Trending
একটা সময় ছিল, যখন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ঘনঘন বিদেশ সফর নিয়ে বহু ব্যাঙ্গোক্তি করেছিলেন বিরোধী শিবিরের নেতারা। এমনকি সাধারণ মানুষের মনেও এই প্রশ্ন তৈরি হয়েছিল যে হপ্তায়, হপ্তায় এতো বিদেশ ঘোরা কেন? সেই সময় চুপ ছিল শাসক শিবির। আর আজ কিছুটা হলেও বোঝা যাচ্ছে, বিদেশ ভ্রমণ করে মোদী সরকার ইন্ডিয়ান ইকোনমিক সিস্টেমকে কতটা জোরদার করতে চান। তারই রিসেন্ট এগজ্যাম্পল মোদীর ফ্রান্স সফর। সত্যি বলতে কি এবারের ফ্রান্স যাত্রা মোদীর জন্য একটু স্পেশ্যাল হল তো বটেই। কিন্তু কেন? এই নিয়েই শুরু করা যাক আজকের প্রতিবেদন।
মোদীকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাঁকর। সেটা বাস্তিল ডে উদযাপনের জন্য। ভারত এবং ফ্রান্সের মধ্যে যে গভীর বাণিজ্যিক সম্পর্ক রয়েছে, সেটাও মনে করিয়ে দিতে মোদীকে ফ্রান্স সফরের আহ্বান দিয়েছিলেন ফরাসি প্রেসিডেন্ট। এখানেই বলে রাখি, ফরাসি সরকার এই নিয়ে দুবার ভারতের প্রধানমন্ত্রীকে ঐ বিশেষ দিনে আমন্ত্রণ জানায়। এর আগে ২০০৯ সালে ফ্রান্স সফর করেছিলেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং। তবে এমনি এমনি তো আর মোদী বিদেশ সফর করে এলেন না। বিদেশ ভ্রমণ মানে শুধু ঘুরতে যাওয়া নয়। রাষ্ট্রনেতাদের মাথা এক হলে সেটা ভবিষ্যতের জন্য ট্রুথফুল কিছু রেজাল্ট দেয়ই। তাই এবারের ফ্রান্স যাত্রা মোদীর জন্য একটু স্পেশ্যাল তো হলই।
ভারত এবং ফ্রান্সের মধ্যে প্রতিরক্ষা বিষয়ক আলোচনা তো সারা হলই। তবে একইসঙ্গে আলোচনা হল আরও বেশ কয়েকটি বিষয় নিয়ে। তার মধ্যে অন্যতম ডিজিটাল ইকোনমি। হ্যাঁ, ঠিকই শুনেছেন। এবার থেকে ফ্রান্সেও আপনি ব্যবহার করতে পারবেন ইউপিআই। আইফেল টাওয়ারেও পে করা যাবে ইউপিআই ব্যবহার করে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের মধ্যে ফ্রান্স সর্বপ্রথম দেশ, যে ভারতের ইউপিআই সিস্টেমে ভালোরকম আগ্রহ দেখায়। সত্যি বলতে কী, ফ্রান্সে ইউপিআই সিস্টেম চালু নিয়ে বেশ কিছুদিন ধরেই জল্পনা চলছিল। কারণ গোটা বিশ্বে কার্যত হুলুস্থুলু মেতে যায়, যখন ইউপিআই সিস্টেমকে নিজের দেশে কার্যকর করতে আগ্রহ দেখায় ফ্রান্স। এর আগে অবশ্য ইউপিআই ন্যাশনাল লেভেলেই আটকে থাকেনি। ইন্টারন্যাশনাল ফিল্ডে ইউপিআই বেশ সফল। ইউএই, সিঙ্গাপুর, নেপাল এবং ভুটানে ইউপিআই সিস্টেম পুরোপুরি কার্যকর হয়েছিল। এবার পালা ফ্রান্সের। ফ্রান্সের সঙ্গে ইউপিআই-এর মাধ্যমে ডিজিটাল লেনদেন হলে সেটা দুই দেশের বাণিজ্যের চাকা সচল রাখবে আরও বেশি। ২০২৩ সালের একটি রিপোর্ট বলছে, ফ্রান্সে বসবাসকারী ভারতীয়র সংখ্যা ১.২০ লাখ। এই তথ্যটি প্রকাশ পায় চলতি বছর মানে ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে। অর্থাৎ ফ্রান্সের রাজি হওয়াটা যেন ইউপিআই সিস্টেমকে আরও বেশি জনপ্রিয় করতে সাহায্য করল।
