Trending
ইটের বদলে পাটকেল তো খেতে হবেই
কাতারকে মোক্ষম জবাব নয়া দিল্লির
কাতারের ষড়যন্ত্র ভারতের কূটনীতির চাপে ধরাশায়ী
কাতার এখন ভুগছে, নয়া দিল্লি হাসছে
২০ বিলিয়ন ডলারের ইনভেস্টমেন্ট এবার কাতার থেকে হাওয়া হয়ে যাবে
কাতার কি তাহলে পড়বে ফাঁপরে?
কী এমন পরিস্থিতি তৈরি হল যে ভারত এবং কাতারের মধ্যে শুরু হয়েছে ঠাণ্ডা যুদ্ধ?
আজকের প্রতিবেদনে সেটাই বলব
ভারতের সঙ্গে কাতারের সম্পর্ক বেশ ভালোই ছিল। দুই দেশের মধ্যেকার ব্যবসা-বাণিজ্যের ছবিটাও ছিল বেশ স্পষ্ট। কাতারে বিলিয়ন ডলারের ইনভেস্টমেন্ট করে ভারত। কাতারে কাজ করেন এমন প্রবাসী ভারতীয়র সংখ্যাও কম নয়। কাতারে প্রায় ৬ লক্ষ ৯১ হাজার ভারতীয় বসবাস করেন। মধ্যপ্রাচ্যের সঙ্গে ভারতকে সুসম্পর্ক বজায় রেখে চলতেই হয়। এক ব্যবসা-বাণিজ্য এবং দুই জিও পলিটিক্স। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে আমরা ছবিটা একেবারে অন্যরকম দেখছি। কীরকম? কাতার এক অপ্রত্যাশিত চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিল ভারতের কাছে। সেটা সত্যি প্রমাণ করার আপ্রান চেষ্টাও করছে কাতার সরকার। আর কাতার যদি বিষয়টা ভারতের বিপক্ষে দারুণভাবে খেলে দিতে পারে তাহলে ভারতের মুখ পুড়বেই। হয়েছে কী? কাতার সরকার হঠাৎ ভারতের প্রাক্তন ৮ নৌ-সেনাকে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দিয়েছে। কাতারের এই পদক্ষেপ আচমকা। স্বাভাবিকভাবেই হঠাৎ এমন একটা সিদ্ধান্ত নেবার কারণ কী? অভিযোগ- তারা ভারতীয় হয়েও ইজরায়েলের হয়ে চরবৃত্তি করছিল। কাতারের সেই অভিযোগ যেন নতুন করে ঘি ঢালল আগুনে। তারপরেই কূটনৈতিক চাল দিল ভারত সরকার। সেটা আর্থিকভাবে কাতারকে বড়সড় চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলতে পারে। কিরকম- সেটা বলছি।
ইজরায়েল এবং প্যালেস্তাইনের যুদ্ধ শুরুর পর ভারত হামাসের পাশে দাঁড়ায় নি। বরং ইজরায়েলের সমব্যথী হয়েছিল। সেটা মুসলিম দেশগুলো খুব একটা ভালো নজরে দেখে নি, বোঝাও যায়। তবে সেই গুঞ্জনে জল ঢালবার জন্য ভারত ইতিবাচক কিছু পদক্ষেপ নেয়। তার মধ্যে অন্যতমঃ বিধ্বস্ত গাজায় সাহায্য পাঠানো, প্যালেস্তাইন সরকারের সঙ্গে কথা বলা, ইরান সরকারের সঙ্গে মোদীর কথোপকথন। এই সবই দেখেছে বিশ্ব। ভারত বারবার বলে এসেছে, দুই দেশের মধ্যে যুদ্ধ মেটানোর একমাত্র অস্ত্র দুই দেশের মধ্যে শান্তিপূর্ণ চুক্তি এবং কথোপকথন। কিন্তু মোদী ম্যাজিক মুসলিম দেশগুলো সেভাবে কাজে না লাগিয়ে বরং কিছুটা রুষ্ট হয়। তবে ভারতের কূটনীতি সেই রাগ প্রশমনে অনেকটা সাহায্য করলেও কাতার কিন্তু কোনভাবেই রাজি হয় নি। অভিজ্ঞ রাজনীতি বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, কাতার চেয়েছে ভারতকে কিছুটা প্যাঁচে ফেলতে। আর যে কারণেই এমন এক হঠকারী সিদ্ধান্ত দেশটা নিয়ে নেয়। কানাডার প্রধানমন্ত্রী ট্রুডো যেমন আকস্মিক একটা ব্লেম দিয়ে নিজের মুখ দেশের মুখ পুড়িয়েছে, তেমনই কিছুটা কাতার করল। তবে কাতার সরকার অনেক বেশি পরিণত। তাই মুখ পোড়ানোর কাজটি তারা এখনো পর্যন্ত করেনি। আর সেটাকেই লক্ষ্য করে ভারতকে নাস্তানাবুদ করতে চাইছে কাতার। তারই এফেক্ট এই ৮ ভারতীয় প্রাক্তন নৌ-সেনা।
