Tourism
ছাঙ্গু লেকে তুষারপাত। বরফ পড়েছে নাথুলাতেও। অক্টোবরের শেষ সপ্তাহে বরফ- কিছুটা আনইউজুয়াল, মানে এক্সপেকটেশনের খানিক আগেই। ফলে ভ্রমণপ্রেমীদের মন আনচান করাটাও স্বাভাবিক। পুজো থেকে বড়দিন তারপর নিউ ইয়ার- মোটামুটি এই সিজনে ভিড় থাকেই সিকিমে। নর্থ সিকিমে পা পড়ে বেশি। কিন্তু এখন সিকিমের যা অবস্থা, অনেকেই প্ল্যান বাতিল করেছেন। অনেকেই আবার সিকিম না গিয়ে অন্য কোথাও প্ল্যান করছেন। কিন্তু সিকিমে ছাঙ্গু লেকের তুষারপাত একবার এক্সপেরিয়েন্স না করলে হয় বলুন? তাই আজকের প্রতিবেদনে আপনাদের বলব, কবে নাগাদ থেকে খুলতে পারে নর্থ সিকিমের দরজা? তার জন্যই আজকের প্রতিবেদন।
অক্টোবরের শুরুতেই প্রাকৃতিক বিপর্যয় ঘনিয়ে আসে উত্তর সিকিমে। জলস্ফীতি, হড়পা বানে একেবারে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে নর্থ সিকিম। নিখোঁজ যেমন হয়েছেন অনেকে, তেমনই মারাও গিয়েছেন। স্বাভাবিকভাবেই সিকিমের ট্যুরিজম সেক্টর কার্যত ভেঙে পড়েছে এই ন্যাচারাল ডিজঅ্যাস্টারের কারণে। সিকিম পর্যটন সূত্রে জানা গিয়েছে, নর্থ সিকিমের পুজোর বুকিং, হোটেল এবং রিসোর্ট বুকিং প্রত্যেকটিই ধাক্কা খেয়েছে পরপর। ৮৫% থেকে একেবারে ২৫%। এদিকে সামনেই কালীপুজো। দীপাবলিতে নর্থ সিকিম যাবার কথা অনেকেই প্ল্যান করে থাকেন। কিন্তু দেখা যাচ্ছে, সেখানেও রয়ে গিয়েছে দুশ্চিন্তা। আর সিকিমে যদি ট্যুরিজম সেক্টরে প্রভাব পড়ে সেটা যে স্বাভাবিকভাবেই দার্জিলিং-এ পড়বে তাতে আর নতুন কী? তাই পুজো মরশুমে পর্যটন সেক্টরে এবার ঘনায়েছে চিন্তা।
সিকিম সরকার একটা ক্ষতির হিসেব করেছে ২০ অক্টোবর থেকে ৩০ অক্টোবরের মধ্যে। এই দশদিনের হিসেব কষে তাঁরা জানিয়েছেন, বুকিং বাতিলের কারণে ক্ষতির বহর পৌঁছে গিয়েছে ১৫০ কোটি টাকায়। আর যদি এই ক্ষতি দীপাবলি পর্যন্ত টেনে চলে তাহলে অঙ্কটা পেরিয়ে যাবে ২০০ কোটি টাকার গণ্ডি। প্রকৃতির বিধ্বংসী রূপের কাছে একেবারে নাস্তানাবুদ হয়েছে সিকিমের ইনফ্রাস্ট্রাকচার। এখনো পর্যন্ত যা অবস্থা, তাতে নতুন করে পরিকাঠামোর দিকে নজর দেওয়া হয়েছে। তার মধ্যে রয়েছে রাস্তাঘাট এবং সেতু। কেন্দ্রীয় সরকারের সহযোগিতায় তারা ঘুরে দাঁড়ানোর আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। তবে আশার কথা জানেন কী?
সিকিম পৌঁছনোর জন্য যে লাইফলাইন মানে ১০ নম্বর জাতীয় সড়ক। সেটা খুলে দেওয়া হয়েছে কিন্তু। ছোট ছোট গাড়ি চালানো হচ্ছে সকাল ৬টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত। কোন কোন জায়গায় ওয়ান ওয়ে হয়েছে। কিছু কিছু জায়গায় রয়েছে যানজট। তবে খুব দ্রুত রাস্তা ঠিক করার কাজ চলছে। প্রয়োজনে পাহাড় কেটে চওড়া করা হচ্ছে রাস্তা। কেন্দ্রীয় সরকার এই বাবদ ২০ কোটি টাকা বরাদ্দ করেছে। অনেকেই মনে করছেন, যেহেতু রাস্তা খুলে গিয়েছে আর রাস্তা মেরামতির কাজ চলছে জোরকদমে তার মানে খুব দ্রুত ট্যুরিস্টরা আবার আসবেন নর্থ সিকিমে।
আসলে মহালয়ার পর থেকেই পাহাড়ে ঘুরতে যাবার ধুম পড়ে। দার্জিলিং, কালিম্পং বা কার্শিয়ং তো রয়েছেই। সঙ্গে সিকিম ঘুরে আসার জন্য হোটেল বুকিং-এ ঝড় ওঠে। এই বছরে সরকারি এবং বেসরকারি সংস্থাগুলি যেভাবে বুকিং নিচ্ছিল মনে করা হচ্ছিল সেটা রেকর্ড তৈরি করতে পারে। কিন্তু একটি দিনের বিপর্যয় যেন বছরের শেষ সময়টুকু একেবারে ট্যুরিজম সেক্টরে বড় ক্ষতি তৈরি করে দিল। এমনিই ২০২০-২১ সাল কোভিডের জন্য ধাক্কা খেয়েছে। গত বছর ভালোই ছিল ট্যুরিজম সেক্টর। এই বছর আবার বিপর্যয়ের গ্রাস। তাহলে প্রশ্ন হচ্ছে, কবে আগের মত পুরোপুরি ভাবে সিকিমের দরজা খুলে যাবে?
মনে করা হচ্ছে, যেভাবে কাজ চলছে এবং পরিকাঠামো উন্নয়নের কাজ চলছে তারপর হয়ত সিকিমের অবস্থা স্বাভাবিক হতে খুব বেশি সময় লাগবে না। হ্যাঁ, সবথেকে বেশি বিধ্বস্ত হয়ে পড়া নর্থ সিকিমকে আপাতত মানচিত্রের বাইরে রাখা থাক। উত্তর সিকিম আগের মত পর্যটকদের স্বাগত জানাতে আরও একটু সময় নেবে। তবে পূর্ব সিকিম, দক্ষিণ সিকিমে মোটামুটি বুকিং নেওয়া চলছে। আগের মত না হলেও অল্প অল্প করে চলছে বুকিং নেওয়া। যা অবস্থা তারপর নতুন বছরের আগে মনে হয় না মনের মতন করে সিকিম ঘুরতে পারবেন। আজকের প্রতিবেদন এটুকুই। লাইক করুন, শেয়ার করুন আর নতুন হলে সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের চ্যানেল বিজনেস প্রাইম নিউজ।
অরূপ পোদ্দার
দার্জিলিং