Daily
চাকরির আকাল রয়েছেই। পড়াশুনো শেষ করতে পারলেই চাকরি পাওয়ার মতন আশা অনেকেই দেখেন না। তাই জীবিকার প্রয়োজনে বেছে নিতে হয় অন্য পথ। যেমন পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার বেলদা থানা এলাকার শিক্ষিত যুবক শঙ্কর গায়েন। ফিজিক্সে অনার্স করেছেন। বিএড পড়াও শেষ। চাকরি না-পাওয়ায় আয়ের জন্য মন দিয়েছেন বাদাম চাষে। বিজনেস প্রাইম নিউজের ক্যামেরা পৌঁছে গিয়েছে তাঁর বাদাম জমিতে। আর তুলে ধরেছে বাদাম চাষের ব্যস্ততা।
বাদাম চাষ ঠিকঠাক ভাবে করতে পারলে কিন্তু লাভের মুখ ভালোরকম দেখতে পাওয়া যায়। তাই বাদাম জমিতে লক্ষ্য করা গেল ভালোরকম ব্যস্ততা। যেখানে কাজ করছেন বহু শ্রমিক। যাদের মধ্যে অনেকে রয়েছেন বয়স্ক মানুষ, তেমনই রয়েছে বাচ্চারাও। কেউ বাদাম গাছ থেকে ছিঁড়ে নিচ্ছেন বাদাম তো কেউ আবার একটি জায়গা থেকে আরেকটি জায়গায় বাদামগুলো ঢেলে রাখছেন। সব মিলিয়ে কর্মব্যস্ত শ্রমিকদের ছবিটাই ধরা পড়ল আমাদের ক্যামেরায়। ঝুড়ি প্রতি এই শ্রমিকরা কেউ আয় করছেন ৪০ টাকা, তো কেউ আয় করছেন ৩৫ টাকা মতন। দিনের শেষে তাঁদের পারিশ্রমিকের অঙ্ক পৌঁছে যাচ্ছে ৪০০ টাকা মতন। সংসার সামলাতে এই টাকাটাই বা কম কী?
সাধারণত জানুয়ারি, ফেব্রুয়ারি মাসে বাদামের বীজ বোনা হয়। আর মে মাসের শেষের দিক থেকে বাদাম উঠতে শুরু করে। দেরিতে লাগানো বাদামের ফলন হয় জুলাই মাসের শেষের দিকে। কখনো বিঘা প্রতি ফলন পাওয়া যায় ১২ থেকে ১৩ কুইন্টাল। তো কখনো ফলন ভালো হলে জমিতে ওঠে ১৫-১৬ কুইন্টাল মতন। এক্ষেত্রে যে চাষি যত বেশি বাদাম ফলাতে পারবেন, তাঁর লাভের অঙ্ক ততটাই বাড়তে থাকবে। অন্যান্য চাষের থেকে বাদাম চাষ যে অনেক বেশি লাভজনক সেটা জানালেন বাদাম চাষে মনোনিবেশ করা শঙ্কর গায়েন নিজেই।
সাধারণত বাদাম চাষে অনেকটাই এগিয়ে রয়েছে এগরা। বাদাম হচ্ছে এগড়ার অর্থনৈতিক উন্নয়নের চাবিকাঠি। সেদিক থেকে দেখতে গেলে নতুন পরীক্ষায় নেমেছে বেলদা। আর যে কারণে বাদাম চাষে ভালোরকম আগ্রহ দেখিয়েছিলেন শঙ্কর গায়েন। বর্তমানে এখানে বাজার বলতে রয়েছে জাহালদা। এছাড়াও আরও কয়েকটি আড়ত গড়ে উঠছে। জানা গিয়েছে, চলতি মরশুমে বাদামের কিলোপ্রতি দর যাচ্ছে ৪৫ টাকা থেকে ৫৫ টাকা মতন। তবে হ্যাঁ। প্রতিটি কৃষি উপকরণের দর বেড়ে যাওয়ার কারণে বেড়েছে খরচ। তাই লাভও হচ্ছে কম।
শঙ্কর গায়েন নিজেও আশাবাদী যে বাদাম চাষ করে এখন ভালোরকম আয়ের মুখ তেমন একটা দেখা না-গেলেও ভবিষ্যতে বাদাম চাষের মাধ্যমেই তিনি ভালো উপার্জন করতে পারবেন। এদিকে বাদাম চাষ করার কারণে অনেকেরই আর্থিক সমস্যা কিছুটা হলেও মিটেছে। কারণ, বাদাম চাষ না থাকলে এ সময় তাঁরা কোথায় কাজ পেতেন, এই নিয়েও কৃষি মজুররা শঙ্কিত ছিলেন। তবে দিনের শেষে যেভাবে বাদাম জমিতে কর্মব্যস্ত ছবিটা ফুটে উঠল সেটাই প্রমাণ দিল যে ঠিকঠাক বাদাম চাষ করলে উপার্জনের পথ অনেকটাই নিশ্চিত হয়।