Daily
ঝলসানো গরমে নাজেহাল দক্ষিণবঙ্গ। পালাই পালাই অবস্থা যেন। প্রবল গরমে কাহিল রাজ্যের উত্তরাংশ। হিমালয়ের ঠাণ্ডা বাতাস কোথায়? বৃষ্টির দেখাও নেই। আর এই সবমিলিয়ে বড়সড় ক্ষতির আশঙ্কায় দিন গুনছে উত্তরবঙ্গের প্রধান শিল্প- চা শিল্প। এমনিতেই প্রাণ ওষ্ঠাগত হবার জোগাড়, তারপর যদি আবহাওয়ার প্রভাবে ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষতি হয়, তাহলে তো আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়বেন অনেকেই। সত্যি বলতে গেলে, এমনই করুণ পরিণতির শিকার হতে চলেছে উত্তরবঙ্গের চা শিল্প।
চা চাষের জন্য অনুকূল তাপমাত্রা হচ্ছে ২৮ ডিগ্রি থেকে ৩২ ডিগ্রি সেলসিয়াস মতন। তার সঙ্গে প্রয়োজন পর্যাপ্ত বৃষ্টি। কিন্তু এখন বৃষ্টির দেখাও নেই। আবার তাপমাত্রাও ঘোরাফেরা করছে ৩৬ ডিগ্রি থেকে ৩৯ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে। এর ফলে বড়সড় ক্ষতির মুখে পড়ছে চা শিল্প। ঝলসে লাল হয়ে যাচ্ছে চা গাছের কচি পাতা। যে কারণে এই বছর ফার্স্ট ফ্লাশের উৎপাদন একধাক্কায় কমে এসেছে ৩০ শতাংশ মতন। এদিকে গরমের কারণে চা বাগানে পোকামাকড়ের আক্রমণ বাড়ছে। গ্রিন ফ্লাই, লাল মাকড়সা, লুপারের মতন পোকারা খেয়ে ফেলছে চা পাতা। ক্ষতি হচ্ছে সেকেন্ড ফ্লাশের। ক্ষতি কতটা জানেন? যেখানে ছোট ছোট চা বাগান থেকে প্রতিদিন দশ থেকে বারো হাজার কেজি চা পাতা ওঠার কথা, সেখানে আজ চা পাতা উঠছে মাত্র ৩-৪ হাজার কেজি। ফার্স্ট ফ্লাশের উৎপাদন। ৫০% মতন পিছিয়ে। চায়ের গুণগত মানে প্রভাব পড়ছে। এই বিষয়ে শিলিগুড়ি টি-অকশন বোর্ডের চেয়ারম্যান মহেন্দ্র বনসল যথেষ্ট দুশ্চিন্তায়।
একদিকে চা বাগানের ক্ষতি হচ্ছে গরমে। অন্যদিকে কিন্তু মালিকদের খরচ কমছে না। স্টাফ স্যালারি রয়েছে। লেবার ওয়েজেস রয়েছে। মেন্টেনেন্স খরচা রয়েছে। এদিকে পেট্রোল, ডিজেল, কয়লার দাম বেড়ে যাবার কারণে খরচ বেড়েছে। কিন্তু চায়ের চাহিদা সেভাবে পাওয়া যাচ্ছে কই? ফলে বিক্রিতেও এসেছে সংকোচন। ২০২০ সালে চায়ের দর যেমন ছিল, ২০২৩ সালে চা বিক্রির দর আরও অনেকটাই নেমেছে। সমস্যা হচ্ছে বাগান পরিচালনা করতে। ডিম্যান্ড এবং সাপ্লাইয়ের মধ্যে দেখা যাচ্ছে ভালো ফারাক।
চা চাষের গুরুত্বপূর্ণ সময়টা শুরু হয় এপ্রিল মাসের শেষ সপ্তাহ থেকে। এই সময় থেকেই সেকেন্ড ফ্লাশের উৎপাদন সবচেয়ে বাড়ে। ফলে, চা পাতা বিক্রি করে ভালো মার্জিন রাখতে পারেন চা ব্যবসায়ীরা। কিন্তু এই বছরের যা গরম, তাতে ক্ষতির আশঙ্কাতেই আপাতত দিন কাটাতে হচ্ছে সকলকেই। এখন প্রকৃতি কবে সহায় হবেন, সেদিকেই তাকিয়ে রয়েছে উত্তরবঙ্গের চা শিল্প।
অরূপ পোদ্দার
শিলিগুড়ি