Trending
হাত সরিয়ে নিয়েছে চিন। একইভাবে সরে গেছে আরব দুনিয়া। এই অবস্থায় দাঁড়িয়ে পাকিস্তানের গলায় ফাঁস যেন আরও চেপে বসছে। এখন পরিস্থিতি যে-দিকে এগোচ্ছে, আর হয়ত কয়েক সপ্তাহ। তারপরই দেখা যাবে, শ্রীলঙ্কার মতন হয়ত আর্থিকভাবে দেউলিয়া ঘোষণা করা হতে পারে পাকিস্তানকে। যত দিন যাচ্ছে, ততই আর্থিক অনিশ্চয়তায় ডুবছে পাকিস্তান। পরিস্থিতি সামাল দিতে গেলে আরও লোনের বোঝা চাপাতে হতে পারে। তার জন্য পাকিস্তানের কাছে একমাত্র দরজা খোলা রয়েছে আইএমএফের। কিন্তু আইএমএফ নিজেও পাকিস্তানকে ফের ধার দিতে নারাজ। ফলে পাকিস্তানের ভবিষ্যৎ এখন শুধুই অন্ধকার। এদিকে ভারতের কাছ থেকে সাহায্য চাইতেও পারছে না। তার মানে কি? সবদিকেই শাঁখের করাত! তাহলে কি খেল খতম হতে চলেছে পাকিস্তানের? আসুন, আজ এই নিয়ে ছোট্ট একটা প্রতিবেদনে আলোচনা সেরে নেওয়া যাক।
সত্যি বলতে গেলে, দেশ স্বাধীন হবার পর যখন ভারত পাকিস্তান আলাদা হয়ে গেল, তারপর কিন্তু পাকিস্তান সবদিক থেকেই ভারতকে টেক্কা দিতে পারত। এমনকি সেই সময় পাকিস্তানের জিডিপি বা পাকিস্তানের প্রতিটি মানুষের দৈনিক রোজগার ভারতের থেকে বেশি ছিল। মুশকিল হচ্ছে, পাশা পাল্টে গেল। যখন পাকিস্তান চালানোর জন্য এগিয়ে এলো সামরিক বাহিনী। দেখা গেল, দীর্ঘ ৭৫ বছরের এই শাসন আসলে পাকিস্তানকে ফেলে দিল সেই তিমিরেই। অন্যদিকে ভারতের পলিটিক্যাল স্টেবিলিটি, ধীরে ধীরে নিজের দেশে ইন্ডাস্ট্রি, দেশবাসীর মান, রোজগার সবই ভারতকে এগিয়ে নিয়ে যেতে শুরু করে। কিন্তু পাকিস্তান ভারতে অস্থিরতা তৈরি করা ছাড়া দেশের আভ্যন্তরীণ পরিস্থিতির উপর নজর রাখতে ভুলে যায়। ফলে মিলিটারি বাজেট দিন দিন বাড়ানো ছাড়া পাকিস্তান নিজেকে উন্নয়নের হাতে ফেলে রাখতে পারল না। আর যে কারণে পরিস্থিতি খারাপ হতে হতে আজ পৌঁছে গেল এই পর্যায়।
গত ৫০ বছরে পাকিস্তানি মুদ্রার পতন হয়েছে ৪ হাজার ১০০ শতাংশ। ১৯৭২ সালে যেখানে ডলারের নিরিখে পাকিস্তানি মুদ্রার ভ্যালু ছিল ৪.৭৬ পাকিস্তানি টাকা, সেখানে আজ ১ ডলার খোলা বাজারে পৌঁছে গিয়েছে ২৫০ টাকায়। এখন অবস্থা এমনই দাঁড়িয়েছে যে পাকিস্তানে ফরেন রিজার্ভ রয়েছে মাত্র ৫.৮ বিলিয়ন ডলার মতন। এদিকে ঘাড়ের ওপর সুদের বোঝা চেপে রয়েছে ১২৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। স্বাভাবিকভাবেই পাকিস্তানকে আর কেউ সাহায্য করতে রাজি হবে কেন? আইএমএফের কাছে হাত পেতেছেন শাহবাজ শরিফ। কিন্তু সেখানেও মুখ পুড়েছে। প্রয়োজন পাকিস্তানের আর শাহবাজ শরিফ বলছেন, আইএমএফ নাকি নিজেই এগিয়ে এসেছে। ফোন করেছে। দেখা গেল, সেটাও একেবারে ভুল তথ্য। পাকিস্তানের অবস্থা এতটাই খারাপ যে পাকিস্তানকে ডিফল্ট ঘোষণা করা ছাড়া আর কোন উপায় নেই। পাকিস্তানে এই ঘোর সংকট কেন এলো?
