Story
দেবস্মিতা মণ্ডল, উত্তর ২৪ পরগণা: কাজ হারানোর হতাশায় না ডুবে বরং নিজেরাই কাজের কারিগর হয়ে গড়ে তুললেন অনন্য নজির। ১২ ঘরের মহিলারা তৈরি করলেন এক উঠোন। সমাজের সামনে রাখলেন স্বনির্ভরতার নতুন দিশা।
ছায়া সুনিবিড় এই গ্রামের নাম ঠাকুরনগর। উত্তর ২৪ পরগনা জেলার গাইঘাটা ব্লকের এই গ্রামেই
কৃষি দফতরের সহযোগিতায় ১২ জন মহিলা মিলে স্বনির্ভর দল গঠন করে তৈরি করলেন জৈব খামার। শ্রীমা স্বনির্ভর গোষ্ঠী তাই এই জেলাতে জৈব খামারে এক নতুন আইকন।
এক বিঘা জমির উপর গড়ে উঠেছে এই জৈব খামার। পুকুরের জলে যেমন মাছের চাষ হচ্ছে তেমনি সেই পুকুরে খেলা করছে খামারে বড় হওয়া বিভিন্ন প্রজাতির হাঁস।
কোয়েল থেকে বয়লার রানার টার্কি প্রায় সব ধরনের বাজার উপযোগী পাখি এখানে চাষ হয়। চাষ হয় প্রাণ পুকুরে ১২ ধরনের মাছ।
প্রতিদিন বাজার থেকে খামারের আয় হয় হাজার তিনেক টাকা। মাসের শেষে অংকটা খুব একটা কম নয়। তাই দিব্যি হাসি ফুটেছে এখানকার মহিলাদের গলায়।
গোষ্ঠীর সভানেত্রীর কথায় খুব একটা বেশি পুঁজি লাগে না এই ব্যবসায়। লাগে কাজ করবার সদিচ্ছা। কৃষি দপ্তরও পিছিয়ে নেই জৈব খামারে মানুষকে উৎসাহিত ও সচেতন করতে। লকডাউনে কাজ হারানোর ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতা ভোলেননি এখানকার কোন মহিলা। বরং আগের কাজের থেকে এখন তারা দিব্যি ভালই আছেন।
মোটামুটি ভাবে ৫ লক্ষ টাকা আর এক বিঘা জমি থাকলেই অনায়াসেই কৃষি দফতরের সহযোগিতায় করাই যায় এই জৈব খামার। আয় হয় দ্বিগুণ। যদি স্বনির্ভর গোষ্ঠী তৈরি করে এই খামার করা হয় তাহলে তো কোন কথাই নেই সরকারি বিভিন্ন প্রকল্পের সুবিধাও পাওয়া যায় এই খামার ব্যবসায়।
ছোট ছোট দোতলা বা তিন তলা কাঠের গালি দেওয়া ঘরগুলি এই হাঁস-মুরগিদের অত্যন্ত প্রিয় বাসস্থান। খাবার হিসেবে ব্যবহার করা হয় শাকপাতা থেকে তুলসী পাতা সবকিছুই। কোনরকম রাসায়নিক খাবার হিসাবে এই খামারে ব্যবহার করা হয় না।
আর খাবার সময় হলে গোষ্ঠীর কোন এক মহিলা বটি নিয়ে যখন শাকপাতা কাটতে বসেন তাকে প্রায়ই ঘিরেই ধরে এখানকার পাখিগুলি। যেন এক অদ্ভূত সম্পর্ক রয়েছে পাখিগুলি সাথে এদের। বাদ পড়েনি খামারে আশা শিশুটিও। তার হাত থেকেও পাখিগুলি খাচ্ছে।
প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ কর্মসংস্থানের পাশাপাশি মহিলা ক্ষমতায়নে ঠাকুরনগরের শ্রীমা জৈব খামার রাজ্যবাসীর সামনে বিশেষত কর্মসংস্থানের এই বাজারে নিজের পায়ে ঘুরে দাঁড়ানোর এক গল্পগাঁথা।