Trending
গাধার পিঠে চড়ে ভাগ্য ফিরেছিল গুপীর। জঙ্গলে গুপীকে নামিয়ে দেবার পর বাঘার সাথে দেখা হয় গুপীর। বাকিটা ইতিহাস। এবার সেই গাধার পিঠে চড়েই অর্থনীতির ভাগ্য ফেরাতে চাইছে পাকিস্তান। অবাক হচ্ছেন নাকি? একেবারেই সত্যি কথা। পাকিস্তানে লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে গাধার সংখ্যা। বছর বছর সংখ্যাটা বৃদ্ধি পাচ্ছে লাখে। ১ বছরে ১ লাখ গাধা। আর সেই অঙ্ক মেনে দেখলে পাকিস্তানে এখন গাধার সংখ্যা ৫৯ লাখ! কিন্তু পাকিস্তান হঠাৎ গাধা পালন করতে এমন মাঠে ময়দানে নামল কেন? একটা পরিসংখ্যান বলছে, ২০১৯-২০ সালে যেখানে পাকিস্তানে গাধার সংখ্যা ছিল ৫৫ লাখ, আজ ২০২৪-এ সেই গাধার সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ৫৯ লাখ! মানে চার বছরে চার লাখ গাধার সংখ্যা বেড়েছে? মানে বছরে ১ লাখ, কিন্তু কেন?
পাকিস্তানের আর্থিক অবস্থা কেমন, সেই বিষয়ে নতুন করে কিছু বলার নেই তবু ছোট করে। আর্থিক সংকটে ভালোরকম ভুগছে পাকিস্তান। নতুন সরকার হিসেবে এসেছে শাহবাজ শরিফ। পাকিস্তানের আর্থিক ভাগ্যে বদল আনার কসম খেয়েছিলেন। কিন্তু আদতে হল কোথায়? সেই দেশের সাধারণ মানুষ এখনো অনাহারে। অনেকেই ঠিক করে খাবার পাচ্ছেন না। নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসে হাত দিলেই ছেঁকা খেতে হচ্ছে। দুধ, ডিম, আনাজ, পিঁয়াজ, ওষুধ সবই যেন সাধারণের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে। এই নিয়ে বহু বিক্ষোভ দেখা দিয়েছে। বিপুল পরিমাণের ঋণের বোঝা পাকিস্তানের মাথায়। ধারের ওপর ধার, সেই ধার শোধ করতে গিয়ে আরও ধার। ফলে পাকিস্তানের অর্থনীতি এখন গুপীর প্রথম জীবনের বেসুরো গানের মত। এই পর্যায়ে ঘুরে দাঁড়ানোর জন্য নানা পদক্ষেপ নিতে চেয়েছে পাক সরকার। কিন্তু অবস্থার পরিবর্তন কোনভাবেই হয়নি। কৃষিক্ষেত্র ছাড়া শিল্প, ব্যবসা-বাণিজ্য সবই এখনো অচলাবস্থায়। পাকিস্তানের অর্থমন্ত্রী মহম্মদ অওরংজেব একটা তথ্য প্রকাশ করে বলেছেন, দেশের আর্থিক বৃদ্ধি নিয়ে যে উচ্চাশা পাক সরকার করেছিল তার লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয়নি। ফলে জিডিপির বৃদ্ধি ধাক্কা খেয়েছে। ৩.৫ শতাংশ লক্ষ্যমাত্রা হলেও থেমে গিয়েছে গতি ২.৮ শতাংশে। শিল্পে যেমন লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩.৪ শতাংশ বৃদ্ধির, সেটা হয়েছে মাত্র ১.৩ শতাংশ। পরিষেবা খাত- সেও ধুঁকছে। একমাত্র কৃষিখাটে ১৯ বছরের রেকর্ড ব্রেক করেছে পাকিস্তান। আর্থিক বৃদ্ধি ৬.২৫ শতাংশ। মানে দেশের অর্থনীতির একটা বড় অংশ ধরে রেখছে এই কৃষিখাত। কিন্তু রাজস্ব ঘাটতি সে-আর মিটল কোথায়?
গত বছরেও পাকিস্তানের মূল্যবৃদ্ধির হার পৌঁছে যায় ৩৮ শতাংশে। যা কার্যত পাক অর্থনীতির নাভিশ্বাস তুলে ফেলে। এবার সেই সঙ্কট কাটাতেই নাকি গাধার ওপর ভরসা করছে পাকিস্তান। কেন এতো গাধার প্রতিপালন? আর কিছু নয়। অর্থনীতির ভাগ্য ফেরাতে এবার গাধার ওপরেই চোখ বন্ধ করে বিশ্বাস করছে পাক সরকার। কারণ এবার তারা গাধা রফতানি করে অর্থনীতির ভাগ্য ফেরাতে চাইছে। কিন্তু গাধা রফতানি করবে কাকে? পাকিস্তানের বিগ ব্রাদার চিনকে। যে প্রাণী মাল বয়েই সারাটা জীবন কাটিয়ে দেয় তাকে আবার চিনের কী প্রয়োজন? চিনে গাধা কম পড়িয়াছে। এদিকে আফ্রিকাতেও গাধা নিয়ে খুব টানাটানি। কিন্তু চিন কেন গাধা চাইছে? কারণ চিনে ইজিয়াও নামে এক ধরণের ওষুধ তৈরি হয়। তার জন্য প্রয়োজন পড়ে গাধার চামড়ার। তারা মনে করে, এই ওষুধ রক্ত পরিস্রুত করতে আর রোগ প্রতিরোধের ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে। প্রথম দিকে এই ওষুধ চিনের বিশেষ কিছু শ্রেণির মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকলেও এখন সেটা সর্বস্তরের মানুষই ব্যবহার করে। আর এই ইজিয়াও তৈরির জন্য অন্যতম মূল উপাদান হল গাধার চামড়া। এতদিন চিন ওষুধ তৈরির জন্য যথেচ্ছ গাধাকে হত্যা করেছে। এখন সেই গাধার ভাঁড়ার শূন্য। তাই চিনের প্রয়োজন পড়ছে গাধার। আর সেই গাধা সাপ্লাই করেই পাকিস্তান চাইছে অর্থনীতির ভাগ্যসঙ্কট দূর করতে। গুপীর ভাগ্য ফিরেছিল গাধার পিঠে চড়েই। ভাগ্যিস সে এদিক ওদিক না গিয়ে জঙ্গলের সামনে গুপীকে নামিয়ে দেয়। তারপর গুপী, বাঘা দুজনেই রাজার জামাই হয়েছিল। অর্থ, মান, সম্মান, ভাগ্য সবই ফিরে এসেছিল। এখন পাকিস্তানের অর্থনীতির ভাগ্য এই গাধা ফেরাতে পারে কিনা সেটাই বড় প্রশ্ন।
বিজনেস প্রাইম নিউজ
জীবন হোক অর্থবহ