Trending

তাহলে কি এবার হতে চলেছে মোদী ৩.০? নির্বাচন শেষের পর এজগিট পোলের যে সমীক্ষা দেখা যাচ্ছে তাতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ফিরছেন আবার। অন্যদিকে ঢাকঢোল পিটিয়েও মোদীর সামনে দাঁড়াতে পারছে না কংগ্রেস সমর্থিত ইন্ডি জোট। জন-কী-বাত, অ্যাক্সিস মাই ইন্ডিয়া, টুডেজ চাণক্য, সি ভোটারের মত মোট ১০টি সংস্থা যারা এগজিট পোল করেছে সেখান থেকে আবার পরিষ্কার হল মোদী ফিরছেন। কারণ পুরোটা যদি আমরা অ্যাভারেজ করি তাহলে দেখতে পাব বিজেপি সমর্থিত এনডিএ এবারে ৩৬০ এর মত আসন পাচ্ছে। অন্যদিকে কংগ্রেস সমর্থিত এনডিএ পেতে চলেছে ১২৩ থেকে ১২৫ মত। জয়ের জন্য দরকার ২৭২টা সিট। তার মানে আমরা যা দেখতে পাচ্ছি, যত যাই হয়ে যাক ১০ বছর পরেও মোদী ক্যারিশ্মা একই থাকছে। বরং কিছু কিছু ক্ষেত্রে বাড়ছে। অন্যদিকে ইস্তাহার প্রকাশ করে কোনভাবেই কংগ্রেস পারছে না বিজেপিকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিতে। তাহলে কেন?
প্রথমেই বলি ভোটকুশলী প্রশান্ত কিশোর কি বলছেন? পিকে আগেও ইন্টারভিউতে বলে দিয়েছেন এবারে কংগ্রেস সেভাবে কোন দাগ ফোটাতে পারবে না। বরং বিজেপি একের পর এক ক্লিন সুইপ করবে। কংগ্রেসের আসন কিছুটা হলেও কমতে পারে তবে বিজেপির আসন যা ছিল তার আশেপাশে তো থাকবেই আবার বাড়ার সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে। তার কারণ কী? পিকে বলছেন, মোদী যেভাবে নির্বাচন লড়ার জন্য সুন্দর করে ঘুঁটি সাজিয়েছেন, সেটা কংগ্রেসের কোন মাথাই করতে পারেন নি। কিরকম? পিকে মনে করেন নির্বাচনে জেতার জন্য যে কর্মসূচি নেওয়া হয় সেটা নির্ভর করে টাইম ম্যানেজমেন্টের উপর। বিজেপি প্রথম থেকেই অ্যাগ্রেসিভ খেলেছে। সঙ্গে মাঠে ময়দানে নেমে কাজ করেছে। এদিকে কংগ্রেস সমর্থিত ইন্ডি জোট সেভাবে সময়কে ব্যবহার করতে পারে নি। মানে যখন মাঠে নামার কথা ছিল তখন বৈঠক করেছে আর যখন বৈঠক করার কথা তখন মাঠে নেমেছে। স্বাভাবিকভাবেই কংগ্রেস প্রথম কথা এই পলিটিকাল কর্মসূচির গেমে বিজেপির কাছে হেরে গেছে। এটা ছাড়া এনডিএ জোট জেতার আরেকটা বড় কারণ হল, মোদী প্রথম থেকেই বলে এসেছেন ৪০০ পার। ভারত এতো বড় দেশ, সেখানে এতো বৈচিত্র, এমন দেশে ৪০০ পার সংখ্যাটা পেরনো অসম্ভব। কিন্তু মোদীর এই কথা ধীরে