Trending
ভারতে শিক্ষিত মানুষদের সঠিক মূল্যায়ন করা হয় কি না- জানা নেই। তবে শিক্ষাকে হাতিয়ার করে যে জমিয়ে ব্যবসা করা যায় তার উদাহরণ আপনার চোখের সামনেই রয়েছে। ৫৩ হাজার কোটির কোচিং ইন্ডাস্ট্রি। দিনের পর দিন কোচিং সেন্টারের ওপর নির্ভরতা বাড়ছে পড়ুয়াদের। পাল্লা দিয়ে বাড়ছে প্রতিযোগিতা। যে প্রতিযোগিতায় সেরার সেরা হতে গিয়ে প্রাণ হারাচ্ছে ভারতের আগামী প্রজন্ম।
ভারতে বাড়তে থাকা কোচিং সেন্টারের ডিম্যান্ড ঘিরে তৈরি হয়েছে এক বড়সড় ব্যবসা। কখনও নম্বর পাইয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি, কখনও আবার চাকরি পাইয়ে দেওয়ার গ্যারান্টি- নানান উপায়ে বিজ্ঞাপন দিয়ে থাকে কোচিং সেন্টারগুলো। আর এই বিভ্রান্তিকর বিজ্ঞাপনের জন্য ভারতীয় পড়ুয়াদের কোচিং নির্ভরতা বেড়েছে মাত্রাতিরিক্তভাবে। বেড়েছে প্রতিযোগিতা। বেড়েছে পড়ুয়াদের প্রাণহানির সংখ্যা। সমীক্ষা বলছে, শুধুমাত্র ২০২৩ সালে কোটায় এই অসুস্থ প্রতিযোগিতার দৌড়ে সামিল হয়ে প্রাণ গিয়েছে ২৭ জন পড়ুয়ার।
কোটা ফ্যাক্টরি, অ্যাসপিরেন্ট ইত্যাদি ওয়েব সিরিজগুলো দেখলে হয়তো এই নির্মম সত্যের কিছুটা আঁচ পাওয়া যায় যে কীভাবে সামান্য কিছু সিটের জন্য লক্ষ লক্ষ পড়ুয়ারা ছুটছে। তবে, শুধু কোটা নয়। দেশের বিভিন্নপ্রান্তে কোচিং সেন্টারের বাড়বাড়ন্ত চিন্তা বাড়িয়েছে পড়ুয়াদের। তাই এবার কড়া হাতে রাশ টানতে ছাইছে কেন্দ্র। কোচিং সেন্টারের বাড়বাড়ন্ত রুখতে জারি করা হয়েছে একগুচ্ছ নির্দেশিকা। কি বলা হয়েছে নিরদেশিকায়? দেখে নিনঃ
প্লেটঃ ১
মাধ্যমিক পাশ বা ১৬ বছর না হলে কোন পড়ুয়াকে কোনভাবেই কোচিং সেন্টারে ভর্তি করানো যাবে না।
প্লেটঃ ২
কোনরকম নম্বর বা র্যাঙ্কিং-এর গ্যারান্টি দেওয়া যাবে না পড়ুয়াদের।
প্লেটঃ ৩
বছরের মাঝখানে বেতন বাড়ানো যাবে না। কোন পড়ুয়া বছরের মাঝখানে কোচিং ছাড়লে, তাকে ১০ দিনের মধ্যে সম্পূর্ণ টাকা ফিরিয়ে দিতে হবে।
প্লেটঃ ৪
একদিনে ৫ ঘণ্টার বেশি ক্লাস নেওয়া যাবে না। এছাড়াও সাপ্তাহিক ছুটির ব্যবস্থা রাখতে হবে
প্লেটঃ ৫
কমপক্ষে স্নাতক পাশ না হলে কোচিং সেন্টারে পড়ানো যাবে না। দোষীসাব্যস্ত কোন শিক্ষককে কোচিং সেন্টারে নিয়োগ করা যাবে না।
প্লেটঃ ৬
পড়ুয়াদের শারীরিক এবং মানসিক স্বাস্থ্যের দিকে খেয়াল রাখতে হবে। প্রয়োজনে কাউন্সিলিং-এর ব্যবস্থা করতে হবে। গভীর রাতে বা ভোরবেলায় কোচিং সেন্টারের টাইমিং রাখা যাবে না।
