Trending
বলিউড মানেই বয়কটের ট্রেন্ড। লাল সিং চাড্ডা, রক্ষাবন্ধন, ব্রহ্মাস্ত্র, লাইগার- এই সবকটি সিনেমাতেই কোন না কোন ইস্যু খুঁজে বের করে হ্যাশ ট্যাগ বয়কট লাগিয়ে সোশ্যাল মিডিয়া থেকে পথে নেমে বিক্ষোভে সামিল হয়েছিলেন মানুষজন। সেই প্রভাব পড়েছিল বক্স অফিসেও। লাল সিং চাড্ডা বিগেস্ট ফ্লপ, রক্ষাবন্ধন বিগেস্ট ফ্লপ, লাইগারও বড়সড় ফ্লপের মুখোমুখি হয়েছিল। ব্রহ্মাস্ত্র ফ্লপ হতে হতেও হয়নি। এমনই একটি সময়ে দাঁড়িয়ে রিলিজ ডেট ঘোষণা করলেন শাহরুখ খান। চার বছর পর কামব্যাক। স্বাভাবিকভাবেই উন্মাদনা তৈরি হতে এক মুহূর্ত সময় লাগেনি। কিন্তু পাল্লা দিয়ে শুরু হল পাঠানকে বয়কট করার ট্রেন্ড। আমরা সকলেই জানি, পাঠানের একটি গান ‘বেশরম রং’-এ দীপিকা পাদুকোনের কস্টিউমের রং নিয়ে শুরু হল জোর চর্চা। নেতা, মন্ত্রী থেকে বহু গোঁড়া হিন্দু সমর্থকদের মধ্যে পাঠানকে বয়কট করার ডাক পড়ে। স্বাভাবিকভাবেই সেই প্রভাব পড়তে পারত বি-টাউনে। কিন্তু ফল হল অপ্রত্যাশিত। মাত্র দু’দিনে পাঠান আয় করল ১২৫ কোটি টাকা মতন। বলিউড বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দু’দিনে ১০০ কোটি পেরিয়ে যাবার ট্রেন্ড সাম্প্রতিক সময়ে বলিউড দেখে তো নিই, এমনকি বেশ কয়েক বছর পিছিয়ে গেলেও নজরে পড়বে না। তার মানে, কিং খানের প্রত্যাবর্তন হল রাজার মতনই।
দশ মিনিট অন্তর লোকেশন চেঞ্জ, অ্যাকশনে ভরপুর সিনেমাটির ট্রেলার যখন রিলিজ হল- তখনই বোঝা গেছিল পাঠান সিনেমাটিতে দর্শকদের হতাশ করে দেবার মত কোন কনটেন্ট নেই। কখনো ট্রেনের ওপর, কখনো হেলিকপ্টার- মুহুর্মুহু গোলাগুলি, বন্দুক, মিসাইল এই সবই সিনেমাটিকে বিনোদনের চরম পর্যায়ে পৌঁছে দিয়েছে। এছাড়া শাহরুখ খানের সঙ্গে প্রথমবারের মতন অ্যাকশনে নামছেন জন আব্রাহাম। বলা হচ্ছে, অ্যাকশন সিকোয়েন্স এবং শাহরুখ খানের বিপরীতে সেয়ানে সেয়ানে টক্কর দিতে পেরেছেন জন আব্রাহাম। ইয়ে মানে অ্যাকশন সিকোয়েন্সগুলো দেখলে বেশ কিছু হলিউড মুভির নাম প্রথমেই মাথায় চলে আসতে পারে, কিন্তু যত যাই হোক, ৫৭ বছর বয়সী শাহরুখ খান যেভাবে নিজের অ্যাকশন সিকোয়েন্সগুলো তুলে ধরেছেন, সেটা যে আসমুদ্রহিমাচল জুড়ে ছড়িয়ে থাকা শাহরুখ খানের ফ্যানেদের মধ্যে যে উন্মাদনা তৈরি করবে সেটাই তো স্বাভাবিক। পরিচালক সিদ্ধার্থ আনন্দ অবশ্য অ্যাকশন সিকোয়েন্স তৈরি করবার জন্য ন্যূনতম কোন কসুর করেননি। ডাক এসেছিল মিশন ইম্পসিবলের অ্যাকশন ডিরেক্টর কেইসি ও’নীলের। আর প্রযোজক ইয়াশ রাজ ফিল্মসও এই বিষয়ে কার্পণ্য