Trending
‘Make new friends but keep the old.’- পার্সোনাল রিলেশনশিপ হোক বা জিওপলিটিক্যাল- কথাটার গুরুত্ব কিন্তু একইরকম। কেন বলছি? প্রসঙ্গ আমেরিকা এবং পাকিস্তান প্রতিরক্ষা চুক্তি। চুপিসারে CIS-MOA বা Communications Interoperability and Security Memorandum of Agreement স্বাক্ষর করেছে দুই দেশ। কী এই চুক্তি? এই চুক্তি আমেরিকা থেকে অস্ত্র কেনাবেচা সহজ করে। এর ফল কি হতে পারে? মারাত্মক। যে চুক্তি আমেরিকা যত্ন করে সংরক্ষন করে, এখন সেই চুক্তিপত্রে সই করলো পাকিস্তানের সঙ্গে? আর তা যদি হয়ও, তাতে এত রাখঢাক কেন? দুই দেশের তরফে অফিসিয়ালি কোন খোলাসা করা হল না কেন? সন্দেহ দানা বাঁধছে এখানেই। ওয়াশিংটন-ইসলামাবাদের এই গাঢ় বন্ধুত্ব ভারতের কাছে কোন বিপদসংকেত নয় তো?
পাকিস্তানের সঙ্গে আমেরিকার এই চুক্তির খবর কিন্তু একেবারেই উড়িয়ে দেওয়ার মতো নয়। কেন এই চুক্তি এত ইম্পরট্যান্ট জানেন? কারণ, এই চুক্তি আমেরিকা সচরাচর কোন দেশের সঙ্গে করে না। কেবলমাত্র তার বন্ধুরাষ্ট্রের সঙ্গেই করে। তাও আবার সামরিক এবং প্রতিরক্ষা সাপোর্ট বজায় রাখার জন্য। মানে দেখুন, ভারত আমেরিকার সম্পর্ক এখন বেশ মাখোমাখো। অথচ সম্পর্কের বুনিয়াদ মজবুত করতে বাকী চারটে চুক্তিতে ভারতের সঙ্গে হাত মেলালেও CIS-MOA কিন্তু স্বাক্ষর করেনি। সুতরাং এখান থেকে একটা প্রশ্ন একদম স্পষ্ট। আমেরিকা কি পাকিস্তানকে নতুন অস্ত্র বেচতে চাইছে? যদি এর উত্তর হ্যাঁ হয়, তাহলে কিন্তু সেটা বেশ চিন্তার।
অবশ্য আমেরিকা পাকিস্তানের এই ডিফেন্স সেলস হিস্ট্রি আজকের নয়। বেশ পুরনো। ২০০৫ সালে প্রথম এই দুই দেশ CIS-MOA স্বাক্ষর করে। যার মেয়াদ থাকে ১৫ বছর। নিয়ম অনুযায়ী ২০২০ সালে এই মেয়াদ শেষ হয়ে যায়। তারপর আবারও ২০২৩-এ এর পুনরাবৃত্তি। কেন? আর কেনই বা ২০২০ সালে মেয়াদ শেষ হওয়ার পর রিনিউ করা হল না? এর উত্তরে অবশ্য অনেকেই বলেছেন, তৎকালীন পাক সরকার ইমরান খানের সঙ্গে আমেরিকার তিক্ত সম্পর্কের কথা। শুধু কি এটুকুই? না। শুধু এটুকুই নয়। এখানেও চিনের কারসাজি রয়েছে। আসছি সে বিষয়ে। তার আগে এটা ভাবুন, ২০২৩-এ দাঁড়িয়ে এই চুক্তি হঠাৎ গুরুত্বপূর্ণ হয়ে গেল কেন? দেখুন ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক মজবুত করতে জো বাইডেন কখনই কিছুর সঙ্গে আপোষ করেননি। কিন্তু, সত্যিই যদি আমেরিকা পাকিস্তানকে অস্ত্র বেচে, তাহলে কিন্তু বিষয়টা অ্যালারমিং। বাইডেন সরকার কী এত বড় রিস্ক নেবেন? না। একেবারেই না। বিশেষজ্ঞদের একাংশের অন্তত এটাই দাবি। কিন্তু যেভাবে পার্টিকুলারলি এই ডিলটা হ্যান্ডেল করা হল, বিষয়টায় কেমন যেন টক টক গন্ধ, তাই না!
