Trending
চরম জলসংকট দেখা দিতে পারে পাকিস্তানে। হতে পারে কৃষিকাজে ব্যপক ক্ষতি। একইসঙ্গে গোঁত্তা খেয়ে পড়তে পারে পাকিস্তানের জিডিপি। আর এই সব কিছুরই নেপথ্যে কাজ করবে ভারত সরকারের মোক্ষম একটা চাল। সিন্ধু নদ- ইন্দাস ওয়াটার ট্রিটি। একেবারে গদি উল্টে যাবার মত অবস্থা হতে পারে শাহবাজ শরীফ সরকারের। আর সেটাই যদি হয় তাহলে পাকিস্তান মরুভূমি হতে খুব বেশি সময় নেবে না। দীর্ঘ ৬২ বছর ধরে সিন্ধু নদ নিয়ে পাকিস্তানের সঙ্গে যে শান্তিপূর্ণ সহবত ভারত বজায় রেখেছিল, সেটা ভেঙে যেতে পারে। আর ভারত যদি সেটাই করে তাহলে পাকিস্তানের জন্য সেটা দারুণ বিপদ ঘনিয়ে আনবে। কারণ পাকিস্তানের অন্যতম প্রধান নদ হচ্ছে সিন্ধু। সুতরাং…ওয়েল…ওয়েল…ওয়েল…একটা দুর্দান্ত আল্টিমেটাম হতে চলেছে শাহবাজ শরীফের জন্য। বিষয়টা আরও পরিষ্কার করা যাক।
সিন্ধু নদ। পাকিস্তানের অন্যতম প্রধান নদ। যার ওপর পাকিস্তানের ৭৫% মানুষ নির্ভরশীল। ঐ দেশের ৯০% কৃষিকাজ হয়ে থাকে সিন্ধু নদের মাধ্যমে। একইসঙ্গে পাকিস্তানের জিডিপির ২৫% নির্ভরশীল সিন্ধু নদের ওপরেই। সুতরাং ভারত যদি এবার পাকিস্তানের বিরুদ্ধে কড়া মনোভাব দেখানোর জন্য ইন্দাস ওয়াটার ট্রিটি সংশোধনের জন্য মাঠে নামে, তাহলে পাকিস্তানের কপালে কিন্তু ভালোরকম দুঃখ রয়েছে। কিন্তু তার আগে বলা যাক ইন্দাস ওয়াটার ট্রিটি আসলে কী? কেনই বা প্রয়োজন পড়ল আর এই বিষয়ে পাশ্চাত্য দুনিয়ার ইন্টারেস্ট কী ছিল? সাল ১৯৪৮। ভারত এবং পাকিস্তানের মধ্যে যুদ্ধ শুরু হল। সেই যুদ্ধের পরে ইন্দাস ওয়াটার ট্রিটির প্রয়োজন পড়ল। কেন? পার্টিশন হবার পর দেখা গেল, ১৯৪৮ সালে কাশ্মীরে বারবার পাকিস্তানের অনুপ্রবেশ নজরে আসে। তার জন্য ভারতের কিছু ইঞ্জিনিয়ার বাঁধ তৈরির জন্য আগ্রহী হন। আর এটাই পাকিস্তানের চক্ষুশূল হয়ে ওঠে। তারা ঠিক করে, সিন্ধু জলবন্টন চুক্তি করতেই হবে। ভারতের জন্য সেটা কোনভাবেই থ্রেট ছিল না, কিন্তু পাকিস্তান এটাও বুঝতে পারেনি যে, ইন্দাস ওয়াটার ট্রিটি হলে সেটা ভবিষ্যতে বিপদে ফেলতে পারে পাকিস্তানকেই। যাই হোক, পাকিস্তান যখন ওয়ার্ল্ড ব্যাঙ্কের কাছে অ্যাপ্রোচ করল, তখন দেখা গেল যে, ওয়ার্ল্ড ব্যাঙ্ক ১৯৬০ সালে ভারত এবং পাকিস্তানের মধ্যে ইন্দাস ওয়াটার ট্রিটি সাইন করানোর কাজটা ভালোভাবে সেরে ফেলল। সত্যি বলতে গেলে, এই ট্রিটি বা চুক্তি সেই সময়ের ইতিহাসে সবচেয়ে শান্তিপূর্ণ একটি চুক্তি ছিল। এই নিয়ে সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোয়াইট আইসেনহাওয়ার বলেই দিলেন যে, এই ট্রিটি যেন হতাশার দুনিয়ায় একটা ব্রাইট স্পট হিসেবে থেকে যাবে। সেটা অনেকটাই সত্যি। আর সেই বার্তা বরাবরই ভারত দিয়ে এসেছে। চেয়েছে শান্তিপূর্ণভাবেই ইতিহাসের রিপিটেশন হতে থাকুক।
