Trending
কে বলেছে, মানুষ এখন হলমুখী হয় না? ওটিটি-র যুগে নাকি ঘরে বসে ওয়েবসিরিজে বুঁদ হাওয়াটাই ট্রেন্ড। তাই সিনেমাহলের জামানা শেষ। আরে মশাই, মহামারির কারণে থিয়েটার রিলিজের ভবিষ্যৎ-অনেক বিতর্ক, অনেক আলোচনার মুখোমুখি দাঁড়িয়েছে ঠিকই, কিন্তু পিকচার আভি বাকি হ্যায়! হ্যাশট্যাগ বয়কট পাঠান থেকে হ্যাশট্যাগ ব্যাক অন ট্র্যাক- চার বছর পর বলিউড বাদশার বাদশাহি প্রত্যাবর্তন। দ্য গ্রেট শাহরুখ খান। আরেহ বাবা শাহরুখ, আমির, অক্ষয় বা ভাইজানের সিনেমা রিলিজ হলে, হলে জনসমাগম ঘটবে, এটা আর নতুন কি? কিন্তু আমার প্রশ্নটা অন্য জায়গায়। পাঠান সিনেমার একটা ডায়লগ থেকেই বেসিক্যালি প্রশ্নটা তৈরি হল, যেখানে পাঠান, টাইগারকে বলছে, নতুন প্রজন্মের হাতে দেশের দায়িত্ব তুলে দেওয়া যাবে না, তাদেরকেই সামলাতে হবে। কোনোভাবে কি ইঙ্গিতটা বলিউডকেই করা হল? হু ইস দ্য নেক্সট সুপারস্টার? মানে শাহরুখ, আমির, সালমান আর অক্ষয়-এর পর বলিউডের রাজা কে? নাকি রাজাহীন রাজ্য হয়ে পড়বে বলিউড? সেবিষয়ে কথা তো বলবই। তার আগে পাঠানের অ্যানালিটিক্সটা একবার দেখে নেই। আর পাঠানের সাফল্য, টলি পাড়ায় কেমন প্রভাব ফেলল? সেটাও একবার দেখে নেওয়া যাক।
গোটা দেশ এখন পাঠান ম্যানিয়ায় মত্ত। ক্ষণে ক্ষণে বাড়ছে পাঠান জ্বরের মাত্রা। নাহলে একদিনে ৩৫০ কোটির ব্যবসা করা মুখের কথা! অ্যাডভান্স বুকিঙের চক্করে কোলকাতার তথা গোটা দেশের বেশিরভাগ হল তো হাউসফুল। এমনকি দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ থাকা সিনেমাহল পর্যন্ত খুলে যাচ্ছে এই পাঠানের ক্রেজ সামাল দিতে। বাদশাহি ম্যাজিকে আশার আলো দেখছে মহামারিতে বন্ধ হয়ে যাওয়া বহু সিনেমাহল। আর এদিকে পাঠান ম্যানিয়ার কারণে ভারী গোসা বেঙ্গলি ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির। পাঠান দেখানো হবে বলে বাংলা সিনেমা কোণঠাসা হবে? বাংলা ইন্ডাস্ট্রির মুখ বাংলার পাঁচের মতো হওয়াটাই স্বাভাবিক।
প্রজাপতি। বহুদিন পর একটা ভালো বাংলা সিনেমা উপহার পেয়েছিল বাঙালি। তার প্রমাণও দিয়েছিল তারা। রেকর্ড পরিমাণে ব্যবসা করে প্রজাপতি। কিন্তু কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই ভোলবদল। পাঠান রিলিজ হতে না হতেই রাতারাতি বাংলা সিনেমা তুলে নিচ্ছে হল কর্তৃপক্ষ। আর শুধু প্রজাপতি নয়, লাইনে রয়েছে কাবেরি অন্তরধ্যান, দিলখুশ। সিনেমাহল মালিকদের সাফ কথা, দিনের শেষে এটা ব্যবসা। আর সেটা চালাতে তারা পাঠানের পাঁচটা শো চালাবে নাকি সদ্য মুক্তিপ্রাপ্ত বাংলা সিনেমার একটা শো? ভ্যালিড প্রশ্ন। যখন জানাই ছিল যে পাঠান রিলিজ হচ্ছে, তখন এতগুলো বাংলা সিনেমা রিলিজ করে দেওয়া হলই বা কেন? ওদিকে মুম্বাই থেকে নাকি জানিয়ে দেওয়া হয়েছে কোলকাতার সিঙ্গল-স্ক্রিন হলে পাঠান চালানো হলে, অন্য কোন সিনেমা চালানো যাবে না। আর সেটা বিনা বাক্যব্যয়ে মেনে নিল বাঙালি? সত্য সেলুকাস, কি বিচিত্র এই দেশ! থুড়ি বাঙালি। ঠিক এই বিষয়েই ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন টলিপাড়ার প্রসিদ্ধ পরিচালক, প্রযোজক সহ অনেকেই। কিন্তু একটা কথা ভালো করে ভেবে বলুন তো, কোলকাতাবাসী যেখানে বাঙালির সংখ্যাই বেশি, তারা কেন বাংলা সিনেমার পাশে দাঁড়াচ্ছে না?
