Trending
নতুন করে ভারত এবং রাশিয়ার সম্পর্ক জোরদার হতে দেখল পশ্চিমি দুনিয়া সহ আমেরিকা। নতুন কোন ট্রিটি নয়। তবে দুই দেশের মধ্যে যে বাণিজ্যিক সম্পর্ক সেটা যেন দিন দিন আরও মজবুত হচ্ছে। যাই হোক, সেটা মার্কিনী প্রশাসন তো বটেই এমনকি ইউরোপীয় ইউনিয়নের জন্যও যে খুব একটা স্বস্তির সেটা একেবারেই বলা যাবে না। ভারত এবং রাশিয়ার সম্পর্কে যে কোনদিন চিড় ধরানো সম্ভব নয়, সেই সমীকরণ নতুন করে তৈরি করে দিল তেল। সূত্র মারফৎ জানা যাচ্ছে, গত মে মাসে ভারত যে পরিমাণ রাশিয়ান তেল কম দামে আমদানি করেছে সেটা নতুন করে রেকর্ড তৈরি করল। কারণ, রাশিয়া থেকে আমদানিকৃত তেলের পরিমাণ আমেরিকা, সৌদি আরব, ইরাক এবং আরব এমিরেটসের সম্মিলিত তেল আমদানির থেকেও বেশি। সেটা কত এবং কিভাবে সম্ভব হল সেই নিয়েই শুরু করা যাক আজকের প্রতিবেদন।
সস্তায় যদি তেল আমদানি করতে হয় তাহলে সেই সুযোগ কেউ ছাড়ে না। তবে জিও পলিটিক্সে যে না দাদাগিরি দেখাবে তাকেই অপেক্ষাকৃত ইকোনমিকালি স্ট্রং এবং পাওউয়ারফুল দেশের কথা শুনে চলতে হবে। আজকের ভারত আর অতীতের ভারত নয়। সেটা ভারতবাসীর থেকেও বিশ্বের অন্যান্য দেশগুলোকে বোঝানো বেশি প্রয়োজন ছিল। মোদী সরকার সেই কাজটা করতে পেরেছে এবং একইসঙ্গে ব্যবসায়িক স্বার্থ মাথায় রেখে এগিয়ে চলেছে পরপর পদক্ষেপ ফেলতে ফেলতে। তারই নয়া সংযোজন রাশিয়ার থেকে কম দামে ব্যারেল ব্যারেল তেল কেনার ধুম। একটি তথ্য থেকে জানা যাচ্ছে, ভারত এক দিনে ১.৯৬ মিলিয়ন ব্যারেল তেল আমদানি করেছে রাশিয়ার কাছ থেকে। যা গোটা এপ্রিল মাসের আমদানির থেকেও ১৫% বেশি। বলা হচ্ছে, রাশিয়া বিপুল ছাড়ে ভারতকে তেল দেবার জন্য শুধুমাত্র মে মাসেই মোট তেল আমদানির ৪২% রাশিয়া থেকেই আমদানি করেছে ভারত। খেয়াল রাখা প্রয়োজন যে, ২০১৭-১৮ সাল থেকে ভারতকে সবথেকে বেশি তেলের জোগান দিয়ে আসছিল ইরাক। প্রতিদিন যে পরিমাণ তেল ইরাক থেকে ভারত আমদানি করত সেটা রাশিয়ার থেকে অনেকটাই বেশি ছিল। কিন্তু পরিস্থিতি ঘুরতে শুরু করে দেওয়ায় এখন রাশিয়াই ভারতের সবচেয়ে বেশি তেলের জোগানদাতা হিসেবে উঠে এসেছে। দ্বিতীয় স্থানে চলে গিয়েছে ইরাক। ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের পর এই প্রথম তেল আমদানিতে সৌদি আরব চলে গিয়েছে তিন নম্বরে। ভারতের তেল আমদানি নিয়ে বড়সড় খবর দিয়েছে ওপেক। তারা বলছে, মে মাসে ভারতের মধ্যপ্রাচ্য থেকে তেল আমদানি সর্বনিম্ন, মাত্র ৩৯%- যা আগে কোনদিন হয়নি। ওপেক জানিয়েছে, মে মাসে তেলের আমদানি যেখানে ছিল ৪.৭ মিলিয়ন বিপিডি, সেখানে ওপেক সাপ্লাই করেছে ১.৮ মিলিয়ন বিপিডি। একটা সময় এমন হয়েছে, যখন ওপেকের কন্ট্রিবিউশন পৌঁছে যায় একেবারে ৯০ শতাংশে।