ভারত কাতারের ওপর কোন কোন সেক্টরে অত্যন্ত নির্ভরশীল? একঃ তরলীকৃত এলএনজি এবং সিএনজি গ্যাস। কাতারের কাছ থেকে আমদানি করে ভারত। অঙ্কটা কিন্তু একেবারেই ফেলে দেবার মত নয়। কাতার এবং ভারতের মধ্যে বাণিজ্যিক সম্পর্ক মজবুত থাকার এটাই একমাত্র কারণ। ভারত বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার খরচ করে কাতার থেকে এই গ্যাস কিনছে। কিন্তু যা খেল কাতার দেখাল, তারপর প্রশ্ন উঠেছিল, এই চ্যালেঞ্জ কিভাবে অ্যাকসেপ্ট করবে ভারত? আদৌ কি ঐ প্রাক্তন সেনাবাহিনীদের বাঁচানো সম্ভব? ইটের বদলে তাই পাটকেল দিল ভারত। হাতে নয়, বরং ভাতে মারার চেষ্টা করছে কেন্দ্রীয় সরকার। সেটা হল ব্যবসা গোটানোর প্রক্রিয়া। আর এটা হলে কাতার কিন্তু আর্থিকভাবে ভালোরকম ক্ষতির মুখে পড়বে। কিন্তু কাতার যদি ক্ষতির মুখে পড়ে তাহলে সেদিক থেকে তো ভারতের ক্ষতিও কম হবে না। আভ্যন্তরীণ বাজারকে সচল রাখতে কেন্দ্র তাই বিকল্প ব্যবস্থা খুঁজছে। পেয়ে গেছে দুটো দেশ। পূর্ব আফ্রিকার মোজাম্বিক, দক্ষিণ আমেরিকার ভেনেজুয়েলা। এই দুটো দেশেই রয়েছে প্রাকৃতিক গ্যাসের ভাণ্ডার। বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর এবং তেলমন্ত্রী হরদীপ সিং পুরী দুজনেই দুটো দেশ ভিজিট করেছেন। সেখানে গ্যাসের মজুদ কতটা এবং আদৌ কিভাবে সেটা ভারতে নিয়ে আসা সম্ভব তার তুল্যমূল্য বিচার করেছেন। মনে করা হচ্ছে, পরিস্থিতি যেদিকে এগোচ্ছে তারপর হয়ত কাতার থেকে ২০ বিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগ সরিয়ে সেটা সটান ফেলা হবে মোজাম্বিকে। মোজাম্বিকের নর্দার্ন কাবো ডেলকাডো প্রদেশে একএনজি প্রোজেক্ট চালু করতে চলেছে ভারত। সেখানেই বিনিয়োগ করা হবে ২০ বিলিয়ন ডলার। এখানে ভারতের তিনটে পিএসইউ-র ৩০% করে ভাগ রয়েছে।
ভেনেজুয়েলার ওপর এতদিন মার্কিন মুলুকের নিষেধাজ্ঞা ছিল। নিষেধাজ্ঞা চাপিয়ে ছিল তৎকালীন ট্রাম্প সরকার ২০১৮ সালে। ঐ বছর ভেনেজুয়েলার নির্বাচনকে অবৈধ বলেছিলেন প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তারপরেই দেশটার অর্থনীতি কার্যত মুখ থুবড়ে পড়ে যায়। ভেনেজুয়েলা বিশ্বের মধ্যে অন্যতম বৃহৎ তেলের ভাণ্ডার। বিশ্বে তেলের মূল্যবৃদ্ধির পিছনে এটাও কাজ করেছে বলা যায়। তবে পরিস্থিতি এখন স্বাভাবিক হতে চলেছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র শিথিল করেছে নিষেধাজ্ঞা। তারপরেই ভেনেজুয়েলার দিকে ঝুঁকেছে নয়া দিল্লি। মনে করা হচ্ছে, এই দুটো দেশের উপর ভারত যদি বিনিয়োগ করে তাহলে এনার্জি সেক্টরে আর পিছন দিরে তাকাতে হবে না ভারতকে।
এখানেই বলি, ভারতের এই সিদ্ধান্ত কার্যত বুমেরাং হয়ে ফিরে এলো কাতারের কাছে। কারণ কাতার যা ভেবেছিল হল একেবারে বিপরীত। ভারত বেশ কিছু দিন ধরেই কাতারের বিকল্প খোঁজার চেষ্টা করছিল। মনে করা হচ্ছে, আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়তে হবে এই ভয়ে কাতার সরকার ভারতকে কাশ্মীর ইস্যু হোক বা প্রাক্তন নৌ-সেনার মৃত্যুদণ্ডের আদেশ- এই সব কিছুকেই হাতিয়ার করেছে। কেন্দ্রীয় সরকারের তরফ থেকে জানানো হয়েছে, এই বিশাল অঙ্কের ইনভেস্টমেন্ট সরিয়ে দিয়ে কাতারকে একটা মোক্ষম প্যাঁচে ফেলে দিয়েছে নয়া দিল্লি। একইসঙ্গে চলছে নৌ-বাহিনীদের এই কঠিন সাজার হাত থেকে বের করে আনার প্রক্রিয়া। আপনারা কি মনে করেন, কাতার সরকার কি আদৌ ভারতের এই পদক্ষেপে কিছুটা দুশ্চিন্তার মধ্যে পড়বে? প্রাক্তন নৌ-সেনা কর্মীদের বাঁচাতে পারবে ভারত? মতামত জানান কমেন্ট বক্সে। সঙ্গে লাইক করুন, শেয়ার করুন আর নতুন হলে সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের চ্যানেল বিজনেস প্রাইম নিউজ।
জীবন হোক অর্থবহ