Trending
রাজ্য জুড়ে পারদ নেমেছে ঠিকই। কিন্তু বাজারে ঢুকলেই হাঁসফাঁস করছেন সাধারণ মানুষ। আনাজের দাম জেট স্পিডে যেভাবে ওপরের দিকে উঠছে, তারপর আর সাধারণ মানুষ যায় কোথায়? ছেঁকা খাচ্ছেন আনাজে হাত দিতেই। শনিবার পর্যন্ত লঙ্কার দাম পৌঁছে গেছিল ৩০০ টাকা প্রতি কেজিতে। রবিবার সেই দাম আরও কিছুটা বৃদ্ধি পেয়ে পৌঁছে যায় ৩৫০ টাকায়। একইভাবে মূল্যবৃদ্ধি হয়েছে অন্যান্য শাকসব্জির। টোম্যাটোর আকাল দেখা দিয়েছে। ফলে দামের পারদ চড়ছে সেখানেও। টোম্যাটোর দাম একধাক্কায় বেড়েছে। বেড়েছে আদার দামও। সেটাও প্রায় ৩৫০ ছুঁইছুঁই। কোথাও আদা বিক্রি হয়েছে ৪০০ টাকা কেজিতেও। পরিস্থিতি যেদিকে এগোচ্ছে এবার হয়ত নিরামিষ প্রিয় মানুষের ট্যাঁক থেকে খসবে ভালোই। কারণ মাছ, চিকেনের দাম সেই পর্যায়ে ওঠে নি এদিকে শাকসব্জির দাম এভাবে বৃদ্ধি পেল, কিন্তু কেন?
গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে একদিকে চুপ মোদী। আর এই রাজ্যে সব্জির মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে চুপ দিদি। আর দিদি-মোদীর এই মৌনব্রত কার্যত জনসাধারণের যাবতীয় ধৈর্যের ব্রত ভেঙে ফেলে দিল বলে। এদিকে রাজ্যের দোরে কড়া নাড়ছে পঞ্চায়েত ভোট। বিরোধী দলনেতাদের এখানে একটা অদ্ভুত বিষয় লক্ষ্য করা যাচ্ছে। বাম শিবিরের কথাটা আগে বলা যাক। রাজ্যে বা দেশে মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে লাগাতার গলা সপ্তমে চড়িয়ে রেখেছে বামেরা। শতরূপ ঘোষ থেকে শুরু করে সুজন ভট্টাচার্য নিয়োগ দুর্নীতি, তৃণমূলের হিসাব বহির্ভূত কোটি কোটি টাকার সন্ধান- এইসব নিয়ে মাঠে-ময়দানে জোর প্রচার চালাচ্ছেন। সাধারণ মানুষের অভাব, অভিযোগকে করছেন হাতিয়ার। কিন্তু অদ্ভুত লাগে যখন তৃণমূল এবং বিজেপির ছবিটা সামনে আসে। বঙ্গ বিজেপি শিবির গলার রগ ফুলিয়ে চিৎকার করে সবকিছুর মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে। এদিকে আবার ঘাসফুল পাল্টা প্রশ্ন করে বসে, তাহলে গ্যাসের দাম কমছে না কেন? মোদ্দা কথা, মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে দুই শিবির যেভাবে কাদা ছোঁড়াছুঁড়ি করছে তারপর কার্যত মাথায় হাত পড়ছে আমজনতার। তাদের সিচুয়েশন এখন স্যান্ডউইচ। কোথায় যাবেন, আর কিই বা করবেন? সত্যিই তো। যে কারণে এই দুর্ভোগ থেকে বেরিয়ে আসার প্রতিশ্রুতি দিয়ে একেবারে ফ্রন্টফুটে নেমে পড়েছে বামেরা।
মুশকিল হচ্ছে, ভোট আসুক না আসুক মূল্যবৃদ্ধি থাকছেই- গোছের যে একটা প্যারামিটার দেশের সর্বত্র সেট হয়ে গেছে সেটা থেকে বেরিয়ে আসা খুব প্রয়োজন। কিন্তু হচ্ছেটা কোথায়? পঞ্চায়েত ভোটের মুখে দাঁড়িয়ে যদি এভাবেই আনাজের দাম বৃদ্ধি পায় তাহলে তৃণমূলের অবস্থা যথেষ্ট সঙ্গীন হবার দিকেই ভারি হয়ে যাবে পাল্লা। এমনিতেই যেভাবে গোটা রাজ্যে ইডি, সিবিআই-এর দাপাদাপিতে রাজ্য রাজনীতির আকাশে কালো মেঘ ঘনিয়েছে, তারপর আর তৃণমূলের সুপ্রিমোরাও ভাবছেন কবে এই মেঘ ফুঁড়ে দেখা দেবেন সূর্যদেব। কিন্তু সময় দেখে বোঝা যাচ্ছে, এখনই কিছু হবার নয়। বরং দুর্নীতিতে অভিযুক্ত প্রত্যেককে কয়েদখানার পেছনে পাঠাবার জন্য আদাজল খেয়ে নেমে পড়েছে কেন্দ্রীয় সংস্থাগুলো। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বা অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়- মানে তৃণমূল সুপ্রিমো যেভাবে ইডি, সিবিআই-এর চোখ রাঙ্গানির সঙ্গে বিজেপির অঙ্গুলিহেলনকে যোগসূত্রে বেঁধেছেন, সেটা পলিটিক্যাল আঙিনায় দুর্দান্ত। কিন্তু আমজনতার? চাকরি নেই। শিল্প নেই। বাইরের রাজ্যে যাও বা হচ্ছে, এখানে প্রায় সবই ফিউচার টেন্সে চলে যাচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে কে হবেন পরিত্রাতা? সেই উত্তরটাও কারুর জানা নেই।