কিন্তু রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ যে বিশ্ববাজারে তেলের ব্যবসা-বাণিজ্যের চিরপরিচিত ছবিটাকেই একেবারে পাল্টে দিল। রাশিয়া এবং ইউক্রেনের যুদ্ধ শুরু হবার আগে ভারতে অয়েল মার্কেটের ১ শতাংশেরও কম ছিল রাশিয়ার তেল। কিন্তু এখন পরিস্থিতি একেবারে বদলে গিয়েছে। টানা ৮ মাস ভারতের টপ অয়েল সাপ্লায়ার হিসেবে থেকেছে রাশিয়ার নাম। আর এটাই সম্ভবত বড় অস্বস্তিতে ফেলে দিচ্ছে আমেরিকা সহ পশ্চিমী জগতকে। আর কয়েকদিন পরেই আমেরিকা ভিজিট করবেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। তার জন্য নাকি এলাহি আয়োজনের ব্যবস্থা রেখেছে বাইডেনের লোকজন। মোদীকে বহুভাবে ঠারেঠোরে সেই ইঙ্গিত দিয়েও রাখা হয়েছে। সঙ্গে দেওয়া হয়েছে একটা টোপ। আর সেটা হল ন্যাটো প্লাসের মেম্বার। ভারতকে ন্যাটো প্লাসের মেম্বারশিপ নেবার জন্য আমেরিকার সঙ্গে জাপানও গলা মেলাচ্ছে। কিন্তু মুশকিল হচ্ছে এই ন্যাটো নিয়েই তো যত গণ্ডগোল। কারণ ভারত চলছে দুই নৌকোয় পা দিয়ে, অত্যন্ত ডিপ্লোমেটিকালি। একদিকে রাশিয়া, চিন, ইরাকের মত দেশগুলোর সঙ্গে নিজের সম্পর্ক মজবুত থেকে মজবুততর করছে আর অন্যদিকে আমেরিকা, জাপান বা ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রলোভনকে পাশ কাটাতে হচ্ছে। সঙ্গে মধুর সম্পর্ক টিকিয়ে রেখে ব্যবসা চালিয়ে যাওয়া। অনেকেই বলেছিলেন যে, রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধ হবার জন্য সবথেকে বেশি ফায়দা নিচ্ছে ভারত। কারণ, রাশিয়া থেকে কম দামে তেল কিনে সেই তেল আবার বিশ্ব বাজারে বিক্রি করে দিচ্ছে ভারত। প্রশ্ন করা হলে তার কোঠর জবাব দিয়েছেন বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর। মোদ্দা কথা, সবাই বুঝতে পেরেছে ভারত এখন এই ধরাধামের উদীয়মান শক্তি। সুতরাং, ভারতকে বাদ দিয়ে কিছু হওয়াটা যথেষ্ট চ্যালেঞ্জিং। আর যে কারণে ভারত একদিকে রাশিয়া থেকে চিন এবং অন্যদিকে আমেরিকা থেকে পশ্চিমা বিশ্বের দিকে নজর ফেলে রেখেছে। শান্তিপূর্ণভাবে যদি ব্যবসা করা যায়, তাহলে সব দেশ করবে। কিন্তু ন্যাটো প্লাসের মেম্বার হলে কিন্তু রাশিয়ার ফ্রেন্ডলিস্ট থেকে ডিলিট হয়ে যেতে পারে ভারত। তখন? প্রশ্নটা আপনাদের কাছে রাখলাম। মতামত জানান আমাদের। সঙ্গে লাইক করুন, শেয়ার করুন আমাদের প্রতিবেদন। আর সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের চ্যানেল বিজনেস প্রাইম নিউজ।
জীবন হোক অর্থবহ