কোন কোচিং সেন্টার সরকারী এই নির্দেশিকা না মানলে তার বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ নেবে কেন্দ্র। প্রয়োজনে, ঐ কোচিং সেন্টারের রেজিস্ট্রেশন নম্বর বাতিল করা হবে। কিন্তু প্রসঙ্গ হচ্ছে, আজকের দিনে দাঁড়িয়ে কোচিং সেন্টার মানে কোন অপশন নয়। এখন স্কুলের থেকেও বেশি ইম্পরট্যান্ট হয়ে দাঁড়িয়েছে কোচিং সেন্টার যাওয়া। ভারতের ৮৩% হাইস্কুল পড়ুয়ারা স্কুলের বাইরেও কোচিং সেন্টারের ওপর নির্ভরশীল। আর এই কারণে, ২০২৩ সালে ভারতের কোচিং ইন্ডাস্ট্রি প্রায় ৫৩ হাজার কোটির মার্কেট ক্যপচার করেছে। ২০২৮ সালের মধ্যে এই অঙ্কটাই বেড়ে দাঁড়াবে ১ লক্ষ ৩৩ হাজার কোটিতে। মানে, প্রতি বছর ১৫ শতাংশ হারে বাড়ছে কোচিং ইন্ডাস্ট্রি।
কেন বাড়ছে কোচিং ইন্ডাস্ট্রির দাপট? কেন কোচিং নির্ভরতা বাড়ছে পড়ুয়াদের মধ্যে? আর্থিক স্বচ্ছলতা না থাকা সত্ত্বেও কেন কোচিং যাওয়ার ধুম বাড়ছে পড়ুয়াদের মধ্যে? স্কুলের ওপর কেন আস্থা রাখতে পারছেন না পড়ুয়ারা? আপনাদের জন্য রইলো সেই রিপোর্ট-ও। তথ্য বলছে, ভারতে স্কুল-গোয়িং পড়ুয়াদের সংখ্যা ২৬০ মিলিয়ন। আর সেখানে স্কুলের সংখ্যা কত? মাত্র ১.৪ মিলিয়ন। যোগ্য এবং পর্যাপ্ত শিক্ষকের অভাব, সঠিক ইনফাস্ট্রাকচারের অভাব, আর্থিক অসচ্ছলতা এবং বাড়তে থাকা করাপশনের জন্য স্কুলের ওপর থেকে আস্থা হারাচ্ছে পড়ুয়ারা। আর যে কারণে সম্প্রতি প্রকাশিত এক রিপোর্টে উঠে এসেছে শিক্ষার ভয়াবহতা।
আপনারা কী জানেন? এই দেশের ৫০ শতাংশ পড়ুয়া যারা ক্লাস ফাইভ বা তার চেয়ে নিচু ক্লাসে পড়ে- তারা সঠিকভাবে রিডিং পড়তে পারে না, অঙ্ক করতে পারে না, লিখতে পর্যন্ত পারে না। আর এতকিছু সামনে আসার পর স্বাভাবিকভাবেই ভারতের শিক্ষাব্যবস্থা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। আয়রনিক্যালি- এই ভারতেই বেদ, বেদান্ত, উপনিষদ শিখতে দূর দেশ থেকে সকলে আসতেন। নালন্দা, তক্ষশিলার মতো বিশ্ববিদ্যালয় কী না- এই ভারতেই। কিছুই না- শুধু ভারতীয় শিক্ষাব্যবস্থার একাল আর সেকালটুকু তুলে ধরলাম। এরপরেও যদি প্রশ্ন না তোলেন, সিস্টেম যেভাবে চলছে- সেভাবেই মেনে নিয়ে এগোতে থাকেন- তাহলে আসন্ন বিপদের জন্য প্রস্তুত থাকুন।
দেখতে থাকুন বিজনেস প্রাইম নিউজ। জীবন হোক অর্থবহ।