Trending
বাংলা নববর্ষ একান্তই বাঙালির। বাংলাভাষী মানুষের নিজের অনুষ্ঠান। তাই নতুন বছরের শুরুতেই এপার বাংলা-ওপার বাংলার বাঙালিরা মিলেমিশে একাকার হয়ে যান নতুন বছরকে বরণ করে নিতে। কোলকাতা থেকে ঢাকা- কাঁটাতারের ভেদাভেদ ফিকে হয়ে যায় নববর্ষের উদযাপনে। বছরের অনান্য দিনের তুলনায় এই দিনটা একেবারে আলাদা। দুইবাংলার রাজধানীই রঙিন সাজে সাজতে ব্যস্ত। আজ যে বৈশাখ আসার দিন!
তবে জানেন কি? আগে পয়লা বৈশাখে হালখাতা হত ঠিকই, কিন্তু তা নববর্ষ হিসেবে পালিত হতো না। মোগল আমল থেকেই পয়লা বৈশাখে শুরু হয় নববর্ষের উদযাপন। চলুন আজ বরং পয়লা বৈশাখের ইতিহাস ঘুরে আসা যাক।
নববর্ষের সঙ্গে হালখাতার সম্পর্ক সেই মোগল আমলেরই। লাল শালুতে জড়ানো খাতার ভিতর টুকটুকে সিন্দুরে আঁকা স্বস্তিক চিহ্ন। দোকানের দোরে দোরে সাজানো কাগজের কদম ফুল, আর ক্রেতা বিক্রেতার সঙ্গে মিষ্টিমধুর আলাপ- মনে করিয়ে দেয় ব্যবসার সঙ্গে এই হালখাতার সংস্কৃতি ঠিক কতটা জড়িয়ে। আগে কিন্তু তা ছিল না। কৃষিভিত্তিক সমাজে হালখাতা ছিল সম্পূর্ণ ভাবে কৃষিকাজের সঙ্গে জড়িত। হালের খাতাই ছিল হালখাতা। মানুষ যেই সময় থেকে চাষ-আবাদ শিখল, সেই সময় থেকেই ফসলের বিনিময় প্রথা শুরু হয়। আর এই বিনিময়ের সমস্ত হিসেবনিকেশ তোলা থাকত এই হালখাতায়। মোগল সম্রাট আকবরও এই রীতি এগিয়ে নিয়ে চলেন পরবর্তীতে।
বাংলা তখনও জমিদারি শাসনের দখলে। নিয়ম হচ্ছে, বছরের একটা নির্দিষ্ট দিনে জমিদারেরা তাদের সমস্ত বকেয়া খাজনা জমা করবেন সম্রাটের ঘরে। আর সেই বিশেষ দিনেই খাজনার হিসেব হালনাগাদ করা হতো। এই দিনের জন্য নবাব-জমিদার সকলের মধ্যে পুণ্যাহ প্রথা চালু করেছিলেন সম্রাট আকবর। মৌসুমি ফসল বিক্রি করে যে টাকা পেতেন কৃষকেরা, তা দিয়ে বিভিন্ন দোকানদারের কাছে সারাবছরের বকেয়া মেটাত তারা। আর সেই হিসেব তুলে রাখা হতো খাতায়। এই ছিল হালখাতার রীতি।
কিন্তু এতে সমস্যায় পরতেন কৃষকেরা। শুধু কৃষকেরা নন। বাংলার জমিদারেরাও বেশ সমস্যার সম্মুখীন হতেন। কারণ, মোগল সম্রাট আকবর বাংলায় হিজরি বর্ষপুঞ্জি মেনে খাজনা আদায় করতেন। কিন্তু সেকালে বাংলায় সমস্ত কাজকর্ম করা হত হিন্দু সৌরপুঞ্জি মেনে। প্রজাদের অসুবিধার কথা শুনে বিখ্যাত জ্যোতিষ আমির ফতেউল্লাহ সিরাজিকে ডাক পাঠালেন প্রজাদরদী সম্রাট। তিনি এসে হিন্দু সৌরপঞ্জি আর হিজরি পঞ্জিকা একসাথে বিশ্লেষণ করতে শুরু করলেন নতুন বাংলা সাল। শুরু হল বঙ্গাব্দ। তবে, বঙ্গাব্দ প্রচলনের এই ক্রেডিটটা অনেকে আবার আকবরের অর্থমন্ত্রী রাজা টোডর মলকেও দিতে চান। সে আইডিয়া যারই হোক। একথা সত্যি যে, সম্রাট আকবরের আমলেই রাজস্ব আদায়ের জন্য এই দুই ক্যালেন্ডারকে সমন্বিত করা হয়।
শুরু হল চৈত্রের শেষে খাজনা এবং বকেয়া পরিশোধ করার নীতি। তবে, এটুকু পরিষ্কার যে, আগে বাংলা নববর্ষের সঙ্গে হালনাগাদের বিশেষ সম্পর্ক ছিল না। এখন জমি আছে। জমিদার নেই। কৃষক আছে। কিন্তু খাজনা দেওয়ার রীতি অবলুপ্ত। নাগরিক সমাজ এখন কৃষির পাশাপাশি ব্যবসার হাত ধরেছে। আর বাঙালি ব্যবসায়ীর ঘরে ঘরে ঐতিহ্যের স্মৃতি হিসেবে রয়ে গিয়েছে নতুন বছরে, নতুন খাতা খোলার এই হালখাতা।
বিজনেস প্রাইম নিউজ
জীবন হোক অর্থবহ