১। রাজনৈতিক অস্থিরতা, ২। টাকার ঘাটতি, ৩। ডলারের দাম আকাশছোঁয়া, ৪। মিলছে না ধার এবং ৫। বিদেশি মুদ্রার পরিমাণে ব্যপক ঘাটতি।
এখন পাকিস্তানের হাতে মাত্র ৩ সপ্তাহ চালানোর মতন টাকা মজুদ রয়েছে। ১ বছরে পাকিস্তানে ধারের অঙ্ক বেড়েছে ২৪.২ শতাংশ। পাকিস্তানে মাত্র ৩ হপ্তা খাবার তেল মজুদ রয়েছে। বন্ধ হয়ে যাচ্ছে একের পর এক ইন্ডাস্ট্রি। বন্ধ হচ্ছে উৎপাদন। তার মধ্যে ইন্ডাস মোটর, সুজুকি এমনকি ট্রাক্টর কোম্পানিও কিছুটা বাধ্য হয়েই ইন্ডাস্ট্রি বন্ধ করার বিষয়ে সিলমোহর দিয়েছে। হু হু করে বাড়ছে খাদ্যপণ্যের দাম। আটার দাম পৌঁছে গিয়েছে ১৫০ টাকা কিলো। রান্নার গ্যাসের দাম আকাশছোঁয়া। কমার্শিয়াল সিলিন্ডারের দাম পৌঁছে গিয়েছে প্রায় ১০ হাজার টাকায়। চিকেন বিক্রি হচ্ছে কিলো প্রতি ৭০০ টাকায়। পিঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ২৮০ টাকা প্রতি কিলো। সর্ষের তেল ৬০০ টাকা প্রতি লিটার। ঘরে ঘরে জ্বালানির অভাব, খাদ্যপণ্যের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির কারণে হাহাকার দেখা যাচ্ছে। এমনকি টান পড়েছে চিকিৎসা ক্ষেত্রেও। বুকে স্টেন বসানোর মেশিন ইমপোর্ট করা বন্ধ হয়ে গিয়েছে। কিছু এমারজেন্সি অপারেশন হচ্ছে। বড় সার্জারি এখন হচ্ছে না। মল, মার্কেট বন্ধ করতে বলা হয়েছে রাত সাড়ে ৮-টার মধ্যে। পাকিস্তান আজ একেবারে খাদের ধারে এসে দাঁড়িয়েছে। পাকিস্তান এই পরিস্থিতি মোকাবিলা করবে কি করে? পাকিস্তান বিজনেস কাউন্সিল জানিয়েছে, সপ্তাহে ৪ দিন দফতর খোলা হবে। এক দিন চলবে ওয়ার্ক ফ্রম হোম। গাড়ি কেনার ওপর জারি হচ্ছে নিষেধাজ্ঞা। গ্যাসের দাম আরও বাড়িয়ে দেওয়া হোক। হোলসেলারস এবং রিটেলারস-এর ওপর ট্যাক্স লাগানো হোক। ডিজেলে লেভি ৩২.৫০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৫০ টাকা করা হোক। পেট্রোল এবং ডিজেলে ১০% ট্যাক্স লাগিয়ে দেওয়া হোক। এখানেও চরম সমস্যা। কারণ এখন যদি পাকিস্তান সরকার এই ধরণের শর্ত দেশবাসীর ওপর চাপিয়ে দেয়, তাহলে অবস্থার উন্নতি তো হবেই না। বরং খারাপ থেকে খারাপতর হবে। ফলে পাকিস্তানের জনগণের মধ্যেই এখন সরকার নিয়ে চরম অনাস্থা তৈরি হচ্ছে। পাকিস্তান যে আর্থিকভাবে পঙ্গু হচ্ছে, সে-কথা বেশ কিছুদিন আগেই স্বীকার করে নিয়েছিলেন, ইমরান