Daily

উপগ্রহ চাঁদ কিংবা প্রতিবেশী মঙ্গলে যাওয়া আসা করা আন্তর্জাতিক স্পেস স্টেশন নাসার কাছে জলভাত। হামেশাই চলছে এই যাতায়াত। কিন্তু এবার তাই বলে গন্তব্য সূর্য! এও সম্ভব? আলবাত সম্ভব! কার্যত অসম্ভব এই কাজকে হাতে কলমে সম্ভব করিয়ে দেখিয়েছে নাসার সৌরযান পার্কার।
সূর্যের করোনায় বা উঠোনে কাজ করছে সাংঘাতিক শক্তি সম্পন্ন মাধ্যাকর্ষণ শক্তি। আর প্রতিনিয়ত সেখান থেকে ১০০ কোটি বা তারও অনেক বেশি পরমাণু বোমা এক সঙ্গে ফাটলে যে পরিমাণ শক্তির জন্ম হয় সেই পরিমাণ শক্তি সম্পন্ন সৌর কণা প্রচন্ড গতিতে ছিটকে বেরিয়ে আসছে। যাকে বিজ্ঞান বলে ‘ করোনাল মাস ইজেকশন ‘। এরা প্রলয়ঙ্কর কাণ্ড ঘটাতে পারে। সেই সূর্যের চোখে চোখ রেখে তার করোনায় পা রেখে একেবারে বীরের মত অসাধ্য সাধন করে প্লাজমা এনে দিল পার্কার। মানে গোটা বিষয়টা এক কথায় বলতে গেলে দাঁড়াচ্ছে, সূর্যের উঠোনে সে প্রবেশ করলো, প্রায় চু- কিত কিত খেলতে খেলতে প্লাজমা সংগ্রহ করলো, এবং সেটা নিয়ে সোজা গবেষকদের কাছে পৌঁছে দিল।
সূর্যের এই করোনার তাপমাত্রা প্রায় ২ লক্ষ ডিগ্রি সেলসিয়াসের কাছাকাছি। কখনও বা তারও বেশি। আর এই করোনাকে বেষ্টন করে আছে উচ্চতাপমাত্রা সম্পন্ন প্লাজমা। যা কিনা ওই সমস্ত তড়িদাহত কণার উৎস যারা গোটা সৌরজগৎ তথা মহাকাশকে প্রভাবিত করে – প্রভাবিত করে পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলকেও। ফলে মাঝেমধ্যেই পৃথিবীর দিকে প্রায় আলোর বেগে ধেয়ে আসে সৌরবায়ু। যার গতিবেগ ৫০০ কিলোমিটার থেকে শুরু করে ঘণ্টায় ১৮ লক্ষ মাইলও হতে পারে। যা বরাবর উদ্বেগে রাখে মহাকাশবিজ্ঞানীদের। তবে, এবার হয়তো আগাম সতর্কবার্তা পাওয়া যাবে। সূর্যের সংসারে পৃথিবীর এজেন্ট হয়ে কাজ করবে এই পার্কার প্রোব। একেবারে সূর্যের হাঁড়ির খবর এনে দেবে সে। কেনো সূর্যের সংসারে এত অশান্তি? কেন দুরন্ত বেগে ছিটকে আসে সৌরবায়ু? এই সৌরবায়ুর জন্মটাই বা কোথায়? সমস্ত খবর পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে সাপ্লাই করবে পৃথিবীকে।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে, হঠাৎ বিজ্ঞানীরা সূর্যের এই সৌরঝড় নিয়ে এতটা চিন্তিত কেন? মহাকাশবিজ্ঞানীরা বরাবরই কৌতূহলী গোত্রের। অসীমের সীমা জানতে বরাবরই পিপাসু তারা। তাই এই বিষয়ে আগ্রহ থাকাটা খুব স্বাভাবিক। ভারত সহ পৃথিবীর একাধিক দেশ উপগ্রহের পরিষেবার উপর নির্ভর করে। পৃথিবীর টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থা ও জিপিএস নেটওয়ার্ক এর মাধ্যমেই পরিদর্শিত হয়। সূর্য থেকে আগত সৌরঝড় যেই পরিষেবাকে নিমেষে তছনছ করে দিতে পারে। সম্প্রতি সূর্যের দেওয়ালে যে ফাটল লক্ষ্য করা গেছে সেখান থেকেই এই সৌর কণা নির্গত হচ্ছে ঝড়ের গতিতে। আর একবার তা পৃথ্বীর চৌম্বক ক্ষেত্রের কাছে আসলে টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থা ও জিপিএস নেটওয়ার্ক, সমস্তটা ওলটপালট হয়ে যাবে। তাই আগাম সতর্ক হওয়াটা জরুরি। যেই কাজটা একেবারে নির্ভুল ভাবে করবে পার্কার। এমনটাই আশা নাসার বিজ্ঞানীদের।
ব্যুরো রিপোর্ট