ধীরে দেশের সর্বত্র এমনই ছড়িয়ে পড়ে যে তখন বিজেপির সঙ্গে কংগ্রেসের যুদ্ধটা হার-জিতের বাইরে বেরিয়ে গিয়েছে। মানে মানুষের মাইন্ডসেটে ঢুকেছে যে বিজেপি ৪০০ পেরবে কিনা এটাই চ্যালেঞ্জ। মানে নির্বাচনী লড়াই বিজেপি ৪০০ পার বনাম কংগ্রেসের আসন সংখ্যা। মোদ্দা কথা পিকে মনে করেন, সাধারণ মানুষের মনে মোদী সম্পর্কে এখনো এমন কোন জনরোষ তৈরিই হয় নি যে দেশবাসী একেবারে বাধ্য হয়ে মোদীর বিকল্প খুঁজবেন। বরং মোদীর ক্যারিশ্মার কাছে এখনো কিছুটা ফিকে কংগ্রেস। এবার আসি পরের কথায়।
উত্তর ভারতরের অধিকাংশটাই বিজেপি বেল্ট। পশ্চিম ভারতের রাজস্থান, গুজরাত যদি ধরি সেখানেও বিজেপির স্ট্রং হোল্ড রয়েছে। বিজেপির উইক স্টেটগুলোর মধ্যে রয়েছে দক্ষিণ এবং পূর্বের রাজ্যগুলো। কিন্তু বিজেপি এবারে যে মাস্টারস্ট্রোক খেলেছে তারপর অনেকেই যে মনে করেছিলেন বিজেপি হয়ত ৮০ থেকে ৮২টি আসন হারাতে পারে, তার জন্য প্ল্যান বি তাদের তৈরিই ছিল। আমরা যদি পশ্চিমবঙ্গের দিকে তাকাই তাহলে দেখব, আজ থেকে কয়েক বছর আগে পর্যন্ত যেখানে বিজেপির অস্তিত্ব সেভাবে ছিলই না, আজ সেখানে বিজেপি সেকেন্ড লারজেস্ট পার্টি হিসেবে এগিয়ে এসেছে। পিকে তো অনুমান করেছেন যে এবারে হয়ত বিজেপি লিড করতেও পারে। পিছিয়ে পড়তে পারে টিএমসি। অন্যদিকে যদি সাউথের কথা দেখি তাহলে দেখব সেখানে বিজেপি যথেষ্ট দুর্বল ছিল। কিন্তু এবারের নির্বাচন বলছে, মোদী ঠিক করেছিলেন সেখানে অল্প অল্প করে হলেও আসন সংখ্যা বাড়াবেন। কর্ণাটকে যেমন জোড় টক্কর চলবে তেমনই কেরলে বিজেপি হয়ত ১ থেকে ২টি আসন পেতে পারেও বলে মনে করা হচ্ছে। তেমনই তেলেঙ্গানাতে এনডিএ-তে এগজিট পোল অনুযায়ী পেতে পারে ১১ থেকে ১২টা সিট। অন্ধ্রপ্রদেশে আসতে পারে ১৯-২২টা সিট। এমনকি যদি উড়িষ্যার দিকেও তাকাই বিজেপির সঙ্গে বিজেডির তু তু মে মে সম্পর্ক থাকলেও দিনে দিনে বিজেপির আগ্রাসী মনোভাব এখানেও অক্ষুণ্ণ থেকেছে। পোলের হিসেব বলছে বিজেপি এখানেও পাবে ১৮টি আসন। মানেটা কি দাঁড়াল? যেখানে যেখানে বিজেপির সিট কমছে মজবুত বেল্ট থেকে, সেখানে ঐ শূন্যতা পূরণ করতে চলেছে বিজেপি।
