Trending
ওরা বিরাট এক নৈরাজ্যে এক নেই রাজ্যের বাসিন্দা। ওদের কেউ নেই। কিছু নেই। আজ আশ্রয়টুকুও নেই। চোখের সামনে নিজের ঘরটা ভেঙে পড়ছে। ভেঙে দিচ্ছে ওরা। দানবের মত হলুদ বুল্ডোজার রোজ আসছে, রোজ ভাঙছে। আচ্ছা, আপনি নিজের চোখের সামনে নিজের ঘর, নিজের একমাত্র আশ্রয় ভাঙতে দেখেছেন কোনোদিন? ওরা দেখেছে। প্রতিদিন দেখেছে। প্রতিদিন…
দেশে আন্তর্জাতিক সম্মেলন। নাম জি-২০। দেশ বিদেশের রথী-মহারথীরা আসবেন, রাজধানী ঘুরে দেখবেন, সপ্তাহান্তে গালা ডিনার বসবে, রূপোর থালাবাটি সাজবে বিদেশী খাবার দাবারে। আর সেই এলাহি সম্মেলনের ত্রিসীমানায় বস্তি? গোটা ভূ-ভারতে কোথাও কোনোদিন হয়েছে? আহা! বোঝার চেষ্টা করুন। এটা ভারতের অমৃতকাল। জি-২০-র সভাপতি ভারত! আর এই পড়ে পাওয়া চোদ্দআনাকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সাগরেদরা মাথায় রাখবেন না সিংহাসনে রাখবেন বুঝে উঠতে পারছেন না। আর সেই রাজধানীতেই রাজপথের দু-ধারে জঙ্গল দেখবেন বিদেশী অতিথিরা? যে জঙ্গলের নাম কোথাও বস্তি কোথাও ঝুপড়ি। শোভন-অশোভন বলেও তো একটা ব্যাপার আছে নাকি! সুতরাং হয় ঢেকে দাও। নয়ত ভ্যানিশ করে দাও।
শুরুতেই দুটো ছবি দেখাবো আপনাদের। এই ছবিদুটোই কথা বলে। প্রথমেই জি-২০-র ভোজসভার ডিনার সেট। ঐশ্বর্য, রাজকীয়তা, আভিজাত্য। দেশ বিদেশের রথী-মহারথী বলে কথা। তাদের জন্য সামান্য এইটুকু না করলে চলে? গোরা থেকে না হোক, বাইরে থেকেই ঝাঁ চকচকে হোক। বেশ মেনে নিলাম। এবার দ্বিতীয় ছবি। স্তব্ধ, শান্ত এবং ধ্বংস। এক কথায় স্বপ্ন চুরমার হয়ে যাওয়ার। তবে বলে রাখা ভালো, নিমেশেই কিন্তু এই ধ্বংসলীলা শেষ করে হাত মুছে নেওয়া হয়েছে। ধ্বংসের চিহ্নটুকুও নেই। একেবারে সবুজ কাপড় আর জি-২০-র রংবাহারি ব্যানারে পর্দানশীন হয়েছে আপনার-আমার, আমাদের সকলের গরীব ভারত। সবুজ পর্দায় কী আর সত্যি ঢাকা যায়?
সদ্যোজাতকে কোলে নিয়ে মা কাঁদছেন, বিধবা বয়স্ক মহিলা শোকে পাথর, সদ্য চল্লিশ পেরোনো অবিবাহিত ভদ্রমহিলা মৃদু প্রতিবাদ করছেন। আর সস্তার ব্যাটবল হাতে আগামীর ছেলেটা বিকেলে বন্ধুকে খেলার জন্য ডাকতে গিয়ে ধ্বংসলীলা দেখছে। ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে দেখছে, ঘর ভাঙছে, আশ্রয় হারাচ্ছে ওর বন্ধু। ঠিকই তো, গরিবিয়ানা এদেশের দুর্বলতা। সেই দুর্বলতা বিদেশী নায়ক-নায়িকাদের সামনে দেখানোটা শোভনীয় নয়। কিন্তু তাই বলে গরীব মানুষগুলোর বাড়ি ভেঙে দেবেন? কিন্তু এবারের জি-২০ যে অন্য কথা বলছে। প্রধানমন্ত্রী যে বারবার বলছেন, বসুধইব কুটুম্বকম। সকলেই এক পরিবার! গরিবিয়ানা লোপাট করতে পরিবারের মানুষের আশ্রয়কে শ্মশানে পরিণত করা যায়?
আপনারা বলবেন, এ ঘটনা কী নতুন? না! একেবারেই না। দেশকে ঝাঁ-চকচকে প্রমাণ করার এই দৃশ্য কালজয়ী বটে। এখন শুধু সোশ্যাল মিডিয়ার দৌলতে সকলের সামনে আসছে। তাই প্রশ্ন উঠছে। আচ্ছা! দেশ তো এগোচ্ছে। এগিয়ে চলেছে। তবু, কেন এই অগুন্তি মানুষগুলোকে ঝুপড়ি-বস্তি বা ফুতপাথে আশ্রয় খুঁজতে হয়? ছিটেফোঁটা জায়গার জন্য লড়াই করতে হয় প্রতিনিয়ত? তাদের এই বেআইনি জীবনযাপন তো আইনি অর্থনীতির প্রচুর খিদে মেটায়, তাহলে?
জি-২০ সম্মেলন, ভারতের সভাপতিত্ব, ডিজিটাল ইন্ডিয়া, আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স, বায়োফুয়েল অ্যালায়েন্স, রূপোর ডিনার সেটে রাজকীয় ডিনার- সবই তো হল। কিন্তু গোরায় গলদ যে রয়েই গেল। ওরা এত কঠিন শব্দ বোঝে না, জানে না ওরা জি-২০ কি? ওদের কাছে জীবনের আরেক নাম লড়াই। ওরা দুমুঠো ভাত আর আশ্রয় চায়। ব্যাস! কবে এদের কথা ভাবা হবে? কবে ওদের হয়ে কেউ কথা বলবে? বসুধইব কুটুম্বকম সত্যি সত্যি কবে হবে?
সমাজের বাস্তববাদীরা কোথায়? চুপ করে কেন? প্রদীপের নিচের অন্ধকার তো আরও গাঢ় হচ্ছে। প্রশ্ন তুলুন! দৃষ্টিভঙ্গি সংকুচিত না করে প্রশ্ন তুলুন। পর্দার আড়ালে চোখ রাখুন। প্রয়োজন পর্দা সরিয়ে সত্যিকে সামনে আনুন। প্রশ্নে মিলায় উত্তর, তর্কে বহুদূর। আপনাদের জন্য এই দুটো ছবি রাখলাম, দুটোই বাস্তব-এবার চয়েস ইজ ইয়রস।
বিজনেস প্রাইম নিউজ
জীবন হোক অর্থবহ