সিন্ধু নদ জম্মু এবং কাশ্মীরের লাদাখ অঞ্চলের মধ্যে দিয়ে প্রবাহিত হয়ে সটান চলে গিয়েছে গিলগিট-বালতিস্তানের দিকে। তারপর এই সিন্ধু নদ করাচির বন্দর নগরির কাছে আরব সাগরে গিয়ে মিশেছে। পাকিস্তানের প্রধান নদ হচ্ছে এই সিন্ধু নদ। এবার দেখা যাক বিষয়টা। তার মানে কী দাঁড়াল? ভারত হচ্ছে সিন্ধু নদের আপার রিপেরিয়ান নেশন। কারণ ভারত থেকেই যেহেতু সিন্ধু নদ নেমে গিয়েছে পাকিস্তানের দিকে। আর পাকিস্তান হল ডাউন স্ট্রিম রিপেরিয়ান নেশন। কিন্তু এখানেই একটা ব্যপার। দেখুন, ভারত যেহেতু আপার রিপেরিয়ান নেশন, তাই জলপ্রবাহের পুরোটাই কন্ট্রোল করার ক্ষমতা রয়েছে ভারতের। যা পাকিস্তানে গিয়ে মিশছে। কিন্তু এতগুলো বছর ধরে ভারত সেই কাজটা একবারের জন্য করেনি। কিন্তু সবথেকে অবাক করা বিষয় কি জানেন? সিন্ধু নদের ১৬৮ মিলিয়ন একর ফুটের মধ্যে মাত্র ৩৩ মিলিয়ন একর ফুট রয়েছে ভারতের হাতে। বাকি পুরোটাই থেকে গিয়েছে পাকিস্তানে। সুতরাং পাকিস্তানের জন্য সিন্ধু নদ সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ। এই নদে যে পরিমাণ মিনারেল রয়েছে সেটা কৃষিকাজের জন্য খুব ভালো। কারণ এই নদের জলে রয়েছে ক্যালসিয়াম, পটাশিয়াম, আয়রন এবং জিঙ্ক। যাই হোক, কিন্তু ইন্দাস ওয়াটার ট্রিটি কেন করতে হল ভারতকে? দেখুন পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী মুহম্মদ আলি জিন্নাহ একবার বলেছিলেন, পাকিস্তান মরুভূমি হবে তো হবে তবু হিন্দুদের থেকে জল নেওয়া যাবে না। ওদিকে নেহেরু শান্তির পক্ষে হেঁটেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, দুই দেশের মানুষের জন্য সিন্ধু নদের জল খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তাই পাকিস্তানের সঙ্গে সহযোগিতার হাত বাড়ানোর জন্য এই ট্রিটি দারুণ হতে পারে। কারণ সেই সময় পাকিস্তানকে ৭৬% জল দেবার কথা ঘোষণা করেছিল ভারত। কিন্তু পাকিস্তান চেয়েছিল ৮০%। সেটা ওয়ার্ল্ড ব্যাঙ্কের জন্য দারুণ একটা কাজ করল। ওয়ার্ল্ড ব্যাঙ্কে সবচেয়ে বেশি ছড়ি ঘোরায় আমেরিকা। আর আমেরিকা তো পাকিস্তানের সংসার সামলাচ্ছিল। সুতরাং এই ট্রিটি সাইন হতে খুব একটা বেশি সময় লাগেনি। আর এই