এদিকে দেখুন, নর্থ বেল্টের কথা যদি ধরি, হরিয়ানাতে বিজেপির আসন সংখ্যা খানিক হলেও কমতে পারে কৃষকদের বিক্ষোভ রয়েছে। উত্তরপ্রদেশে রাম মন্দির এফেক্ট থাকলেও সেখানে অখিলেশ যাদবের জন্য কিছুটা হলেও আসন সংখ্যা কমতে পারে। আবার রাজস্থানে গেলবারের মত ক্লিন সুইপ করাটাও চাপ রয়েছে। হেমন্ত সোরেনকে জেলবন্দি করার জন্য আদিবাসী ভোটে প্রভাব পড়লেও সেটা ওভারঅল বিশেষ কিছু হবে না। কারণ এখানেও মোদীর খেল একটু অন্যরম ভাবেই ধরা দিচ্ছে। ঐ যে বললাম, নর্থ বেল্ট বিজেপির স্ট্রং আঁতুড়ঘর। অন্যদিকে ওয়েস্টার্ন বেল্টে বিজেপির প্রভাব অক্ষুণ্ণ। এদিকে সাউথে তো বিজেপি খাতা খুলছেই। আর পিকে বলছেন, বাংলায় এক নম্বরে যেতে চলেছে বিজেপি। ফলে বিজেপি আসছে এই বিষয়টা কার্যত নিশ্চিত হয়ে গেছে। পলিটিকাল এক্সপার্টরা বলছেন, এবার মোদী যে কন্যাকুমারী ভিজিট করে ধ্যান করলেন এগুলো আসলে মেরুকরণের একটা অস্ত্র হিসেবে দেখাতে চেয়েছে বিরোধী ইন্ডি জোট। কিন্তু মোদীর এই ধ্যান হিন্দু ভোটারদের মধ্যে আরও আস্থা বাড়িয়েছে। ফলে একেবারে শেষ দফা নির্বাচনের আগে মোদীর ধ্যান আসলে হিন্দুদের ভাবাবেগ আরও খানিক্টা উসকে দিতে সাহায্য করেছে। আবার অনেকে এটাও বলছেন যে, মোদী যেভাবে ইন্টারন্যাশনালি ইন্ডিয়াকে রিপ্রেজেন্ট করছে, তারপর এবার হয়ত বিশ্বগুরু হবেই। ফলে সব মিলিয়ে দেখা যাচ্ছে মোদীর কামব্যাক কার্যত নিশ্চিত হয়ে গেল এবারের লোকসভা নির্বাচনে। খেয়াল রাখবেন, পৃথিবীর সবথেকে ব্যয়বহুল নির্বাচন হল আমাদের। এই নির্বাচনে কংগ্রেস সমর্থিত ইন্ডি জোট সেভাবে মনে দাগ কাটার মত কিছু নাও করতে পারে। অন্যদিকে তৃতীয়বারের জন্য দেশের প্রধানমন্ত্রীর মসনদে বসে পড়তে চলেছেন নরেন্দ্র মোদী। যার পিছনে কাজ করেছে মোদীর একের পর এক মাস্টারস্ট্রোক যা ইন্ডি জোট এবং সর্বপরি কংগ্রেসকে সেভাবে দানা বাঁধতে দেয় নি। তবে হ্যাঁ, একটা কথা আপনাদের বলে রাখি। এই এজগিট পোলের সমীক্ষা সবসময় যে মেলে এমনটা কিন্তু নয়। তবে কি জানেন তো, যাহা রটে তাহার কিছুটা তো ঘটে। আর কি ঘটবে তার ইঙ্গিত পিকে দিয়েছেন। পিকের সঙ্গে কিছুটা হলেও মিলেছে এগজিট পোলের সমীক্ষা। সেখান থেকেই মনে করা হচ্ছে যে, মোদীর ৪০০ পারের স্বপ্নপূরণ না হলেও কামব্যাক হচ্ছে। মানে শুধু ভারত বলে নয় গোটা পৃথিবী দেখতে চলেছে মোদী ৩.০। আপনাদের কি মনে হয় জানান কমেন্ট বক্সে। সঙ্গে দেখতে থাকুন আমাদের চ্যানেল বিজনেস প্রাইম নিউজ।
জীবন হোক অর্থবহ