Daily
মাও সে তুং-এর পর শি জিনপিং। চিনে কমিউনিস্ট দলের কেন্দ্রীয় কমিটিতে নাটকীয় প্লট পরিবর্তন। একরোখা নেতার লক্ষ্য কি এবার গোটা বিশ্ব? রাশিয়ার জন্য স্বস্তি আর ভারতের জন্য সেটাই কি বেশ দুশ্চিন্তার? কি হবে, কোনদিকে ঘুরবে চিনের রাজনীতি? আসুন, আজ এই নিয়েই ছোট্ট একটা আলোচনা সেরে নেওয়া যাক।
ওয়ার্ল্ড পলিটিক্সে চিন যে বড়সড় কামড় বসাতে চলেছে, সেটা নিশ্চিত করেছিলেন মাও সে তুং। ১৯৭৬ সালে মাওয়ের মৃত্যু হয়। তারপর চৈনিক রাজনীতি সেভাবে কোন অস্থিরতা দেখে নি। চিনের উত্থানের গ্রাফ ওপরের দিকেই থেকেছে। সেই ট্র্যাডিশন বজায় রেখেই ভেতরে সাম্যবাদ আর বাইরে পুঁজিবাদী ট্যাকটিস নিয়ে এগোচ্ছে চিন! কিন্তু বিষয়টা আরও গ্লোবাল পলিটিক্সের অ্যাট্রাকশনের জায়গা তৈরি করে যখন চিনের প্রেসিডেন্ট হলেন শি জিনপিং নিজে। একের পর এক সিদ্ধান্ত নিয়ে দেশনায়ক হয়েছেন। আর অন্যান্য দেশগুলো তখন শি-কেই বানিয়েছে ভিলেন। কিন্তু থোরাই কেয়ার। চিনের আভ্যন্তরীণ রাজনীতি যে কোনভাবেই শি-কে ছাড়বে না, সেটা প্রমাণিত। কারণ, শি জিনপিং-এর বয়স এখন ৬৯। চিনের কমিউনিস্ট পার্টি এমনিতেই নিজের কেন্দ্রীয় কমিটি নিয়ে বেশ কড়া। নিয়মের বাইরে গিয়ে কোনকিছুর সঙ্গেই আপোষ করতে রাজি নয়। কারণ, কেন্দ্রীয় কমিটিতে ৬৮-র পরেই অবসর নিতে হয়। কিন্তু জিনপিং-এর ক্ষেত্রে… দলীয় নেতা হিসেবে নির্বাচিত হলেন ফর দ্য থার্ড টাইম। তাহলে এবার প্লট পরিবর্তন কেন?
প্রথম, এবারে সিসিপি-র যে বার্ষিক সম্মেলন ছিল সেটা ২০ তম। শি যে সাধারণ সম্পাদক হচ্ছেন, সেটা বোঝা গেছিল। প্রেসিডেন্ট পদে যে তৃতীয়বার বসবেন, সেটাও মোটামুটি সকলের জানা। নির্বাচনে শি যেমন নিজের অবস্থান নিশ্চিত করলেন, তেমনই শি তাঁর কোন সমকক্ষ নেতাকেও পাশে থাকার জন্য ছাড় দেননি। এরই মধ্যে নতুন করে ভাইরাল হওয়া একটা ক্লিপ সমালোচনার ঝড় তোলে। হু জিনতাও, যিনি একটা সময় ছিলেন দলের সাধারণ সম্পাদক এবং প্রেসিডেন্ট, তাঁকে বাইরে নিয়ে যাওয়া হল। পাশেই নির্বিকার মুখে শিকে বসে থাকতে দেখল বিশ্ব। কেউ বলছেন, এভাবেই নাকি হু জিনতাও-এর উপর এক মধুর প্রতিশোধ নিলেন তিনি। আবার অনেকেই বলছেন, জিনতাও নিজে ছিলেন অসুস্থ। যাই হোক, শি ছাড়া কমিটিতে আর যে ছয় সদস্য রইলেন তাঁরা হলেন লি কিয়াং, ওয়াং হুনিং, কাই কি, লি জি মিট, ঝাও লেইজি এবং ডিং জুয়েজিয়াং। আরেকটা বিষয়, এই প্রথম সিসিপির পলিটব্যুরো হল নারীবর্জিত।
শি নির্বাচনে জেতার পর মস্কো থেকে উষ্ণ অভ্যর্থনা আসে। কিন্তু ভারত? আমেরিকার সহ পশ্চিমি দেশগুলোর জন্য বিষয়টা তেমন আশার আলো যেমন দেখাল না, ভারতের জন্যও সেটা বেশ কার্যকর হল। কারণ, সীমান্ত নিয়ে ভারত এবং চিনের মনোবিরোধ, মত বিরোধ সবই রয়েছে শুরু থেকে। সীমান্ত ইস্যু নিয়ে একবার ক্ষোভ উগড়ে দিয়েছিলেন, ভারতের বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর। বলেছিলেন, সীমান্তের অবস্থা নিশ্চিত করবে দুই দেশের সম্পর্কের অবস্থা। কিন্তু ভবিষ্যতের বিশ্ব অর্থনীতি নিয়ে চিনের চমক- হচ্ছেটা কি?
ব্রিকস গোষ্ঠী বা ব্রাজিল, রাশিয়া, ভারত, চিন এবং দক্ষিণ আফ্রিকার সম্মিলিত অর্থনীতি নাকি বিশ্বঅর্থনীতির জন্য দুর্দান্ত একটা এপিসোড লিখবে বলে অনেকেই মনে করছিলেন। সেক্ষেত্রে সবথেকে বেশি এগিয়ে ছিল চিনের ইকোনমিক গ্রোথ। সেটা ৫% পর্যন্ত বাড়তে পারে বলে মনে করেছিলেন অনেকেই। কিন্তু অনেকেই মনে করছেন, কোভিডের কারণে চিনের অর্থনীতি ভালোরকম ধাক্কা খেয়েছে। এদিকে ন্যাশনাল ব্যুরো অফ ইকোনমিক রিসার্চ একটি সমীক্ষা প্রকাশ করে। নাম দেওয়া হয়, দ্য ফিউচার অফ গ্লোবাল ইকোনমিক পাওয়ার। সেখানেই বলা হচ্ছে, ২১০০ সালের মধ্যে বিশ্বের সবচেয়ে বড় অর্থনীতির দেশ হবে চিন। আর চিনের ঘাড়েই নিঃশ্বাস ফেলবে ভারত। তার মানে, বিশ্বকে রুল করবে তখন এই দুই এশিয়ার দেশ। যাই হোক, আপাতত সময়টা আসতে এখনো অনেকটা দেরি। কিন্তু ভবিষ্যতের দিকে তাকিয়েই কি চিন এখন থেকেই ঘুঁটি সাজাচ্ছে? আর চিনের সেই ইঙ্গিত বুঝতে পেরেই কি এখন থেকে ভারত প্রস্তুতি নিচ্ছে নিজের ইকোনমিক প্ল্যাটফর্ম মজবুত করার? উত্তর দিন আপনারা।
বিজনেস প্রাইম নিউজ
জীবন হোক অর্থবহ