Trending
পাকিস্তানের দিকে হাসি হাসি লোভাতুর চোখে তাকিয়ে রয়েছে চিন। কেন বলুন তো? সময় আর সুযোগের অপেক্ষা। এতদিন ধরে যে ধার দিয়ে এসেছে, সেটা কি এমনি এমনি? পাকিস্তান হাত তুললেই খপাৎ করে ধরবে পাকিস্তানের প্রশাসনকে। তারপরেই শুরু হবে একের পর এক অধিগ্রহণ। শ্রীলঙ্কার হাম্বানটোটা বন্দরের কথা ভুলে যাচ্ছেন? মোদ্দা কথা হল, ডুবে যাওয়া পাকিস্তানকে বাঁচাতে টাকা-পয়সা দিয়ে চিন সাহায্য করতেই পারে। সংসারে বড়দাভাই যেমন করে থাকে আর কী। কিন্তু তার পেছনে যে শানিত হাসি আর ক্ষুরধার বুদ্ধি কাজ করছে, সেটা কী পাকিস্তানের পাবলিক জানেন না? আরে বাবা তারাও সব জানেন। কিন্তু করবেনটা কী? পাকিস্তান যেভাবে ফরেক্স রিজার্ভ হারাচ্ছে, তারপর মনে করা হচ্ছে, পাকিস্তান যদি ঋণ সাগরে পুরোপুরি ডুবে যায় তাহলে কিন্তু ভারতের জন্য সেটা বেশ ভয়ের কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। কেন সেটা নিয়েই আলোচনা সারব আজকের প্রতিবেদনে।
দেখুন পাকিস্তানের ইকোনমিক স্টেবিলিটি কোনদিন ছিল না। হ্যাঁ এটা ঠিক যে একটা সময় ইন্ডিয়ান ইকোনমির দিকে তাকালে পাক অর্থনীতিকে অনেকবেশি প্রোগ্রেসিভ মনে হত। কিন্তু পাকিস্তানের প্রশাসন যে চরম অপদার্থতার প্রমাণ দিয়ে চলেছে তারপর কী আর কোনভাবে কোনদিক থেকে আশার আলো দেখা যাচ্ছে? মনে হয় না। পাকিস্তানে পলিটিক্যাল ইনস্টেবিলিটি নিয়ে বেশি কথা না-বলাই বেটার। সেটা সকলেই জানি। এদিকে সেই সুযোগ পুরোমাত্রায় কাজে লাগাচ্ছে চিন। চিনের সর্বময় কর্তা জিংপিং-এর অঙ্গুলিহেলনে রিসেন্টলি পাকিস্তানের কাছে ১ বিলিয়ন ডলারের বেশি অর্থসাহায্য পৌঁছে গিয়েছে। তাতেই বেশ গদগদ একটা ব্যপার লক্ষ্য করা যাচ্ছে। কারণ…পাকিস্তানের কাছে কিছুই নেই। নিজেদের রিভাইভ করার প্রচেষ্টা একেবারে ব্যর্থ। ব্যর্থ বলা ঠিক হবে না। কাজ করলে তখন সাকসেস, ফেলিওরের প্রসঙ্গ আসে। এদের মধ্যে তো কোন চেষ্টাই নেই। পাকিস্তান সবসময় তাকিয়ে থাকে চিনের দিকে। চিন যদি বলে হ্যাঁ, পাকিস্তানও বলে হ্যাঁ। চিন যদি বলে না, পাকিস্তানকে গাধা বলা ঠিক শোভা পায় না। কবীর সুমনের গানের একটা লাইন তুলে বলছে, পাকিস্তান এখন যেন ‘হ্যাঁ হ্যাঁ বলা সং’।
