Trending

লিজ ট্রাস প্রধানমন্ত্রীর কুর্সি ছেড়েছেন। এখন প্রধানমন্ত্রীর কুর্সিতে বসতে চলেছেন ঋষি সুনক। দীপাবলির মরশুমে এটা বেশ আশার আলো দেখাচ্ছে ভারতকে। অনেকেই মনে করছেন, যেহেতু ঋষি সুনক নিজে ভারতীয় বংশোদ্ভূত তাই ঋষির প্রধানমন্ত্রী হওয়ায় ভারত-ব্রিটেন দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের পথ অনেকটা মসৃণ হবে। কিন্তু ঋষির প্রধানমন্ত্রী হওয়া ভারতকে বাণিজ্যিক দিক থেকে আদৌ কোন ফায়দা দেবে? চলুন এই প্রশ্নের উত্তর খোঁজা যাক।
আচ্ছা, আগে একটা বিষয় ক্লিয়ার করা যাক। কেন ব্রিটেনে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে নিজেকে সরিয়ে নিলেন লিজ ট্রাস? লিজ যখন ঐ চেয়ারে বসেছিলেন, তখন ব্রিটেনের সামনে বড়সড় একটা চ্যালেঞ্জ ছিল মূল্যস্ফীতি। এদিকে ভারত তখন ব্রিটেনের সঙ্গে ব্যবসা-বাণিজ্যের চাকা আরও কি করে মজবুত করা যায়, সেই নিয়ে যথেষ্ট আশাপ্রকাশ করেছিল। কারণ, গত বছরেই লিজ ট্রাস ভারত-ব্রিটেন এনহ্যান্সড পার্টনারশিপে সই করে। তখন প্রধানমন্ত্রীর কুর্সিতে বরিস জনসন। স্বাভাবিকভাবেই লিজ ট্রাস প্রধানমন্ত্রীর কুর্সিতে বসার পর দুই দেশের বাণিজ্য পরিস্থিতি যে ভালো হবে, সেটা নিয়ে অনেক কূটনীতিবিদ আশাপ্রকাশ করেছিলেন। কিন্তু গোলমাল বাঁধল অন্য একটা জায়গায়। লিজ প্রধানমন্ত্রী হবার পরেই কর ছাড়ের ঘোষণা করে দেন। প্রায় ৪৫ শতাংশ কর কমিয়ে আনার পরিকল্পনা তিনি করেছিলেন। আর এই কর ছাড়ের সিদ্ধান্ত কমানোর জন্য দেশের যারা সর্বোচ্চ আয়কর দিতেন তাঁদের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য ছিল। লিজের এই ঘোষণাই ফ্যাসাদে ফেলে দেয় ব্রিটেনকে। এমনিতেই মূল্যস্ফীতি নিয়ে দেশটা নাস্তানাবুদ হচ্ছিল। তারপর এই সিদ্ধান্ত কার্যত ব্রিটেন অর্থনীতির জন্য বেশ চাপের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। ব্রিটিশ পাউন্ডের দাম পড়তে থাকে নজিরবিহীন। কনজারভেটিভ পার্টির নেতারাই প্রকাশ্যে লিজের এই নীতির সমালোচনা করতে শুরু করেন।
সেই সময় লিজের বিরুদ্ধে কথা বলেন, প্রতিদ্বন্দ্বী ঋষি সুনক। তিনি লিজের কাছে প্রধানমন্ত্রীর কুর্সিতে বসার প্রতিদ্বন্দ্বীতায় হেরে গিয়েছিলেন। ঋষি সুনক, তখন সাফ জানিয়েছিলেন, ব্রিটেনবাসীকে মিথ্যা স্বপ্ন দেখিয়ে বিভ্রান্ত করা হচ্ছে। মোদ্দা কথা, সুনক মনে করেছিলেন, লিজের এই সব প্রকল্প আসলে জনমোহিনী। এভাবে সরকার চালানো যাবে না। ঋষির ভবিষ্যৎবাণী সত্যি হল। লিজ পদত্যাগ করলেন। তারপরেই ঋষি সুনকের প্রধানমন্ত্রীর চেয়ারে বসার রাস্তাটা পরিষ্কার হয়ে গেল। একই সঙ্গে ভারতীয় ব্যবসায়ীদের মধ্যে বাড়তে শুরু করল আশার পারদ। তার অন্যতম কারণ, ঋষি সুনক ভারতীয় বংশোদ্ভূত। সুতরাং অনেকেই মনে করছেন, ব্রিটেন হয়ত এবার ব্যবসা-বাণিজ্যের সম্পর্ক নিয়ে ভারতের সঙ্গে অনেকটা খোলামেলা কথা বলবে। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, সত্যিই কি ঋষি সুনকের এই প্রধানমন্ত্রীর কুর্সিতে বসা ভারত-ব্রিটেন ব্যবসা-বাণিজ্যের পথ অনেকটা মসৃণ করবে? কি হবে দুই দেশের মুক্ত বাণিজ্য চুক্তির ভবিষ্যৎ?
