Trending
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী অ্যাটেন্ড করেছেন অম্বানি পুত্রের বিয়েতে। আশীর্বাদ করেছেন নবদম্পতিকে। গুরুজন হিসেবে যা তিনি করেছেন, সেই নিয়ে কারুর কিছু বলার নেই। কংগ্রেস আলাদা করে মোদীকে এই নিয়ে আক্রমণ করে নি। কিন্তু মোদী বিবাহ ছাড়াও এমন একটি কথা মহারাষ্ট্রে দাঁড়িয়ে বললেন যা শুনে অনেকেই হতবাক। আর সেটা কতটা সত্যি, সেই নিয়েও কাটছে না ধোঁয়াশা। বরং অনেকেই বলছেন, মোদী যা বলছেন সেটা কর্মক্ষম যুবক-যুবতীরা কি আদৌ দেখতে পাচ্ছেন? কোথা থেকে হল? কোথায়ই বা হচ্ছে? কেন মোদী শাক দিয়ে মাছ ঢাকার চেষ্টা করছেন এবার?
মহারাষ্ট্রে গিয়ে ২৯ হাজার ৪০০ কোটি টাকার বিভিন্ন ডেভেলপমেন্ট প্রোজেক্টের উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। আর সেখানেই তিনি একটা দাবি করে বসেছেন। যা শুনে অনেক আমনাগরিক হতবাক। মোদী বলেছেন যে দেশের যুবশক্তিকে গত তিন বছরে যা চাকরি দেওয়া হয়েছে তা মিথ্যেবাদীদের মুখ বন্ধ করে দেবার জন্য যথেষ্ট। তাহলে অকস্মাৎ এমন চাকরি নিয়ে বড়সড় দাবির কারণটা কী? দেশের অর্থনীতি মোদী জমানায় লাফিয়ে লাফিয়ে এগোচ্ছে। অর্থনীতির বহরে ভারত এখন পাঁচে। সেটাকে তিনে নিয়ে যাবার প্ল্যান প্রোগ্রাম রয়েছে মোদী সরকারের। তাঁরা মনে করছেন, এই পাঁচ বছরে ভারতের অর্থনীতিকে টেনে তিনে নিয়ে যাবেন তাঁরা। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে সিটিগ্রুপ এমন একটা তথ্য দিয়েছে যা বিজেপি শিবিরকে অস্বস্তিতে ফেলেছে, মোদীর মুখ পুড়েছে আর বিরোধীরা হাতে মোক্ষম অস্ত্র পেয়ে গিয়েছে। কি সেই ত্রিফলা অস্ত্র? বেকারত্ব। সিটি গ্রুপ একটি সমীক্ষা করে দাবি করেছে যে, ভারত অর্থনীতিতে ৭ শতাংশ বৃদ্ধি লক্ষ্য করলেও কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করাটা বেশ চ্যালেঞ্জিং। সিটি গ্রুপ জানিয়েছে যদি বেকারত্বকে নির্মূল করতে হয় তাহলে চাকরির প্রয়োজন রয়েছে। কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে ১০ লক্ষ শূন্যপদ পূরণের পরামর্শ তারা দিয়েছে। এমন একটা রিপোর্ট সর্বসমক্ষে চলে আসতেই কার্যত রে রে করে উঠেছে বিরোধীরা। তাদের বক্তব্য, মোদী যেভাবেই হোক না কেন বেকারত্ব দূরীকরণে একেবারে ব্যর্থ। এবার সেই সিটি গ্রুপের জবাব দিয়েছে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া এবং কেন্দ্রীয় শ্রমমন্ত্রক। যেটা স্বয়ং মোদীকে অন্তত শাক দিয়ে মাছ ঢাকার বন্দোবস্ত কিছুটা হলেও করে দিয়েছে। কেন বললাম?