এছাড়াও উচ্চশিক্ষার জন্য যে সমস্ত ভারতীয় পড়ুয়ারা ফ্রান্সের উদ্দেশ্যে রওনা দেন, তাদের জন্যেও ভিসা নিয়ে বড় ঘোষণা সারলেন তিনি। আগে ফ্রান্সে যারা পোস্ট গ্র্যাজুইয়েশনের কোর্স করতে আসতেন তাদের জন্য দু’বছরের ভিসা বরাদ্দ করা হত। কিন্তু দেখা গিয়েছিক্ল, অনেকেই এই লিমিটেড সময়ের মধ্যে কোর্স শেষ করতে পারছিলেন না। পড়াশোনায় বিঘ্ন ঘটছিল। ভারতীয় পড়ুয়াদের সমস্যার কথা বিবেচনা করেই ২ বছর থেকে বাড়িয়ে ভিসার মেয়াদ ৫ বছরের করার সিদ্ধান্ত ঘোষণা করলেন প্রধানমন্ত্রী।
মনে করা হচ্ছে, ডিজিটাল পেমেন্ট সার্ভিস ইউপিআই চালু হলে সেটা ফরাসি এবং ভারতীয় ব্যবসায়ীদের হ্যাপা একেবারে শূন্যে এনে ঠেকাবে। ভারতকে বিশ্বের সাপ্লাই চেন হিসেবে দেখাতে চাইছে ফ্রান্স। তাই মোদী ইনফ্লুয়েন্সকে কাজে লাগিয়ে আবারও ঘুরে দাঁড়াতে চায় ফরাসি গভর্নমেন্ট। এখানেই একটা ইনফরমেশন দিয়ে রাখি। ফরাসি সরকার এবং ভারত সরকারের মধ্যে ব্যবসা-বাণিজ্যের পরিমাণ আগের থেকে অনেকটাই বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০১৪ সালে দুই দেশের মধ্যে যেখানে বাণিজ্যের পরিমাণ ছিল ৭ বিলিয়ন ইউরো মতন, সেখানে এই কয়েকবছরের মধ্যে দুই দেশের বাণিজ্যের পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়েছে দ্বিগুণ। আর দুই দেশের বিজনেস স্টেবিলিটি এতটাই মজবুত যে আগামীতে বাণিজ্যের অঙ্ক আরও অনেকটা বাড়তে পারে।
এখানেই বলে রাখি, ক্যাপজিমিনির কথা। ক্যাপজিমিনি একটি আইটি জায়ান্ট সংস্থা। ভারতের বহু আইটি কর্মী ক্যাপজিনিমিনির আন্ডারে কাজ করেন। শুধুমাত্র ভারতেই ক্যাপজিমিনিতে বর্তমান কর্মীর সংখ্যা প্রায় ২ লাখ। স্বাভাবিকভাবেই, পরিকাঠামো বৃদ্ধিতে এই দুটো দেশ তথা ভারত এবং ফ্রান্স যৌথভাবে কাজ করবে। মনে করা হচ্ছে, ভারতে যে সকল কর্মী ক্যাপজিমিনির হয়ে কাজ করছেন সেখানে তৈরি করা হবে ৬জি ল্যাব। আর সবশেষে ডিফেন্স ডিল। দেখুন ভারত ইতিমধ্যেই ৩৬টি রাফায়েল বিমান কিনে নিয়েছে। আর সেটা ব্যবহার করছে ইন্ডিয়ান এয়ারফোর্স। এবারের প্ল্যান আরও ২৬টা। কিন্তু এবারের রাফায়েল বিমান হতে চলেছে আগের থেকে কিছুটা আলাদা। কারণ এই রাফায়েল বিমান ব্যবহার করবে ইন্ডিয়ান নেভি। যার পোশাকি নাম হল রাফায়েল-এম। এম অর্থাৎ মেরিন। সাগরের বুকেই এদের ওঠানামা চলবে। অত্যন্ত আধুনিক এই রাফায়েল বিমান জাহাজ এবং ডুবোজাহাজকে নিখুঁত লক্ষ্যে আঘাত আনতে ওস্তাদ।
সহজ কথায় প্রযুক্তির আদান-প্রদান, প্রতিরক্ষা খাতে নিজেদের শক্তিবৃদ্ধি, ডিজিটাল ইকোনমি, দুই দেশের বাণিজ্যে গতি এই সবকিছুই যেন ফ্রান্স সফরে গিয়ে একেবারে ঠিক করে এলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। সেদিক থেকে দেখতে গেলে, মোদীর বিদেশ ভ্রমণ নিয়ে যতই কাদা ছোঁড়াছুঁড়ি হোক না কেন দিনের শেষে দেশের স্বার্থে মোদীর এই ঘনঘন বিদেশ সফর আসলে সত্যিই ভারতের কর্তৃত্বকে আরও বৃহৎভাবে বিশ্ব মানচিত্রে দেখানোর একটা প্রয়াস বলা যেতেই পারে। আপনার কি মনে হয়, ফ্রান্স সফর কি আদৌ ভারতের জন্য ভবিষ্যতে নতুন কোন দিক খুলে দেবে?
বিজনেস প্রাইম নিউজ।
জীবন হোক অর্থবহ