ঋষি নিজে ভারতের সঙ্গে এই মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি করতে বেশ আশাবাদী। অনেকটা বরিস জনসনের মতন। কিন্তু মনে করলেই যে হবে, রাস্তাটা এতটাও সহজ এবং মসৃণ নয়। কারণ এই চুক্তি হবার জন্য বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে ‘ডেটা লোকালাইজেশন’। এই ডেটা লোকালাইজেশন বিষয়টা কি? ভারতের ইচ্ছে, যে সকল ব্রিটিশ সংস্থাগুলি ভারতে ব্যবসা করতে আসবে, ভারতের জন্য তাদের একটি লোকাল সার্ভার তৈরি করতে হবে। এটা ভারতের তথ্য নিরাপদ রাখার বিষয়। কেন্দ্রীয় সরকারের এই ইচ্ছা পূরণ করতে গেলে বড় অঙ্কের খরচ সামনে দেখছে সংস্থাগুলি। এটা ছাড়াও, ভারত নিয়ে একটি আলটপকা মন্তব্য করেছিলেন সুয়েলা ব্রেভারম্যান। তিনি ভারতীয়দের বিরুদ্ধে ভিসা অপব্যবহারের প্রসং তুলেছিলেন। তিনিই আবার এখন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর পদে। ফলে, এই বিষয়টা স্বাভাবিকাভবেই চিন্তায় ফেলছে কেন্দ্রীয় সরকারকে।
সোজা একটা বিষয়। ঋষি সুনক ভারতীয় বংশোদ্ভূত মানেই ভারতের সঙ্গে ব্রিটেনের বাণিজ্য চুক্তি খুব সহজভাবে হয়ে যাবে, এখনই এমন মনে করার কারণ নেই। তিনি ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী। সুতরাং, আগে ব্রিটেনের স্বার্থ, তারপর ভারতের সঙ্গে ব্যবসা-বাণিজ্যের সম্পর্ক। ফলে, মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে ঋষি নিজেও যদি বেশ আগ্রহী থাকে, তাহলে সেটা দলের অন্যান্য নেতা বা সদস্যরা কীভাবে নেবেন সেটাও ভাবনার বিষয়। আর দ্বিপাক্ষিক ব্যবসা-বাণিজ্যে ভারতকে ছাড় দেওয়া হবে কিনা সেটা বলবে সময়। আপাতত, একটা প্রশ্ন ছুঁড়ে দেওয়া যাক আপনাদের কাছে। ঋষি সুনক প্রধানমন্ত্রী হওয়ায় ভারতের সঙ্গে ব্রিটেনের ব্যবসায়িক সম্পর্ক কতটা মজবুত হবে? আদৌ কি ভারতের ফায়দা হবে? মতামত জানান আমাদের।
বিজনেস প্রাইম নিউজ
জীবন হোক অর্থবহ