প্রথমেই বলি রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়ার কথা। দেশের শীর্ষ ব্যাঙ্ক যে নতুন পরিসংখ্যান প্রকাশ করেছে, সেখানে বলা হচ্ছে গত অর্থবর্ষে ভারতে ৪.৭ কোটি নতুন কর্মসংস্থান তৈরি হয়েছে। কিরকম? ২০২৩ সালের শেষের দিকে দেশে কর্মরত মানুষের সংখ্যাটা ছিল প্রায় ৫৯.৬৭ কোটি। ২০২৪-এর মার্চ মাসের শেষের দিকে সেই অঙ্কটা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬৪.৩৩ কোটি-তে। অর্থাৎ ১ বছরে কর্মসংস্থান বৃদ্ধি পেয়েছে ৬ শতাংশ মতন। অর্থাৎ দেশে বেকারত্ব যে দারুণভাবে ফুঁসছে সেই কথাটা একেবারে সত্যি না হলেও আংশিক সত্য। বিজেপি মুখরক্ষা করার জন্য সেটাকে হাতিয়ার করেছে। তারপর অবশ্য বিজেপির কাটা দাগে আরও কিছুটা মলম লাগিয়ে দিয়েছে কেন্দ্রীয় শ্রমমন্ত্রক। সেখান থেকে বলা হয়েছে, সিটি গ্রুপ যে পরিসংখ্যান তুলে ধরেছে সেটা আদপেই সবদিক খতিয়ে দেখে নয়। মানে সেখান থেকেও প্রমাণ কিছুটা পাওয়া যাচ্ছে যে মোদী জমানায় বিরোধীরা যে বেকারত্ব নিয়ে গলা ফাটাতেন সেটা খুব বড় কোন বিষয় নয়। কারণ তাঁরা যা বলেন তার সবটা সত্যি মনে করার কোন কারণ নেই। মানে বিরোধীরা শুধু বিরোধীতার জন্যই নাকি মোদীর বিরোধিতা করছেন। এবার সেই রেশ টেনেই মোদী নামলেন মহারাষ্ট্রের ময়দানে। তিনি বললেন, গত পাঁচ বছরে দেশে কোভিডের রক্তচক্ষু থাকলেও রোজগার বেড়েছে রেকর্ড পরিমাণে। আরবিআই সব রিপোর্ট প্রকাশ করে মিথ্যেবাদীদের মুখ বন্ধ করে দিয়েছে। তিনি এও বলেছেন যে, যারা মিথ্যে কথা নিয়ে এভাবে বক্তব্য রাখছেন তাঁরা আসলে নাকি চান না যুবকরা রোজগার করুক। বিরোধীরা যুবকদের রোজগার বন্ধ করতে চায়। তারা বিনিয়োগের শত্রু আবার বিকাশের শত্রু। মোদীর বক্তব্য, দেশে যদি সেতু তৈরি হয় রেললাইন পাতা হয় রেলের কামড়া তৈরি হয় তাহলে কর্মসংস্থান বাড়বে। দেশে পরিকাঠামোয় বদল এলে মানুষের আয় বৃদ্ধিতে অনেক গতি আসবে। এনডিএ সরকারের মডেল দেশের একেবারে পিছিয়ে থাকা মানুষকেও এগিয়ে নিয়ে আসবে।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ঢালাও বিজেপির খতিয়ানকে সুন্দরভাবে তুলে ধরলেও বিরোধীদের নিশানায় এখনো তিনি রয়েছেন। সঙ্গে বহু আমনাগরিক প্রশ্ন করেছেন যে, মোদী যে বলছেন এবং রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া যে তথ্য প্রকাশ করেছে সেটা কেন চাকরির বাজারে সেভাবে প্রতিফলিত হচ্ছে না? কেন বেকার বসে থাকা যুবক যুবতীরা সেভাবে দেখতে পাচ্ছেন না? কেন ঘটা করে চাকরির খোঁজ দিচ্ছে না কোম্পানিগুলো? কেন্দ্রীয় সরকারই বা কেন এতো শূন্য পদ ফেলে রেখেছে? তাহলে কি সত্যিই বেকারত্ব দগদগে ঘায়ের মত মোদীকে পীড়া দিচ্ছে ভালোরকম? আর তাই রিজার্ভ ব্যাঙ্ক এবং কেন্দ্রীয় শ্রমমন্ত্রকের বক্তব্যকে হাতিয়ার করেই মোদী শাক দিয়ে মাছ ঢাকতে চাইছেন? প্রশ্ন রাখলাম আপনাদের কাছে। মতামত জানান কমেন্ট বক্সে।
বিজনেস প্রাইম নিউজ
জীবন হোক অর্থবহ