Daily
লকার ভর্তি সোনা কিংবা রূপোর গয়না যতই থাকুক না কেন, কালেকশনে দু-একটা মুক্তোর গয়না না থাকলে কি আর গয়নার কালেকশন কমপ্লিট হয়? মুক্তোর প্রতি মহিলাদের দুর্বলতা, আজীবন ও সার্বজনীন। আর সমুদ্র সৈকতে ঘুরতে গিয়ে অন্তত একটা মুক্তোর গয়না ঘরে আনেন না, এমন গয়নাপ্রেমীর সংখ্যা হাতে গোনা। কারণ মুক্তোর সন্ধান সাধারণত মেলে এই অঞ্চলেই। তবে, জানেন কি, কৃত্রিম উপায়ে বদ্ধ জলাশয়ের মধ্যেও যে ঝিনুকের মধ্যে মুক্তো চাষ সম্ভব?
অবাক লাগছে তাই তো? খুব স্বাভাবিক। জয়া স্বনির্ভর গোষ্ঠীর সম্পাদিকা, যিনি আজকের দিনে দাঁড়িয়ে একজন সফল কৃত্রিম মুক্তো চাষি, তারও প্রথমবার অবাকই লেগেছিল। বিশ্বব্যাপী মুক্তোর চাহিদা মেটাতে বদ্ধ জলাশয়ের মধ্যে আধুনিক প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে মুক্তোর চাষ বিরল ঘটনাই বটে। চিন, জাপান, কোরিয়া, ভিয়েতনামে এ ধরণের চাষ হলেও ভারতে সচরাচর এমনটা শোনা যায় না। তবে এবার ভারতেও এমন এক্সক্লুসিভ মুক্তো চাষে নজির গড়েছেন হরিণঘাটা ফতেপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের দত্তপাড়ার জয়া স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মহিলারা।
মুক্তো চাষের জন্য পঞ্চায়েতের থেকে প্রায় ১৫০০ ঝিনুক দেওয়া হয় দীপালি দেবীকে। প্রায় সাত মাস আগে মুক্তো চাষ শুরু করেন তারা। সার্জারি করে কৃত্রিমভাবে ঝিনুকের মধ্যে কাঁকড় বা বালি ঢুকিয়ে জলাশয়ের মধ্যে দড়ি দিয়ে ঝুলিয়ে দেওয়া হয়। এরপর ১৮ মাস বাদে ঝিনুকের মধ্যে থেকে পরিপূর্ণ মুক্তো পাওয়া যাবে বলে জানালেন দীপালি দেবী। তাও আবার বিভিন্নরকম ডিজাইনের।
ডাইসে বসিয়ে একটা বিশেষ রকমের আঠা ব্যাবহার করে কাঁকড় বা বালির কণা, ঝিনুকের মধ্যে ইনজেক্ট করানো হয়। এরপর ঝিনুক থেকে সেই বিভিন্নরকমের মুক্তো পান চাষিরা।
ঝিনুক চাষ করতে গেলে ঠিক কোন কোন বিষয় খেয়াল রাখতে হবে, সে সমস্ত কিছু বিস্তারিত ভাবে জানালেন দীপালি দেবী।
ইতিমধ্যেই ঝিনুকের মধ্যে মুক্তোর একটা আস্তরন পড়তে শুরু করেছে। আর ১০-১২ মাসের মধ্যে সম্পূর্ণ মুক্তো পাবেন বলে আশাবাদী স্বনির্ভর গোষ্ঠীর সদস্যরা। আর এই ধরণের চাষ যে সত্যিই লাভজনক, তা তো আর বলার অপেক্ষা রাখে না। ভবিষ্যতে যাতে আরও চাষি এই বিরল অথচ অভিনব চাষে আগ্রহ দেখান, এখন সেই চেষ্টাই করছেন পঞ্চায়েতের কর্মকর্তারা।