এদিকে পলিটিক্যাল ইনস্টেবিলিটির কারণে চিন সহমর্মিতা দেখালেও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো পাকিস্তানের কান্না ভেজা চোখের দিকে তাকাতে নারাজ। আইএমএফ সাফ জানিয়ে দিয়েছে, ধারের টাকায় নিজেরা ফুর্তি করবে আর সাধারণ মানুষ পাবে লবডঙ্কা, সে আর হবে না। সুতরাং আইএমএফের কাছ থেকে পাকিস্তান এখন হতাশা ছাড়া আর কিছু পাবে বলে মনে হয় না। ফলে ঋণের বোঝা আরও বাড়ছে। পাকিস্তান দেশটা এখন চলছে কিভাবে? এর থেকে, তার থেকে ধার নিয়ে। মানে হেরা ফেরি পুরো। এর থেকে টাকা নিয়ে অন্যকে মেটাচ্ছে। আবার আরেকজনের থেকে টাকা নিয়ে আরেকজনকে। এভাবে আর কতদিন চলা সম্ভব? অর্থনৈতিক সংকট দিন দিন তীব্র থেকে তীব্রতর হচ্ছে। ফলে সরকার চালানো এখন কার্যত চ্যালেঞ্জিং বিষয় হয়ে দাঁড়াচ্ছে পাক প্রশাসনের কাছে। বর্তমানে পাকিস্তানের ফরেক্স রিজার্ভ রয়েছে রেকর্ড লো-তে। অঙ্কটা ঐ ৩ হাজার ২০০ কোটি ডলার। ২২ কোটির দেশে এই টাকাটা কোথায় কাজে লাগাবে শরিফ প্রশাসন? একমাস হয়ত মেরেকেটে চালানো সম্ভব। তারপর? সঙ্কটের গভীরতা এমনই যে বর্তমানে পাকিস্তান আমদানি প্রায় বন্ধ করে দিয়েছে। আর আমদানি বন্ধ মানে বাজারে পণ্যের টান। টান পড়লেই বাড়ে দাম। আর দাম বাড়লে ছোটে ঘাম। সেটাই তো অবস্থা বর্তমান পাক নাগরিকদের। আর এসবের দিকে তাকিয়ে ওপর থেকে মিটিমিটি হাসি দেয় চিন। তাদের আশা ভরসা হতদরিদ্র পাকিস্তান যাতে আরও ডুবে যায়। যত পাক ডুববে, তত ফুলেফেঁপে উঠবে চিন। আমরা সকলেই জানি, চিন বিনিয়োগ করলেও সেটা নিজের লাভ ছাড়া করে না। তারা এক ইঞ্চি সুতো বিক্রি করলেও মনে করা হয়, কে বলতে পারে যে কবে চিন সেই সুতো ধরে দেবে এক জোরসে টান! পাকিস্তান সব জানে, সব বোঝে। তবু না আছে তাদের নিজস্ব কোন মান-সম্মান। অগত্যা, চিন ছাড়া গতি নেই তাদের। এভাবে কি আর জিও পলিটিক্সে টিকে থাকা যায়? চিনের আগ্রাসী নীতি নিয়ে চুপ পাকিস্তান। তারা জেনেও নিজেদের ঘরে মনোযোগ দেবার কোন বালাই নেই। ধারের টাকা দিয়ে যে এতো এতো ব্যাঙ্ক ব্যালেন্স গোছানোর কাজ সরকারের ওপরতলার মাথাগুলো করেছে, এখন সাফার করছে সাধারণ মানুষ। না আনতে পারছে কোন জবরদস্ত পলিসি। না তৈরি করতে পারছে ব্যবসা। না করতে পারছে পাকিস্তানের যুব সমাজের জন্য কোন দুর্দান্ত পলিসি মেকিং। এদিকে রাশিয়া একটু হেসে তেল পাঠাবে বলেছে। আজারবাইজানে গিয়ে হেসে হেসে কথা বলেছেন পাক প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফ। আর কোথায় যেন আম পাঠালেন? ও, হ্যাঁ। তুর্কিতে প্রেসিডেন্ট পদে জয়ী হয়েছেন এরদোয়ান। আম পাঠানোর কথা হেসে হেসে বলতে চরম ট্রোলের শিকার হয়েছেন তিনি। পাকিস্তানের আম পাবলিক সেই কাজটি দায়িত্ব সহকারে করেছে। কিন্তু তারপরেও কী শুধরোনোর কোন পরিকল্পনা পাকিস্তানের রয়েছে?