বাংলা সিনেমার লাস্ট কয়েক বছরের অ্যানালিটিক্স স্টাডি করে বলুন তো, ইন্ডাস্ট্রিতে সেই স্টার পাওয়ার কোথায়? সেই ফ্যানবেস কোথায়? আর ফার্স্ট ডে ফার্স্ট শো টার্ম তো কবেই… যা আছে সব ওই অ্যাডমায়ার। তারা ছবি দেখে, যাচাই করে, তারপর তারিফ করে। এদের কোনভাবেই ফ্যান বলা চলে না। ফ্যান মানে অন্য জিনিস। স্টারের সাথে ফ্যানের যে একটা অদ্ভুত কানেকশন আছে না, উস কানেকশন কা কিমাত তুম কেয়া সামঝোগে রমেশ বাবু? আজকের বলিউডের দশাও প্রায় সেম।
২০০০-এর পরবর্তী একজন অভিনেতার নাম বলুন যাকে সুপারস্টার বলা যায়? পূর্ব-পশ্চিম-উত্তর-দক্ষিণ, যেদিকে ইচ্ছে চোখ ঘুরিয়ে নিন, নাম খুঁজে পাবেন না। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, কেন আজকের প্রজন্মে বলিউড একটা স্টার দিতে পারল না? ছবি প্রতি খরচ তো কম হচ্ছে না, তাহলে গলদটা কোথায়? আসলে কি জানেন তো, স্টার হওয়ার কোন স্পেসিফিক মেকানিজম হয় না। শুধু দর্শকের মনপসন্দিদা কয়েকটা ব্লকবাস্টার হিট ছবি দিতে হয়। শাহরুখ খান একদিনে শাহরুখ খান হয়নি। ডিডিএলযে, কুচ কুচ হোতা হ্যায়, বাজিগর, দেবদাস, ভিরজারা-একের পর এক হিট ছবি। আর এখনকার প্রজন্মের হিরোরা ১০০ কোটি বা ২০০ কোটির সিনেমা দিলেও ব্লকবাস্টার বলতে যেটা বোঝায়, সেটা দিতে অক্ষম। কাজেই বলিউডের হায়েস্ট গ্রসিং মুভির দখল কিন্তু এখনও এদের দখলেই। সত্যি বলতে, একটা জিনিস কিন্তু মাস্ট লারন ফ্রম দেম, সেটা হচ্ছে ‘ব্রেক দ্য মনোটনি’ স্ট্রাটেজি। ৭০/৮০ দশকের অভিনেতারা অভিনয় করতেন ঠিকই, কিন্তু তাতে কোন ইউনিকনেস ছিল না, একইরকম। ৯০ দশকের এই সুপারস্টাররা শিখিয়ে দিলেন, কীভাবে নিজেকে ভাঙতে হয়। নিংড়ে নিতে হয়। রাত তিনটেয় প্যাক আপ হলে তারপর সিক্স প্যাক বানানোর কঠিন সাধনা করতে হয়। আজ ৫০ প্লাস হয়েও এই লড়াকু মানসিকতা, এই বিফল হয়েও কামব্যাক করার জেদ, নতুন নতুন জিনিস শেখার চেষ্টা, নিজেকে ফিট রাখা, চরিত্রের জন্য ৬ প্যাক বা ৮প্যাক বানানো, ময়দান না ছাড়া- এই সবকিছুই আজকের প্রজন্মের কাছে অনুপ্রেরণা।
আমিরের চার্ম, শাহরুখের রোম্যান্স, সালমানের বডি, অক্ষয়ের মার্শাল আর্ট- এদের প্রত্যেকেরই একটা সিগনেচার জনার রয়েছে। যেখানে তারাই এক্সপার্ট। আর সেই জনার বেসিসে তাদের আলাদা ফ্যানফলোয়ার্স। যাদের হিরোয়িক এন্ট্রিতে আজও সিটিতে ভরে যায় অন্ধকার সিনেমাহল। অন্যদিকে রনবির, বরুন, সিদ্ধার্থ- এরা নাকি আজও নিউ কামার। নিজের জায়গা তৈরি করার যুদ্ধ করছে। তাদের কারোরই গলি থেকে রাজপথ পেরনোর মতো ইন্সপায়ারিং কোন গল্প নেই। যে গল্পে দর্শকের সঙ্গে কানেকশন তৈরির ম্যাজিক মন্ত্র রয়েছে। তাই এদের হয়তো আলাদা কোন ফ্যানবেসও নেই। মেলায় মেলায় তাই ৯০-এর দশকের স্টারদের পোস্টার বিক্রির ট্রেন্ড আজও অব্যাহত। তাই দঙ্গল, বাজরাঙ্গি ভাইজান বা পাঠানের সাফল্য এলে তারা ইমোশনাল হয়ে পড়ে। এমনি এমনি এই আবেগ আসে? মাসের সামান্য মাইনে থেকেও কিছু টাকা সরিয়ে রাখে পছন্দের সুপারস্টারের সিনেমা দেখার টিকিট কাটবে বলে, সেটা এমনি এমনিই? এটাই কানেকশন। এটা বানানোর কোন ফর্মুলা হয় না- হয়ে যায় জাস্ট। আর এই কানেকশনটার জন্যই হয়তো অনুপম খেড়ের টক শো-তে এসে চোখে চোখ রেখে শাহরুখ বলতে পারে, আই অ্যাম দ্য লাস্ট অফ দ্য স্টারস।
বিজনেস প্রাইম নিউজ
জীবন হোক অর্থবহ