Daily

যা কিছু অজানা, যা কিছু অচেনা, যা কিছু দুর্ভেদ্য। কৌতূহল বাড়ায় তারাই। বিশ্বব্রহ্মাণ্ড তাদের মধ্যেই একজন, বলা ভালো একমাত্র। প্রতিনিয়ত সেখানে ঠিক কি কি ঘটছে তা আমাদের ভাবনারও অতীত। আর এবার এমনই এক বিরল মুহূর্তের সাক্ষী থাকল বিজ্ঞান মহল। প্রগতিশীল বিজ্ঞান পেরল আরও এক মাইলফলক। বিজ্ঞানের ইতিহাসে যুক্ত হল আরও এক অধ্যায়। কণা সংক্রান্ত পরীক্ষা নিরীক্ষার ব্রেকথ্রু ফলাফল এলো হাতেনাতে। ঈশ্বরকণার পর এইচএলসি-তে ধরা দিল ভূতুড়ে কণা।
নাহ! ভূতুড়ে কণাগুলো আদপে ভুত নয়। তবে আচরণ ভুতের মতই। বিজ্ঞানের পরিভাষায় ওর নাম নিউট্রিনো। ব্রহ্মাণ্ডের সর্বত্রই ইতিউতি ছড়িয়ে থাকে এরা। কিন্তু মোটেই ধরা দেয় না। বিগ ব্যাঙ্গের পরেই এদের জন্ম হয়েছিলো। ভূতুড়ে কেন বলা হচ্ছে এদের? আসলে, পদার্থবিজ্ঞানের পরিভাষায়, কণা দুই গোত্রের। এক ফার্মিয়ন আর দুই বোসন। মহাকাশের এই ভূতুড়ে কণা ফার্মিয়ন গোত্রে পরে। পদার্থবিদ্যা বলছে সাধারণত চার রকমের বলের মাধ্যমে কণারা অন্য কণাদের প্রভাবিত করতে পারে- মহাকর্ষ, তড়িৎ চুম্বকীয়ও, সবল ও দুর্বল। আধানহীন, ভরহীন, কোয়ার্কবিহীন বলে কোনরকম মিথস্ক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করে না তারা। আর এদের শনাক্ত করা বেশ কঠিন।
ফোটন কণা অর্থাৎ আলর চেয়েও দ্রুত গতিতে ছোটে নিউট্রিনো। কোনকিছুতেই প্রভাবিত হয়না তারা। আর তার পথে আসা যেকোনো বস্তুকে যেমন ধরুন, আমাদের দেহ, গোটা পৃথিবী, সৌরজগৎ এমনকি গ্যালাক্সি পর্যন্ত- একেবারে এফোঁড় ওফোঁড় করে বেরিয়ে যায়। শুধু কি তাই? এক সাথের মধ্যে দিয়ে যেতে যেতে ভোল বদলে ফেলতে পারে তারা। এক রূপ থেক অন্য রূপে পরিবর্তিত হতে গেলে আবার তরঙ্গের আকারে পরিবর্তিত হতে পারে। বিজ্ঞানের পরিভাষায় যাকে নিউট্রিনো অসিলেশন বলে। আর এই অদ্ভুত আচরণকে ভূতুড়ে না বলে উপায় আছে?
আজ থেকে ৯ বছর আগে সার্ন-এর এইচএলসি-তে ধরা দিয়েছিল ঈশ্বরকণা। যাকে কণা গোত্রের মধ্যে বোসন গোত্রে ফেলা হয় – নাম হিগস বোসন। তবে এর আগে কখনো অপার্থিব কোন কণার হদিশ পাননি বৈজ্ঞানিকরা। এই প্রথম। আর এই অসাধ্য সাধনেই আশার আলো দেখছে বিজ্ঞান মহল। আর সত্যিই তেমনটা হলে কণা বিজ্ঞানের আদিমতম অনেক অজানা তত্ত্বের পর্দা উন্মোচন হবে। সামনে আসতে পারে ১ হাজার ৪০০ কোটি বছর আগেকার ইতিহাস। বিগ ব্যাঙ্গের সময় ঠিক কোন কোন কণার উৎপত্তি ঘটেছিলো। জানা যাবে, ব্রহ্মাণ্ডের জন্ম এবং বিকাশ। সামনে আসবে পদার্থবিজ্ঞানের নাগালের বাইরে থাকা বহু তথ্য।
ব্যুরো রিপোর্ট