ভ্রান্ত স্পেশ্যালি সেটা যদি কোন নম্বর গেম হয়। তাই তিনি আর এই নম্বর বলাবলির মধ্যে নেই। তিনি মনে করেন, মানুষ মাত্রেই ভুল হয়। এমন ভুল করা মানেই যদি সবকিছু ছেড়ে দিতে হয়, কেউ যদি মনে করেন তিনি কিছু বোঝেন না তাহলে বিষয়টা অন্যায্য হবে। রাহুল গান্ধীর বহু অ্যাসাম্পসন ভুল হয়েছে তার মানে তিনি কি রাজনীতি বোঝেন না? অমিত শাহ কত ভুল প্রেডিক্ট করেছেন আগে, তার মানে কি তিনি রাজনীতি বোঝেন না? আসলে বিষয়টা হচ্ছে তথ্য এবং তার চুলচেরা বিশ্লেষণ তার সঙ্গে নিজের অ্যাসাম্পসন। এই সব মিলিয়েই তো একজন পলিটিকাল অ্যানালিস্টের যত ধ্যান ধারণা। তাহলে? কী করবেন পিকে? তাঁর কেরিয়ার কি ফিকে? মোটেই না। তিনি ভবিষ্যতেও অ্যানালিসিস করে যাবেন তবে হ্যাঁ, আর কোনদিন নম্বর নিয়ে কথা বলবেন না এই বিষয়ে নিশ্চিত হয়েছেন তিনি নিজেও। আপনার কি মনে হয় জানান কমেণ্ট বক্সে। সঙ্গে লাইক করুন শেয়ার করুন আর নতুন হলে সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের চ্যানেল বিজনেস প্রাইম নিউজ।
জীবন হোক অর্থবহ