Trending
ভেঙে গেল আমেরিকার ৮০ বছরের রেকর্ড
আমেরিকাকে পিছনে ফেলে দিল ভারত
পেন্টাগন এখন সেকেন্ড পজিশনে
সবার প্রথমে এখন এসডিবি
প্রচুর কর্মসংস্থান, তুমুল ব্যবসা, আয়ের জোয়ার
আচ্ছা, এতো গুনগান কিসের বলুন তো? মোদী জমানায় কিই ভারত একের পর এক রেকর্ড তৈরিই করে যাবে? তাতে অবশ্য ভারতের গর্জন। যাই হোক, আসল কথায় আসি। মোদী জমানায় এমন কি হল যে আমেরিকাকে পিছনে ফেলে দিল ভারত? তার জন্য আপনাদের আজ নিয়ে যাব গুজরাতের সুরাটে। সেখানেই এখন রয়েছে সুরাট ডায়মন্ড বুর্স। পৃথিবীর বৃহত্তম অফিস এখন এটাই। যা হিরের মতনই ঝকঝকে, আর হিরের মতনই উজ্জ্বল। কেন বললাম? এতো বড় অফিস নির্মাণ সত্যিই কি লোকদেখানো নাকি রয়েছে বিপুল ব্যবসার ইঙ্গিত? সেদিকেই চোখ বোলানোর জন্য তো আজকের প্রতিবেদন।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর হাত ধরেই উদ্বোধন হয়ে গিয়েছে সুরাট ডায়মন্ড বুর্সের। একেই বলা হচ্ছে, পৃথিবীর বিগেস্ট ওয়ার্কস্পেস। ৬৬ লক্ষ স্কোয়ার ফিট এলাকা জুড়ে বিস্তৃত এই অফিস। যার অন্দরে থাকছে প্রায় ৪ হাজার ২০০টি অফিস স্পেস। আর একেকটি অফিস স্পেসের আয়তন কত জানেন? প্রায় ৩০০ থেকে সাড়ে সাত হাজার স্কোয়ার ফিট পর্যন্ত। থাকছে ৯টা টাওয়ার। প্রত্যেকটা টাওয়ারে থাকবে ১৫টা তলা। এবং প্রত্যেকটি টাওয়ার ইন্টারলিঙ্কড। মানে এক টাওয়ার থেকে অন্য টাওয়ার যাবার প্রয়োজন হলে আর বাইরে বেরনোর দরকার নেই। রয়েছে ১৩১টা লিফট। এই অফিস নির্মাণ করার সময় খেয়াল রাখা হয়েছিল পরিবেশ রক্ষার দিকটাও। যেখানে ব্যবহার করা হয়েছে বিপুল পরিমাণ সৌরশক্তির। সূত্র মারফৎ জানা গিয়েছে, প্রায় ৬৫ হাজার মানুষের কর্মসংস্থান হতে চলেছে এই সুরাট ডায়মন্ড বুর্স। সঙ্গে এই অফিসে রয়েছে নিরাপদ সব সিন্দুক, কনফারেন্স হল, ব্যাঙ্ক, হলঘর আরও কত কী। অফিসের পাশাপাশি কর্মীদের বিনোদনের দিকটাও এড়িয়ে যাওয়া হয়নি। এছাড়া তৈরি করা হয়েছে প্রদর্শনশালা। রাখা হয়েছে প্রদর্শনীক্ষেত্র।
আর এই সুবৃহৎ অফিস্টি নির্মাণ করেছেন কারা জানেন? দিল্লির অন্যতম সুবিশাল আর্কিটেক্ট ফার্ম- মরফোজেনেসিস। এই সুরাট ডায়মন্ড বুর্সের যা আয়তন সেটাই এখন নজর কেড়ে নিয়েছে গোটা বিশ্বের। পেন্টাগনের যে অফিস এতদিন বিশ্বের বৃহত্তম অফিসের তকমা ধরে রেখেছিল, সেটা আপাতত অতীতের খাতায়। কারণ র্যাঙ্কিং-এ এক নম্বরে চলে এসেছে এই সুরাট ডায়মন্ড বুর্স এবং সেকেন্ড পজিশনে চলে এলো পেন্টাগনের অফিস। তবে হঠাৎ করে এমন একটা বড় অফিসের প্রয়োজন পড়ল কেন?
