Trending
বছর শেষে খরা কাটল বাংলা সিনেমার। ফের হলমুখী হচ্ছেন দর্শকরা। রেকর্ড গড়ল প্রজাপতি। ১ দিনে আয় দাঁড়াল ১ কোটি টাকা। টলিউড ইন্ডাস্ট্রির জন্য খুশির খবর তো বটেই। একইসঙ্গে বাংলা সিনেমার ভাগ্যের চাকাও ঘোরাতে সাহায্য করল দেব, মিঠুনের রসায়ন। তাহলে কি সত্যিই বাংলা ইন্ডাস্ট্রি ঘুরে দাঁড়াচ্ছে? আসুন আজ এই নিয়েই ছোট্ট একটা প্রতিবেদন তুলে ধরা যাক।
সত্যি কথা বলতে কি, একটা সময় ছিল যখন বাংলা সিনেমার রিমেক হত মুম্বইতে। এখন দক্ষিণী সিনেমার দাপট। রিমেক হয় বাংলায়। কিন্তু সিনেমার ব্যবসা নিয়ে কথা বলব আর সাউথ ইন্ডিয়ান ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিকে অগ্রাহ্য করব, সেটা তো হতে পারে না। তাই তুলনায় না যাওয়াই ভালো। বলিউডের সঙ্গেও তুলনা না-টানলে চলবে। কিন্তু যদি এসেন্সের দিকে নজর দিতেই হয় তাহলে বলতে হবে, ইন্ডিয়ান ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিকে গ্লোবাল মার্কেটে পৌঁছে দেবার কাজটা এখন নিপুণভাবে করছে তামিল এবং তেলুগু ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি। পিএস-১, ২.০ বা বিক্রমের মত তামিল সিনেমা যেমন প্যান ইন্ডিয়া শুধু রিলিজ-ই করেনি সঙ্গে তিন গুণ, চার গুণ টাকা আয় করে প্রফিটের মার্জিনকে বাড়িয়ে দিয়ে ইন্ডিয়ান ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিকে অক্সিজেন দিয়েছে, তেমনই তেলুগু ইন্ডাস্ট্রিতে বাহুবলী, আরআরআর-এর মতন সিনেমা বিশ্ব দরবারে প্রশংসা কুড়িয়েছে এবং হাজার হাজার কোটি টাকা আয়ের মুখ দেখেছে। সেদিক থেকে দেখতে গেলে দক্ষিণের এই দুটো ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিই আজ ভারতীয় সিনেমাকে পৌঁছে দিয়েছে ব্যবসায়িক সাফল্যের শিখরে। কিন্তু যদি বাংলা সিনেমার কথা ধরা হয়, তাহলে বাংলা সিনেমা বর্তমানে এই পর্যায়ে পৌঁছনোর জায়গায় নেই। তাই বাংলার বহু সিনেমা বিভিন্ন ফেস্টিভ্যাল ঘুরলেও দর্শকদের দোরে দোরে পৌঁছতে পারেনি সেভাবে। আর যে-কারণে বাংলা সিনেমার গ্লোরি কিছুটা হলেও ফিকে হয়ে যাচ্ছিল বলেই মনে করছিলেন সিনেমা বিশেষজ্ঞরা। হিটের তালিকা নামছিল প্রায় শূন্যে। এদিকে প্রোজেক্ট কমপ্লিট করার মতন পরপর সিনেমা তৈরি করে রিলিজ করার পরেও একের পর এক সিনেমা হলগুলির আসন থেকেছে শূন্য। অবশ্য কয়েক মাস আগে সেই খরার দশা কিছুটা কাটাতে সাহায্য করে অপরাজিত। কিন্তু বর্তমান সময়ে দাঁড়িয়ে কালেভদ্রে দু’একটি সিনেমা ছাড়া বাংলা সিনেমার কপাল চওড়া হচ্ছিল না। তার জন্য অনেকে দায়ি করেছিলেন, অভিনয়, মেকিং এবং সিনেমার গল্পকে। সত্যি বলতে গেলে, টলিউড ইন্ডাস্ট্রি-তে পরপর যে-ধরণের সিনেমা তৈরি হচ্ছিল, সেখানে নতুন কোন চমক খুঁজে পাচ্ছিলেন না বাংলার দর্শকরা। টাইপকাস্টিং-এর মতন বিষয়ই টলিউড ইন্ডাস্ট্রিকে ফেলে দিয়েছিল একেবারে তলানিতে। সেখানে দাঁড়িয়ে আজ সত্যিই অন্যরকম একটা সময়। বাংলার প্রযোজকরা দিনের শেষে লাভের মুখ দেখলেন। হামি টু, হত্যাপুরী এবং প্রজাপতি।