কারণে এই ট্রিটি সাইনকে নেহেরুর সিক্সথ ব্লান্ডার বলা হয়। কিন্তু দেখুন, নেহেরু কি চেয়েছিলেন যে দুই দেশের মধ্যে শান্তির সম্পর্ক বজায় থাকুক। পাকিস্তান কি সেটা করল? বরং উল্টে ভারতের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকের মত একের পর এক যুদ্ধে নেমে পড়ল। তৎকালীন আমেরিকার এক উকিল ডেভিড লিলিয়েনথাল যিনি এই ট্রিটির সময় একেবারে সামনে ছিলেন, তিনি পর্যন্ত বলেছিলেন, পাকিস্তান সৈন্য-সামন্ত, বোমা-বন্দুক ইত্যাদিকে কাজে লাগিয়ে নিজের শত্রুদের ওপর আঘাত আনতে পারে, কিন্তু ভারত শুধু সিন্ধু নদের জল আটকে পাকিস্তানকে দিশেহারা করে দেবার ক্ষমতা রাখবে। এবার আসা যাক ঘুরিয়ে একটু অন্য প্রসঙ্গে।
পাকিস্তানের দিকে আঙুল তোলার আরেকটা কারণ যদি দেখা হয়, তাহলে সেটা হচ্ছে, ভারতের একের পর এক ইন্দাস রিভার প্রোজেক্টে পাকিস্তানের লাগাতার বিরুদ্ধাচারন। ২০১৫ সালে পাকিস্তান ভারতের সিন্ধু নদের ওপরে তৈরি হওয়া হাইড্রোপাওয়ার ড্যাম তৈরির ওপর প্রশ্ন তুলে দেয়। সেই সময় পাকিস্তান চলে যায় ওয়ার্ল্ড ব্যাঙ্কের কাছে। তারপর ২০১৬ সালে পাকিস্তান ফের পৌঁছে যায় হেগের কোর্ট অফ আরবিট্রেশনে। এখানে বলি, যদি দুই দেশের মধ্যে সামান্য মতবিরোধ থাকে তাহলে সেটার নিষ্পত্তি ওয়ার্ল্ড ব্যাঙ্ক করতেই পারে। কিন্তু দুই দেশের মধ্যে যদি আসমান-জমিন ঝামেলা বিভেদ তৈরি হয় তখন প্রয়োজন পড়ে কোর্ট অফ আরবিট্রেশনের। পাকিস্তান অবশ্যই একজন নিউট্রাল এক্সপার্ট খুঁজছিল। অদ্ভুতভাবে ওয়ার্ল্ড ব্যাঙ্ক প্রথমে নিউট্রাল এক্সপার্ট এবং কোর্ট অফ আরবিট্রেশনকে একসঙ্গে অ্যাপয়েন্ট করেছিল যেটা সম্পূর্ণভাবে বেআইনি। তারপরেই অদ্ভুতভাবে নিউট্রাল এক্সপার্ট এবং কোর্ট অফ আরবিট্রেশনের ওপর এই বিষয়ে কাজ করার ব্যাপারে রেড সিগন্যাল দেয়। কিন্তু আর নয়। এবার মোদী সরকার ঠিক করেছে, এক এক করে জমা হওয়া জল বিন্দু যা সিন্ধুতে পরিপূর্ণতা পেয়েছে, তাকে কোনভাবেই আর সমঝোতার জায়গায় রাখা যাবে না।
তাহলে দেখলেন তো। মোদী সরকারের রক্তচক্ষুর পরিণাম? আজ যদি সত্যিই ভারত সরকার এই সিদ্ধান্ত নেয়, তাহলে শাহবাজ শরিফের চেয়ার উল্টে যাওয়া আর সময়ের অপেক্ষা। আর বলাই বাহুল্য, মোদী সরকারের এই দুর্দান্ত প্ল্যানিং আজ পাকিস্তানের অবস্থা খারাপ থেকে খারাপতর করতে পারে। আপনি কি মনে করেন? সত্যিই কি ভারতের এই ট্রিটি নিয়ে আরেকবার ভাবা উচিৎ? সুযোগ দেওয়া উচিৎ পাকিস্তান সরকারকে?
বিজনেস প্রাইম নিউজ।
জীবন হোক অর্থবহ