আপনারা সকলেই জানেন যে, ভারত হীরে ব্যবসায় পুরো বিশ্বে কতটা মজবুত। মুম্বই-এর পাশাপাশি গুজরাটে হীরে ব্যবসা এখন ইকোনমির অন্যতম তাস। তাই হীরে ব্যবসাকে গুরুত্ব দেওয়া অনেক আগেই প্রয়োজন ছিল। আর সেটা করার জন্য প্রয়োজন ছিল ছোট, বড় সব ধরণের হীরে ব্যবসায়িদের এক ছাতার তলায় নিয়ে আসা। এসডিবি বা সুরাট ডায়মন্ড বুর্স সেই কাজটাই এখন করবে। কাঁচা হিরের ব্যবসা হোক বা হীরে পালিশ করা- সবটাই এখন হতে চলেছে এই একটি ওয়ার্কস্পেস জায়ান্টের তলাতেই। ফলে অদূর ভবিষ্যতে হীরে ব্যবসার সঙ্গে জড়িত বিভিন্ন ধরণের অফিস এই স্পেসে পুরোপুরি বসতে চলেছে। তালিকায় রয়েছে কী কী? রাফ ডায়মন্ড, পলিশড ডায়মন্ড, হীরে উৎপাদনের মেশিন, সফটওয়্যার, ডায়মন্ড সার্টিফিকেশনের অফিস, ল্যাবে তৈরি হীরের অনেকগুলো ছোট-বড় বা মাঝারি সংস্থা। বলা হচ্ছে, এই অফিসেই থাকবে এখন ২৭টা হীরের গয়না বিক্রয়কারি রিটেল সংস্থার একটি করে আউটলেট। ফলে দেশ বিদেশ থেকে আগ্রহী ক্রেতারা এখন আসতে পারবেন এখানে। কিনে নিতে পারবেন মনের মতন হীরের গয়না।
এখানেই শেষ নয়। মনে করা হচ্ছে, এসডিবি এমপ্লয়মেন্ট জেনারেট করতে চলেছে প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে প্রায় দেড় লক্ষ মানুষের। ব্যবসায়ীদের আসা যাওয়া চলবে ১৭৫টা দেশ থেকে! হীরে ব্যবসার আঁতুড়ঘর হয়ে উঠছে এই এসডিবি। সঙ্গে থাকছে নয়া কর্পোরেট অফিস। সূত্র বলছে, এই অফিস এখন হীরে ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত সকল শিল্পপতিদের জন্য ট্রাম্প কার্ড হতে চলেছে। একইসঙ্গে এটাও জানা যাচ্ছে যে, হীরে রফতানি করার জন্য যে সরকারি ছাড়পত্রের প্রয়োজন পড়ে সেটার জন্য আর দৌড়োদৌড়ি করার প্রয়োজন পড়বে না। বরং পুরোটাই মিলবে এই এসডিবি বা সুরাট ডায়মন্ড বুর্সের অফিস থেকেই।
আপনাদের যদি মহামারির আগের ছবিটা মনে করাই তাহলে দেখতে পাবেন, ২০১৯ সালে ভারতে বেকারত্বের গড় হার ছিল ঐ ৭.৬ শতাংশ মতন। এমন তথ্যই তুলে ধরে সেন্টার ফর মনিটরিং ইন্ডিয়ান ইকোনমি। আর সেই সময় এক ভয়ানক খবর আমাদের সামনে চলে আসে। জানা যায়, গুজরাতের হীরে শিল্প নাকি প্রবল অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়েছিল। হীরে কোম্পানিগুলি একের পর এক কর্মী ছাঁটাই করতে শুরু করে। কমে যায় পালিশ করা হীরের চাহিদা। এক ধাক্কায় কর্ম থেকে ছাঁটাই হন প্রায় ২০ হাজার মানুষ। যা কিছুটা কর্মনাশার আতঙ্কের ছবিটাই তুলে ধরছিল। কারণ আপনারা সকলেই জানেন বোধহয় যে, হীরে পালিশের ৮০ শতাংশ কাজ হয় এই সুরাট থেকেই। সুরাট হীরে ব্যবসার কেন্দ্রবিন্দু ছিল যেখানে কাজ করতেন প্রায় ৮ লক্ষ মানুষ। পালিশ হীরের সবথেকে বড় বাজার হল আমেরিকা। এছাড়াও পালিশ করা হীরের চাহিদা রয়েছে ইউরোপ এবং চিনে। মহামারির প্রকোপে ভারত থেকে এই সকল জায়গায় হীরে রফতানি অনেকটাই কমে যায়। কিন্তু পরিস্থিতির বদল হল ধীরে ধীরে। এবং ভারত যে হীরে ব্যবসার মাধ্যমে নিজের ইকোনমিতে সামান্য টাল খেতেও দিল না সেটাও যেন আরেকবার প্রমাণিত হয়ে গেলো। ২০২২ সালের একটা তথ্য থেকে জানা যাচ্ছে, হীরে রফতানিতে ভারত পৌঁছে যায় এক নম্বরে। স্রেফ হীরে রফতানি করেই ভারত আয় করেছে ২০২২ সালে প্রায় ২৩.৯ বিলিয়ন ডলার। পিছনে ফেলে দিয়েছে আমেরিকাকে। হীরে রফতানি করে তাদের আয় ১৮ বিলিয়ন ডলারের আশেপাশে।
অতএব বুঝতেই পারছেন যে, ইন্ডিয়ান ইকোনমিতে হীরে ঠিক কতটা কন্ট্রিবিউট করে। সেদিক থেকে দেখতে গেলে, রফতানিতে এক নম্বরে আবার হীরে রফতানি করে ইনকামেও এক নম্বরে। দিনের শেষে সেই হীরের জন্য এক নম্বর অফিস না হলে চলে বলুন দেখি? আজকের প্রতিবেদন এখানেই শেষ করছি। আপনাদের মতামত জানান কমেন্ট বক্সে। সঙ্গে লাইক করুন, শেয়ার করুন। আর নতুন হলে সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের চ্যানেল বিজনেস প্রাইম নিউজ।
জীবন হোক অর্থবহ