পাকিস্তান হচ্ছে আমেরিকান অস্ত্র বেচার সবচেয়ে বড় মার্কেট। পাস্ট হিসেব অন্তত সেই রেকর্ডই দিচ্ছে। ২০০৬ সালে প্রায় সাড়ে তিন বিলিয়ন ডলারের ডিফেন্স ডিল হয় দুই দেশের মধ্যে। দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক ভাঙতে এবং পাকিস্তানের উপর ছড়ি ঘোরাতে সেই মার্কেট ক্যাপচার করার সিদ্ধান্ত নেয় চিন। কয়েকবছর চিনের তৈরি করা অস্ত্র ব্যবহারও করে পাকিস্তান। ২০১৭ থেকে ২০২২ পর্যন্ত পাকিস্তানের ৭২ শতাংশ ডিফেন্স মার্কেটই চিনের নখদর্পণে ছিল। আপনারা প্রশ্ন করবেন, তাহলে এখন কীসের সমস্যা হল? সমস্যা হচ্ছে কোয়ালিটি নিয়ে। চিন থেকে যে সমস্ত অস্ত্র আসছিল সেগুলো নাকি সাবস্ট্যান্ডার্ড। পাকিস্তান আর্মি দীর্ঘদিন ধরেই এই অভিযোগ করে আসছিল। প্রসঙ্গত, বলে রাখা ভালো আমেরিকার তরফে পাওয়া এফ ১৬ কিন্তু আজও পাকিস্তানের ফ্রন্টলাইন জেট। সুতরাং ডিফেন্স স্ট্রং করতে পাকিস্তান আমেরিকাকেই পাশে চায়।
যাই হোক। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, ভারত কীভাবে এই বিষয়টা দেখছে? এফ-১৬ এর মেরামতি বলুন বা পুরনো অস্ত্রের ঘষামাজা- পাকিস্তান এসব সামরিক বিভিন্ন কাজে আমেরিকার সাহায্য নিতেই পারে। সেটা দিল্লির মাথাব্যাথা নয়। হওয়ার কথাও নয়। কারণ ভারতের ডিফেন্স সিস্টেম এর থেকে অনেক বেশি সুপেরিয়র। কিন্তু, পরিস্থিতি যদি এর চেয়ে বেশি কিছু হয়? তখন? আমেরিকা যদি পাকিস্তানকে নতুন অস্ত্র বেচে? সেটা কিন্তু ভারতের কাছে চিন্তার জন্য যথেষ্ট বড় কারণ। যদিও নতুন অস্ত্র বেচার বিষয়ে বাইডেন সরকার এখনই কিছু বলেননি।
আচ্ছা, আরেকটা বিষয় ভেবেছেন? ৯/১১-এর সেই বিভীষিকা, মার্কিন মুলুকে টুইন টাওয়ার অ্যাটাক, ২ হাজারেরও বেশি মানুষের মৃত্যু- যে ঘটনা মনে পড়লে আজও শিরদাঁড়া দিয়ে ঠাণ্ডা স্রোত বয়ে যায়, সেই ঘটনার মূল চক্রান্তকারি ওসামা বিন লাদেনকে পাকড়াও করার জন্য আমেরিকা কিন্তু পাকিস্তানকে সবচেয়ে বেশি ভরসা করেছিল। আমেরিকার সেই ভরসা ভেঙে চুরমার করেছিল পাকিস্তান। বেইমানি করেছিল বললেও ভুল বলা হবে না। কারণ লাদেনকে আমেরিকার হাতে তুলে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে দীর্ঘদিন পাকিস্তান কিন্তু আমেরিকার বন্ধুত্বের সুযোগ নিয়েছে। শুধু বন্ধুত্ব নয়। আর্থিক সুযোগও নিয়েছে। আর তারপর? তারপর সেই চক্রান্তকারিকে খুঁজে পাওয়া যায় খোদ পাকিস্তানের মাটি থেকে। স্ট্রেঞ্জ! এসব ঘটনা কি আমেরিকা ভুলে গিয়েছে? না, আমেরিকা তো পুরনো ঘটনা ভুলে যাওয়ার মতো দেশ নয়। তাহলে কি এর চেয়ে বড় কোন স্বার্থ লুকিয়ে আছে?
আজকের দিনে দাঁড়িয়ে এটুকু পরিষ্কার যে পাকিস্তানের একটা স্ট্র্যাটেজিক ভ্যালু রয়েছে আমেরিকার কাছে। ভারতের অর্থনীতি মজবুতিকরনের মুখে চেয়ে আমেরিকা কিন্তু পাকিস্তানকে কার্যত ব্রাত্য করে রেখেছে। না সেরকমভাবে পাকিস্তান ভিজিট করেছে বাইডেন সরকার, না ব্যবসা-বাণিজ্যের চাকা গড়িয়েছে। তবে এসব জিওপলিটিক্যাল অ্যাঙ্গেলে বদল আসলেও একটা বিষয় কিন্তু কন্সট্যান্ট থেকে গিয়েছে। দুই দেশের মিলিটারি রিলেশনশিপ। সেটা যথেষ্ট মজবুত। পাকিস্তান হচ্ছে আমেরিকার একটা ব্যাড হ্যাবিট যেটা তারা ঝেড়ে ফেলতেও পারছে না। কিন্তু কেন?
না না। চিনের প্রতিদ্বন্দ্বিতা করাটাই একমাত্র কারণ নয়। কারণটা হচ্ছে পাকিস্তানের পারমানবিক অস্ত্র। যে কারণে আমেরিকা ইজ স্টিল ইন দিস গেম। পাকিস্তানের সঙ্গে চিনের এই বন্ধুত্বে রীতিমত সন্ত্রস্ত আমেরিকা। পাকিস্তানের পারমানবিক অস্ত্র কোনোভাবে ভুল হাতে চলে যাবে না তো? আর সেই জন্যই কি CIS-MOA-এর মতো এত গুরুত্বপূর্ণ একটা চুক্তি স্বাক্ষর? বাট যতই যাই হোক, এটা আগেও একটা রিস্কি গেম ছিল, এখনও আছে। এবং আগামীতেও তাই থাকবে। তবে তাই বলে ভারত কখনই পাকিস্তানের সঙ্গে মিলিটারি কোঅপারেশন অব্যাহত রাখবে, এবং মুখ বুজে সবটা মেনে নেবে, এমনটা নয়। প্রয়োজনে সেখানে রেড লাইন ড্র করতে ভারত দুবার ভাববে না। এবং কখন, কোথায়, কীভাবে সীমারেখা টানা হবে, সেটা কিন্তু ভারতই ডিসাইড করবে। আমেরিকা বা পাকিস্তানের এই ডিল কি কোনোভাবে ভারতকে ব্যাকস্ট্যাব করতে পারে? আপনার কী মনে হয় জানান কমেন্ট বক্সে। সঙ্গে…
বিজনেস প্রাইম নিউজ
জীবন হোক অর্থবহ