Trending
শিয়রে পঞ্চায়েত। রাজ্য জুড়ে ছড়িয়ে পড়ছে হিংসার বাতাবরণ। প্রত্যেকদিন রাজ্যের কোথাও না কোথাও পড়ছে বোমা। চলছে মারামারি, হাতাহাতি। সরকার পক্ষ দায় ঠেলছে বিরোধীদের দিকে। আর বিরোধীরা দায় চাপাচ্ছে রাজ্য সরকারের উপর। এদিকে রাজ্যের এক প্রান্ত থেকে আরেকপ্রান্তে ছোটাছুটি করছেন রাজ্যপাল। শান্তিপূর্ণ পঞ্চায়েত নির্বাচনের লক্ষ্যে। কিন্তু দিনের শেষে কি সত্যিই পঞ্চায়েত নির্বাচন গ্রামীণ মানুষের মনে আস্থার পারদ জিগিয়ে রাখতে পারছে? প্রতিবাদ বা প্রতিরোধ যাই হোক না কেন, দিনের শেষে কি সেটা মানুষের পঞ্চায়েত হচ্ছে? আসুন এই নিয়ে শুরু করি পঞ্চায়েতের পরীক্ষার প্রথম পর্ব।
যত দিন এগোচ্ছে, ততই যেন রাজ্য জুড়ে পঞ্চায়েত নির্বাচন নিয়ে পারদ চড়ছে পাবলিকের। তৃণমূল সরকারের অস্বস্তি বাড়িয়ে হাইকোর্টের নির্দেশে রাজ্যে এসে পড়েছে কেন্দ্রীয় বাহিনী। তাদের নজর এড়িয়ে পঞ্চায়েতে কারচুপি তেমনটা হবে না। হবে না হিংসা, মারামারি। এই আশাতেই নির্বাচনের দিন গ্রামের মানুষ দলে দলে ভোট দেবেন। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, আশা কি সত্যিই নির্বাচনের শেষ দিন পর্যন্ত টিকিয়ে রাখা সম্ভব? সত্যি বলতে কী, অন্যান্য রাজ্যেও তো পঞ্চায়েত নির্বাচন হয়। কই, এমন হানাহানি, মারামারির খবর তো ন্যাশনাল নিউজ মিডিয়ার দৌলতে তেমন ছড়ায় না। কিন্তু এই রাজ্যে কেন? কিসের ভয় দিদি, মোদী, বাম-কংগ্রেস, আইএসএফের? ভয় নাকি জবরদস্তি? তার উত্তর দেবার কথা গ্রামের মানুষের। এখন ত্রিস্তরীয় পঞ্চায়েত ব্যবস্থা আসলে কী? প্রথমে এই ইতিহাসের দিকে একটু নজর ঘোরানো যাক।
ত্রিস্তরীয় পঞ্চায়েত ব্যবস্থার কাঠামো কি রকম? ত্রিস্তর অর্থাৎ তিনটে স্তর। গ্রাম পঞ্চায়েত, পঞ্চায়েত সমিতি এবং জেলা পরিষদ। ১৯৭৭ সালের আগে পর্যন্ত পঞ্চায়েত ব্যবস্থা বলতে যা ছিল সেটা বেশকিছুটা স্বার্থকেন্দ্রিক। আশার বেলুন ফুটো করে সামন্ত প্রভুদের হাতে ক্ষমতার সম্প্রসারণ যেন সবদিক থেকে কোনঠাসা করে দিচ্ছিল গ্রামের গরীব মানুষদের। আর যে কারণে বাম সরকার চেয়েছিল একটা সার্বিক পরিবর্তনের। যে পরিবর্তন শুধু স্বার্থমগ্ন কিছু মানুষের হাতে থাকবে না। বরং পুঁজিবাদী রাষ্ট্রকাঠামোর ভেতরে থেকেও সকল সুযোগ সুবিধে পৌঁছে যাবে গ্রামের বঞ্চিত মেহনতি মানুষের কাছে। কৃষক, খেত-মজুর যাদের ছাড়া এই সমাজব্যবস্থার অর্থনীতি একেবারে অচল, তাদের বঞ্চনা করা অর্থহীন শুধু নয়। বরং অন্যায়।