এদিকে পাকিস্তান যদি একেবারে সর্বস্বান্ত হয়ে পড়ে তাহলে চিন খুশি হলেও ভারতের মুখে মিলিয়ে যাবে হাসি। তার কয়েকটা কারণ রয়েছে। প্রতিবেশী তথাকথিত শত্রু দেশটি নিঃস্ব হয়ে গেলে ভারত বরং পড়বে প্রবল উদ্বেগে। এমনটাই মনে করছে আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞরা। কেন জানেন? টাকা ছাড়া ফক্কা সবই। সুতরাং পাকিস্তানের ভাঁড়ার শূন্য হয়ে গেলে প্রশাসনের কোন নিয়ন্ত্রণ থাকবে না। তখন সেটা সন্ত্রাসবাদীদের স্বর্গরাজ্য হয়ে উঠতে পারে। যেটা ভারতের জন্য চরম থ্রেট হিসেবে ধরা দেবে। ভারতে সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপ আরও দিন দিন বৃদ্ধি পাবে। বিঘ্নিত হবে ভারতের শান্তি। আর যাই হোক সন্ত্রাসবাদীরা তো বসুধৈব কুটুম্বকমের অর্থ জেনে হাসি হাসি মুখে ভারতকে ছেড়ে দেবে না। দ্বিতীয় সমস্যা যেটা খুব প্রবল আকার নিতে পারে, সেটা হল উদ্বাস্তু সমস্যা। এখন যেভাবে শরিফ প্রশাসন ‘চোপ, সরকার চলছে’ গোছের একটা বেদবাক্য সবার মনে ঢুকিয়ে দিয়েছে, তারপর কার্যত প্রবল অসন্তোষ তৈরি হয়েছে পাকিস্তানের সাধারণ মানুষের মনে। ইতিপূর্বেই আমরা দেখেছি, পাকিস্তানের বিভিন্ন জায়গায় সরকারের প্রতি তৈরি হয়েছে চরম অনাস্থা। এই সময় তারা ভারতীয় মুসলমানদের দিকে তাকাচ্ছেন এবং কার্যত কপাল চাপড়াচ্ছেন। আইনশৃঙ্খলা যদি লাটে ওঠে, তখন নিজেদের ভবিষ্যৎকে অন্ধকারে না-ঠেলে বরং ভারতে চলে আসাটাই বেটার মনে করবেন তাঁরা। সেটা ভারতের জন্য উল্টো বিপদ ঘনিয়ে আনতে পারে। পাকিস্তানের এক হাতে রয়েছে পারমাণবিক অস্ত্র। আর অন্য হাতে রয়েছে ভিক্ষার ঝুলি। ভিক্ষম দেহি বলে পাকিস্তান লাফিয়ে পড়বে। ভেঙ্গেচুরে যাবে অর্থনীতি। সন্ত্রাসবাদীদের মুক্তাঞ্চল হবে গোটা দেশ। আর তখনই যদি পারমাণবিক অস্ত্র তারা হাতে তুলে নেয়! মানবিক হলে পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারে না-হয় দশবার ভাবা যায়। কিন্তু অ-মানবিক মানুষের হাতে গেলে তো হয়ে গেল! সেটা শুধু ভারতের জন্য নয়। বিশ্বের জন্য থ্রেট হতে পারে। আর পাকিস্তানের সেনাবাহিনী। এঁরা আসলে একটা কোম্পানি চালান। সেনাবাহিনী কোটি কোটি ডলারের মালিক। আরও টাকা কামানোর জন্য এদিকে ওদিকে সব বিক্রি করতে শুরু করে দেবে। আর সবশেষে বিগ ব্রাদার চিনের হাসি হবে আকর্ণ। তারা পাকিস্তানকে ব্যবহার করবে তুরুপের তাস হিসেবে। কার বিরুদ্ধে বলুন তো? আদায়-কাঁচকলা সম্পর্ক যার সঙ্গে। অর্থাৎ ভারতের বিরুদ্ধে। সুতরাং পরিস্থিতি যেদিকে এগোচ্ছে, এখন মনে হচ্ছে পাকিস্তান নিঃস্ব হলে বরং ভারতের জন্য সেটা উদ্বেগের কারণ হতে পারে।
বিজনেস প্রাইম নিউজ।
জীবন হোক অর্থবহ