করতে চাননি। বর্তমানে তাঁরা হলিউডের মার্বেল ইউনিভার্সের মতন তৈরি করছেন স্পাই ইউনিভার্স। যেখানে ওয়ার, টাইগার অভি জিন্দগি হ্যায়ের মত সিনেমা রয়েছে। পাঠানে আরেকটা প্রাপ্তি হল কিং খানের সঙ্গে ক্যামিও অ্যাপিয়ারেন্স দিয়েছেন সলমন খান। শোনা যাচ্ছে, টাইগার থ্রি-তেও নাকি শাহরুখের এমন একটি ক্যামিও থাকবে। এছাড়া গোটা সিনেমায় দেশভক্তির বিষয়টা প্রাধান্যও পেয়েছিল দারুণ। সবমিলিয়ে বিনোদনে ভরপুর দর্শকদের পয়সা উসুল করে দেওয়া ছবি শাহরুখের পাঠান। আর যে কারণে পাঠান নিয়ে যতই বয়কট করার ডাক উঠুক, শাহরুখপ্রেমীরা বয়কট ট্রেন্ডকেই বয়কট করে হলমুখী হয়েছেন।
কোভিডের পর থেকেই বি-টাউনের বহু সিনেমা একের পর এক ফ্লপের মুখোমুখি হচ্ছিল। হিট বা সুপারহিটের তালিকায় সেভাবে কোন সিনেমাই ছিল না। বরং যেভাবে দক্ষিণী সিনেমার রমরমা শুরু হল, তারপর দেখা গেল, বি-টাউনের সিনেমাগুলি ক্রমশই কোণঠাসা হয়ে পড়তে শুরু করে। এই সময়ে দাঁড়িয়ে শাহরুখের সিনেমা ফ্লপ হতে পারে এই আশঙ্কাও কিছুটা তৈরি হয়েছিল। সত্যি বলতে গেলে, শাহরুখ খানের এটা কামব্যাক প্রায় চার বছর পর। শাহরুখ খানের শেষ হিট ছবি যদি বলতে হয় তাহলে সেটা রইস- সাল ২০১৭। তাও সেটা ম্যাসিভ কোন হিট করেনি বা ব্লকবাস্টার হয় নি। অ্যাভারেজের থেকে একটু ওপরেই ছিল। তারপর অবশ্য যে-কটি সিনেমা শাহরুখ করেছেন, প্রত্যেকটাই ফ্লপের মুখোমুখি পড়ে। শাহরুখ খানের শেষ মুক্তিপ্রাপ্ত সিনেমা ছিল জিরো- ২০১৮ সালে এই সিনেমাটির ভরাডুবি হয়। তারপর চার বছরের গ্যাপ নিয়েছিলেন তিনি। রিলিজ করল পাঠান। প্রায় ২৫০ কোটি টাকা খরচ করে তৈরি সিনেমাটির আয় প্রথম দিনে গড়ল ৫৫ কোটির রেকর্ড, দ্বিতীয় দিনে সেটা পৌঁছে গেল ১২৫ কোটি-তে। ভারতব্যপী প্রজাতন্ত্র দিবসের ছুটি এবং বাঙালিদের সরস্বতী পুজোর ছুটি থাকায় পাঠান থেকে কেউ আর মুখ ঘোরান নি। তবে চার বছরের গ্যাপ নিলেও শোনা যাচ্ছে, এই বছর নাকি শাহরুখ খান আরও দুটি সিনেমা নিয়ে ফিরতে পারেন। তার মধ্যে একটি জওয়ান- সেটার টিজার বেশ কিছুদিন আগেই রিলিজ করা হয়, এছাড়া ডানকি- যেটা পরিচালনা করবেন থ্রি ইডিয়টস এবং পিকের পরিচালক রাজকুমার হিরানি। তবে যত যাই হোক, পাঠানের বক্স অফিস ফলাফল দেখলে বোঝা যাচ্ছে, দক্ষিণী সিনেমার যে তাণ্ডব আমরা বক্স অফিসে দেখেছিলাম এবং বি-টাউনে খরা, আজ সেটাই ভুল প্রমাণিত করে দিলেন শাহরুখ খান। রাজার মত কামব্যাক করলেন তিনি। এখন সিনেমাটি ৫০০ কোটির ক্লাবে পৌঁছয় কিনা সেটাই দেখার।
বিজনেস প্রাইম নিউজ
জীবন হোক অর্থবহ