Story
কবির কলমে কেরোসিন শিখা মাটির প্রদীপের গলা টিপে দিতে চাইলেও আজ কিন্তু মাটির প্রদীপের সঙ্গে কেরোসিন আর নেই। চিনের প্রাচীরের মত দাঁড়িয়ে রয়েছে টুনি আর এলইডি বাল্ব। টুনি আর এলইডি বাল্বের দাপাদাপির মাঝে টিমটিম করে হলেও মাটির প্রদীপ সলতের আগুন ধরিয়ে আবারো মাথা চাড়া দিচ্ছে টেরাকোটা শিল্পকে বুকে নিয়ে উত্তর দিনাজপুর জেলার কালিয়াগঞ্জ ব্লকের কুনোরের হাটপাড়া গ্রামে। অন্তত দীপাবলির আগে এবারের মাটির প্রদীপ আর টেরাকোটার কম্বিনেশন বাজারে যে ঝোড়ো ব্যাটিং করবে এই ভেবেই স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলছেন এখানকার মৃৎশিল্পীরা।
এই গ্রামে বসবাস করেন এমন বহু পরিবার যাদের দীপাবলি আসলেই ব্যস্ততা পৌঁছয় চরমে। কারণ এখানকার মৃৎশিল্পীরা যত্ন নিয়ে তৈরি করতে শুরু করেন সাবেকী ধাঁচের মাটির প্রদীপ। যা মালদা, শিলিগুড়িতে বিক্রি হয়তো বটেই, একইসঙ্গে ভিন রাজ্য থেকে ব্যবসায়ীরা এখানে আসেন। কিনে নিয়ে যান মাটির প্রদীপ। তবে এই বছরের ছবি একটু আলাদা। এবারে প্রদীপগুলি শুধু সাবেক ডিজাইনেই তৈরি হয়নি। বরং মাটির ছোঁয়ায় সেখানেও এসেছে অভিনবত্ব। তৈরি হচ্ছে নতুন টেরাকোটা মডেলের প্রদীপ। কেউ তৈরি করছেন সুসজ্জিত প্রদীপের ঝাড়। কেউ আবার তৈরি করছেন স্ট্যান্ড প্রদীপ। এছাড়া রয়েছে এক প্রদীপ, পঞ্চ প্রদীপ, চোদ্দ প্রদীপ, আলাদিনের প্রদীপ, নারকেল প্রদীপ, ম্যাজিক প্রদীপের মত টেরাকোটার বিভিন্ন মডেল। ফলে ব্যস্ততা যে বাড়বে, সেটা স্বাভাবিক।
এখন এলইডি লাইটের যুগ। পুজো, উৎসবে সেই লাইটের আলোই যেন চোখ ধাঁধিয়ে দেয়, সেদিক থেকে আভা ছড়ানোর ক্ষমতা অনেকটাই কম টেরাকোটা প্রদীপের। তবু টেরাকোটা প্রদীপের বিক্রি নিয়ে যথেষ্ট আত্মবিশ্বাসী এখানকার শিল্পীরা। ফলে ব্যবসায় তেমন একটা ভাটা পড়ে না।
রাজ্য সরকার সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন মৃৎশিল্পীর পরিবারগুলোর দিকে। কিভাবে সরকার টেরাকোটা শিল্পীদের পাশে দাঁড়িয়েছে, সেই নিয়ে কথা বললেন পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি দীপা সরকার।
প্রদীপের তলায় অন্ধকার থাকে বেশি। কিন্তু মাটির প্রদীপ তৈরি করেন যারা, তাদের সংসারে আর্থিক অনটনের অন্ধকার অনেকটাই দূর হয় সেই প্রদীপের আলোয়। ব্যস্ততার ছবিটাই বলে দিচ্ছে সেই কথা। ৫০ টাকা থেকে শুরু করে ১০০০ টাকা পর্যন্ত দাম ওঠে টেরাকোটার এই মাটির প্রদীপের। তাই টুনি বাল্বের হাজারো চাহিদা তৈরি হলেও মাটির প্রদীপের হলুদ আলোর আভা যেন অশুভ শক্তির বিনাশ করে শুভ শক্তিকে নিয়ে আসে ঘরের ভেতর। প্রদীপের আলো যেন শিল্পীর ঘরে লাভের অঙ্কটাও বাড়িয়ে দেয়।
অনুপ জয়সোয়াল
উত্তর দিনাজপুর