বছর শেষে রিলিজ হওয়া তিনটি বাংলা সিনেমাই ভালো ফল করছে। নন্দিতা, শিবপ্রসাদ মুখারজির হামি পার্ট ওয়ান ভালো ব্যবসা দিয়েছিল বাংলা ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিকে। সেদিক থেকে দেখতে গেলে হামি টু নিয়ে আশাবাদী ছিলেন পরিচালক থেকে প্রযোজক সকলেই। হত্যাপুরি ভালো দর্শক টানার কারণ ফেলুদা ম্যাজিক। বারো দিনের মাথায় এই দুটো সিনেমাই বাংলার অন্যান্য ছবির ফলাফল দেখলে, তার থেকে নিঃসন্দেহে ভালো ব্যবসা দেখিয়েছে। কিন্তু সব কিছুকে ছাড়িয়ে গিয়েছে প্রজাপতির ব্যবসা। আর সেটাই বাংলা ইন্ডাস্ট্রিতে বেশ হইচই ফেলে দিল। ১ দিনে ১ কোটি টাকা আয় করে রেকর্ড গড়ল প্রজাপতি। বক্সঅফিসের দিকে তাকালে দেখা যাচ্ছে, শুধু ১ জানুয়ারিতে প্রজাপতি ব্যবসা করেছে ১ কোটি টাকার। হায়েস্ট সিঙ্গল-ডে বক্স অফিস কালেকশনে রেকর্ড বাংলা সিনেমার জন্য। এই কয়েকদিনে উপার্জনের নিরিখে এগিয়ে রয়েছে প্রজাপতি। ১২ দিনের শেষে প্রজাপতির আয় পৌঁছে গিয়েছে ৪.৬৭ কোটিতে। বাবা-ছেলের সহজ সরল সমীকরণের ওপর নির্ভর করে নির্ভেজাল ছবিটি বাংলা সিনেমার দর্শকদের চাহিদা পূরণ করতে সক্ষম হয়েছে। দেবের অভিনয় প্রশংসিত হলেও এই ছবিতে মিঠুন চক্রবর্তীর অভিনয় প্রশংসিত হয়েছে দর্শকদের মুখে। যদিও ব্যতিক্রম তো থাকেই…(কুণাল ঘোষের বক্তব্য) এছাড়াও মমতা শংকরের কামব্যাক, তাও আবার মিঠুনের সঙ্গে, সেই মৃগয়ার পর, সেটাও আলাদা ম্যাজিক তৈরি করে দিল।
দেখুন ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে ওঠাপড়া আসেই। একটা সময় ছিল যখন কন্নড় ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিকে সেভাবে দেশের বিনোদন দুনিয়া পাত্তা দিত না। ফিকে হয়ে গেছিল কন্নড় ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি। কিন্তু কান্তারা বা কেজিএফ-কেই দেখুন। কিভাবে প্যান ইন্ডিয়া দর্শকের মন মেজাজ আটকে রাখতে পেরেছে। তার জন্য কাজ করেছে সিনেমার লারজার দ্যান লাইফের থেকেও গল্পের আঞ্চলিক এসেন্স। সেই এসেন্স কি বাংলা সিনেমায় নেই? নিশ্চয়ই রয়েছে। একেবারে আদ্যোপান্ত বাংলা এসেন্স। না-হলে প্রজাপতি এভাবে হলে হলে উড়ে বেরাতে পারত না। আর সেটাই ব্যবসায়িক সাফল্য এনে দিতে পেরেছে। যা ফের চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে, দরকার নেই একশো কোটির বাজেট। কনটেন্টের দম থাকলে দর্শক আসবেই। যদি বাংলার দর্শক দক্ষিণী সিনেমার জয়জয়কার করতে পারে তাহলে দক্ষিণের দর্শকরা বাংলা সিনেমা নিয়ে আলোচনা করবে, এই বিশ্বাস রাখাই যায়। আপনার কি মতামত? বর্তমান বাংলা সিনেমায় অভাব কিসের?
বিজনেস প্রাইম নিউজ।
জীবন হোক অর্থবহ