Story
এমনিতেই রাজ্য থেকে মুখ ঘুরিয়ে আছে শিল্প। যাও বা হাতে গোনা কিছু শিল্প প্রান্তিক মানুষেরা বাঁচিয়ে রেখেছেন তাঁদের মাথার ওপরেও জমেছে আশঙ্কার মেঘ। রাজ্য সরকারি উদ্যোগ তেমন একটা কাজে দেয় নি। তারওপর পেটের ভাতে টান দিয়েছে করোনা। এখন তাঁদের চিন্তা কোথায় যাবেন, কিভাবে চালাবেন সংসার?
বাঁকুড়া জেলার শালতোড়া বিধানসভার লছমনপুর অঞ্চলের কুনবনা গ্রাম। কয়েক ঘর আদিবাসীদের নিয়ে এই গ্রামের বেঁচে থাকার লড়াই। কারণ, এই গ্রামের আদিবাসীদের রোজগারের প্রধান মাধ্যম বাঁশ। বাঁশের তৈরি ঝুড়ি, ডালা, কুলা তৈরি করেন গ্রামের মহিলা, পুরুষ নির্বিশেষে। ঠা ঠা গরম বা শীত, প্রকৃতিকে পরোয়া না করে অতি ক্ষুদ্র এই শিল্পকে বেঁচে থাকার হাতিয়ার করে লড়াই করে চলেছেন প্রত্যেকে। কিন্তু হাসি নেই তাঁদের মুখে। কারণ উধাও বিক্রি।
একে তো নির্দ্বিধায় বাজার দখল করে আছে প্লাস্টিক। চাহিদা কমছে তো নয়ই, বরং উত্তরোত্তর বাড়ছে। যে কারণে ক্রমশই কমছে বাঁশের তৈরি পন্যের ব্যবহার। রকমারি প্লাস্টিকের পন্যের কাছে হার মানছে এই সকল আদিবাসীদের পরিশ্রম। তার মধ্যেও দাঁতে দাঁত চেপে কঠিন সংগ্রামটা করেই যাচ্ছিলেন আদিবাসীরা। কিন্তু মরার ওপর খাঁড়ার ঘা মারল ভাইরাস।
বাঁশের তৈরি ঝুড়ি, ডালা, কুলা নিয়ে তাঁরা বিক্রি করতে পাড়ি দেন দূর-দূর। কিন্তু ভাইরাসের ভয় পৌঁছে গিয়েছে সেখানেও। প্রশাসনের ‘না’ সেখানেও গিয়ে পড়েছে। ফলে এখন তাঁদের চিন্তা যদি আবারও লকডাউন হয়? যদি এই গ্রামের বাইরে বেরনো বন্ধ হয়ে যায়, তখন সংসার চলবে কি করে? কি করে বাড়ির মানুষগুলোর মুখে তুলে দেবে দু-মুঠো ভাত?
আজকের পৃথিবীতে পরিবেশ দূষণের অন্যতম কারণ প্লাস্টিক। সেখানে বাঁশের তৈরি পণ্য পরিবেশবান্ধব তো বটেই, তার সঙ্গে লেগে থাকে সেই সকল প্রান্তিক মানুষগুলোর কঠোর পরিশ্রম। কিন্তু ভাইরাসের ছোবল যদি সেখানেও গিয়ে পড়ে? ভাইরাসের আতঙ্কে আবারও যদি বিক্রি করাটাই বন্ধ হয়ে যায়, তখন কি এগিয়ে আসবে প্রশাসন? উত্তরটা জানা নেই বলেই, আতঙ্কে ঐ কয়েকটা ঘরে দিনের বেলাতেও অন্ধকার নেমে এসেছে।
আব্দুল হাই, বাঁকুড়া