বাজারদর যেভাবে হাওয়ার বেগে ছড়িয়ে পড়ছে, তারপর কার্যত মুখ বুজে বসে থাকার পাত্র নয় নবান্ন। নবান্নের টাস্ক ফোরস নাকি এই বাজার, ঐ বাজার ছুটোছুটি করে আসল ছবিটা একেবারে বোঝার চেষ্টা করবে। কিন্তু এই আসল ছবিটা কি? কেউ কেউ বলছেন, আনাজের অকস্মাৎ মূল্যবৃদ্ধির কারণ একটাই। সেটা আবহাওয়া। এই বছর প্রকৃতির মনমর্জি যেভাবে ওলটপালট খেয়েছে, তারপর কী আর রাজ্য জুড়ে আনাজের ফলন এক নিয়মে হয়? রাজ্য এবার গরম নয়। অতি গরমের কোপে পড়েছিল। সেই প্রভাব সরাসরি এসে পড়ে ফলনে। ফলনে প্রভাব মানেই বাজারে প্রভাব। তৃণমূলের পক্ষ থেকে সম্প্রতি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় জনসভা করতে গিয়ে মূল্যবৃদ্ধির তোপ দেগেছেন শুভেন্দু অধিকারীকে। তাঁর বক্তব্য, রাজ্যে আনাজের মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে বিজেপি সরব হচ্ছে। কিন্তু বিজেপি শাসিত রাজ্যেও দিন দিন গ্যাসের দাম বৃদ্ধি পাচ্ছে। কয়েকদিন আগে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ধর্না মঞ্চ থেকে বলেছিলেন, আরে ও নন্দলাল/ হাজার টাকার গ্যাসে ফুটছে বিনা পয়সার চাল? তখন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় বা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই সুরের বিরুদ্ধে গিয়ে পাল্টা চুপ করেছিল বিজেপি শিবির। এখন সব্জি বাজারের মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে এবার বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর টুইটঃ
“আরে ও নন্দলাল, গরীব মানুষের পাতে কি জুটবে শুধু নুনের সঙ্গে মোদীজির দেওয়া বিনা পয়সার চাল?”
বলি হচ্ছেটা কী? একবার তৃণমূল, পাল্টা বিজেপি। একবার বিজেপি, পাল্টা তৃণমূল। ঘৃতাহুতির কাজটা করছে বাম-কংগ্রেস সকলেই। কিন্তু দিনের শেষে সাধারণ মানুষ কি আদৌ আর ঘুমের দেশে যেতে পারছেন নিশ্চিন্তে? সাধারণ মানুষ তো দাবি করছেন, রাজ্যে আনাজের মূল্যবৃদ্ধি নাকি পঞ্চায়েত ভোটের কারণেই। তাহলে প্রশ্ন উঠছে, কে করছে এবং কেন করছে? মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, রাজ্যে টোম্যাটোর ওপর কোন সহায়ক মূল্য কেন্দ্র দেয় না। বাংলায় অধিকাংশ টোম্যাটো আসে কর্ণাটক থেকে। সেটা পূরণ করতে ঐ রাজ্য থেকে সদ্য বিদায় নেওয়া বিজেপি ব্যর্থ হয়েছে। আর বিজেপি রাজ্যের নিয়োগ দুর্নীতি, সঙ্গে আনাজের মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে শির ফুলিয়ে মাঠে নেমে পড়েছে। কিন্তু দিনের শেষে হচ্ছেটা কী?
এই বিষয়ে আমরা কথা বলব সাধারণ মানুষের সঙ্গে। কেন আনাজের দাম বৃদ্ধি পাচ্ছে? কেন এতো এতো টাকা নিয়োগ দুর্নীতি? কোথায় যাবেন সাধারণ মানুষ? পঞ্চায়েত ভোটের আগে আর্থিক তছরুপের মতো একের পর এক ঘটনা কি সত্যিই প্রশ্নের মুখে ফেলে দেবে তৃণমূল সরকারকে?
বিজনেস প্রাইম নিউজ।
জীবন হোক অর্থবহ