কিন্তু এই অন্যায় শোষণের প্রতিবাদ বাম সরকারের আগে কেউ সেভাবে করেনি। তাই বাম জমানায় ত্রিস্তরীয় পঞ্চায়েত ব্যবস্থা নিঃসন্দেহে নির্বাচন প্রক্রিয়ার একটা বিস্ময়, একটা দৃষ্টান্ত হয়ে দাঁড়ায়। একটা তথ্য থেকে জানা যাচ্ছে, সেই সময় পশ্চিমবাংলার ত্রিস্তরীয় পঞ্চায়েত ব্যবস্থা কার্যত বিশ্ব দরবারেও একটা এগজ্যাম্পল সেট করে দেয়। আর যে কারণে পঞ্চায়েত স্তরে গণতন্ত্রের পরীক্ষা কিভাবে হয়, সেটা দেখার জন্য চিন পাঠিয়েছিল নিজের প্রতিনিধিকে। প্রথম ত্রিস্তরীয় পঞ্চায়েত যখন হয়, সেই দিন নাকি গ্রামবাসীদের মধ্যে দারুণ এক স্বতঃস্ফূর্ত উৎসাহ লক্ষ্য করা যায়। সেদিন নির্বাচন হয়েছিল ৩২২৭-টি গ্রাম পঞ্চায়েতে। ৩২৯-টি পঞ্চায়েত সমিতি এবং ১৫-টি জেলা সমিতিতে। ভোট দিয়েছিলেন ২৫ লক্ষের বেশি মানুষ।
বামফ্রন্ট সরকারের চ্যালেঞ্জ ছিল কী কী? গ্রামীণ অর্থনীতির চাকা সচল রাখা এবং গ্রামীণ গণতন্ত্রের ভ্যালু বজায় রাখা। খেয়াল রাখবেন, সেই সময় ন্যাশনাল প্ল্যাটফর্মে গ্রামীণ ডেভেলপমেন্টের হার যেখানে ছিল ৩২.৩%, সেখানে বাংলায় ছিল ১১.৯%। সুতরাং বাংলার গ্রামকে আর্থিকভাবে চাঙ্গা করতে প্রয়োজন ছিল নতুনভাবে নির্বাচন করানোর। আর সেই উদ্দ্যেশ্যেই ত্রিস্তরীয় পঞ্চায়েত নির্বাচন প্রক্রিয়া চালু করে তৎকালীন বামফ্রন্ট সরকার। গ্রামের কৃষকদের আর্থিকভাবে আরও কতটা শক্তিশালী করা যায়, কুটির শিল্পকে আর কিভাবে বাজারজাত করা সম্ভব এই সবই লক্ষ্য ছিল ত্রিস্তরীয় পঞ্চায়েত ব্যবস্থার মাধ্যমে। পঙ্গু হয়ে পড়া গ্রামীণ অর্থনীতিকে পুরোদস্তুর সচল রাখার জন্য ত্রিস্তরীয় পঞ্চায়েত নির্বাচন আদতে ছিল একটা মাইলস্টোন। কিন্তু সেই লক্ষ্য আজ সময়ের কালপ্রবাহে কোথায় গিয়ে দাঁড়াচ্ছে?
আদৌ কি সেই লক্ষ্যপূরণের দিকে আমরা এগোচ্ছি? যে মেরুদণ্ড সোজা রেখে ত্রিস্তরীয় পঞ্চায়েত ব্যবস্থার মাধ্যমে শুধু গ্রামীণ মানুষের স্বার্থকেই আরও বেশি করে নজর দেবার কথা ছিল, সেই ছবি কি এখন আরও স্পষ্ট হচ্ছে? নাকি গ্রামীণ মানুষের সার্বিক উন্নতির আশা দিনের শেষে শুধু হতাশায় পরিবর্তীত হচ্ছে? কোথায় যাবেন গ্রামের সাধারণ মানুষ? ত্রিস্তরীয় পঞ্চায়েত ব্যবস্থার মাধ্যমে কি আমরা আদৌ বাংলার গ্রামের আর্থিক উন্নয়নের লক্ষ্যপূরণ আরও বেটার করতে পারব? কোথায় যাবেন গ্রাম বাংলার সাধারণ মানুষ? দিনের শেষে কি গ্রামবাংলার মানুষের অর্থনীতির চাকা সচল থাকবে? গ্রাম পঞ্চায়েতের খবর কী? সেই অন্দরে ঢুকব আমরা। খবর নেব জেলায় জেলায়। গ্রামীণ অর্থনীতির হাল হকিকত জানব। সঙ্গে জানাব আপনাদের।
বিজনেস প্রাইম নিউজ।
জীবন হোক অর্থবহ