খান। ভারতের বিদেশনীতির প্রশংসা করেছিলেন সর্বসমক্ষে। সেটাও আজ নেট মাধ্যমে ভাইরাল হয়ে গিয়েছে। ইমরান খান তখনই শাহবাজ শরীফ এবং মিলিটারির অঙ্গুলিহেলনের উৎপাত জনসমক্ষে এনেছিলেন। যদিও এখন শাহবাজ শরীফ ইমরান খানকেই পাকিস্তানের এই শনির দশার জন্য দায়ি করে থাকছেন। এখন পাকিস্তানের কাছে এই অন্ধকূপ থেকে বেরনোর জন্য নতুন করে আর কোন উপায় খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। কারণ পরিস্থিতি সামাল দেবার জন্য লোন নেওয়া ছাড়া সব দরজাই বন্ধ হয়ে গিয়েছে পাকিস্তানের কাছে। চিন যে আর পাকিস্তানের পাশে সেভাবে দাঁড়াবে না, বিষয়টা পরিষ্কার। কারণ, পাকিস্তানের হাতে যে ধার রয়েছে, তার মধ্যে ৩০% ধার দিয়েছে চিন। মনে করা হচ্ছে, পাকিস্তানে চিনের ধার রয়ে গিয়েছে ৩০ বিলিয়ন ডলার মতন। এই অবস্থায় দাঁড়িয়ে আর কেই বা পাকিস্তানকে সাহায্য করবে? অতএব আইএমএফ। কিন্তু সেই টাকা দিয়ে পাকিস্তান করবে কি? এখান থেকে ধার নিয়ে ওদিকে মেটানো আবার ওদিক থেকে ধার নিয়ে এদিকে মেটানো- এছাড়া পাকিস্তানের হাতে আর কোন অপশন নেই। সুতরাং পাকিস্তান এখন প্রায় দিশেহারা।
পাকিস্তানের স্বরূপ গোটা দুনিয়ার সামনে আরও বেশি প্রকট হয়ে পড়েছে ভারতের সূক্ষ্ম এবং নির্ভুল একটি চালে। অনেক দেশি, বিদেশি ডিপ্লোম্যাট মনে করছেন, পাকিস্তানের যে বেহাল অবস্থা তৈরি হয়েছে এবং তার জন্য পাকিস্তানের সরকার ছাড়া যে আর কেউ দায়ি নয় সেটা ভারত সর্বসমক্ষে প্রকাশ করেছে। যার অন্যতম টেরোরিস্ট অ্যাক্টিভিটি। তার মধ্যে ২৬/১১ হোক বা কাশ্মীর ইস্যু। ভারত সরকার শুধু পাকিস্তানের এই বেলাগাম টেরোরিস্ট অ্যাক্টিভিটির বিষয়টাই পরিষ্কার করে দিয়েছে সাধারণ মানুষের সামনে। আর যে কারণে পাকিস্তানে শিল্প আসা, উৎপাদনের চাকা ঘোরা সবই বন্ধ হতে শুরু করে। ফলে পাকিস্তানে বড় বড় দেশ এবং বড় বড় সংস্থা পাকিস্তানকে ধার দেওয়া বন্ধ করে দেয়। পরিস্থিতি যেদিকে যাচ্ছে, তাতে মনে করা হচ্ছে, পাকিস্তানের আর্থিক পরিকাঠামো ভেঙে পড়ার মুখে। শ্রীলঙ্কার মতনই অবস্থা তৈরি হচ্ছে পাকিস্তানে। এখন পাকিস্তান কি আদৌ নিজের দেশবাসীকে এই চরম সংকট থেকে বাঁচাতে পারবে? নাকি ভেঙে পড়বে চিরতরে আপাতত সেটাই দেখার। আর দেখতে থাকুন বিজনেস প্রাইম নিউজ।
জীবন হোক অর্থবহ