Trending
যে করে অধিক শ্রম, যেন তারে ডরে যম
লো ইনকামে নাহি খেদ বেশি পেলে বাড়ে মেদ…
বেশি কাজ করলে ফায়দা কার বেশি?
কর্পোরেটের আয় বাড়বে আর শ্রমিকের লাভ?
বেশি কাজ মানেই বেশি উৎপাদন?
তাতে কি কাজের মান বাড়ে না কমে?
সপ্তাহে ৭০ ঘন্টা কাজ করুন। ক্লান্ত হবেন, তো কী হয়েছে। একটু বিশ্রাম নিয়ে আবার দৌড়তে শুরু করুন। দেশকে পাঁচ থেকে তিনে টেনে তুলতে হবে। তরুণ প্রজন্ম নাকে দড়ি দিয়ে কাজ করবে না তো কে করবে? জ্যাঠা, কাকারা! প্রধানমন্ত্রী এখন ৭০ প্লাস। তিনি যদি করতে পারেন, তাহলে ইয়ং ব্লাডের প্রবলেমটা কোথায়? প্রতিবেদনে এটাই একটু বলব ছোট্ট করে।
চিন- একটা সময় ছিল আফিমের নেশায় বুঁদ হয়ে থাকত সারাক্ষণ। চিনের তরুণ প্রজন্মের হাতে তখন হ্যারিকেন। পাকা রাঁধুনি যেমন একটি ভাত টিপেই বুঝতে পারেন ভাত হয়েছে কিনা, খানিকটা সেভাবেই বুঝতে পেরেছিলেন মাও জে দং। আফিমের নেশা থেকে না বের করতে পারলে চিন ওয়ার্ল্ড ম্যাপ থেকে যে বিলীন হয়ে যাবে, সেটা বুঝতে একটুও অসুবিধা হয়নি চৈনিক নেতার। নেশা থেকে টেনে বের করে আনলেন ইয়ং ব্লাডস। তারপর বললেন, বেশি বেশি পরিশ্রম করো। দেশের অর্থনীতি মজবুত করতে হবে। ইন্সপিরেশন পেয়ে অ্যাড্রিনালিন রাশ হল চিনের তরুণ প্রজন্মের। ব্যস, আফিম ফেলে কর্মবীর হয়ে পড়ল সবাই। আজ চিন কোথায় আর আমরা…নারায়ণ…নারায়ণ…
সেকেন্ড ওয়ার্ল্ড ওয়ারের পর জাপান এবং জার্মান এই দুটো দেশের ইকোনমি একেবারে সাড়ে বত্রিশ ভাজা হয়ে যায়। দেশের ইকোনমিকে দাঁড় করাতে জার্মানি আর জাপানি তেল লাগিয়ে…ইয়ে… মাঠে নেমে পড়ে। লম্বা দৌড় দিতেই ইকোনমি চাঙ্গা। কোথায় জার্মান আর জাপানের ইকোনমি আর কোথায় আমরা…নারায়ণ…নারায়ণ…
স্বামীজি বলেছেন, ফলের আশা না করেই কর্ম করে যাও। ইনফোসিস যার ব্রেন চাইল্ড- নারায়ণ মূর্তি তিনি বলেছেন ফলের আশা ভবিষ্যতে, কর্ম করো এখন। ওয়ার্ক হার্ড, ভেরি হার্ড, ভেরি ভেরি হার্ড। কতক্ষণ সপ্তাহে ৭০ ঘণ্টা। মানে সপ্তাহে ৬ দিন যদি কর্মদিবস ধরা হয়, তাহলে ঐ গড়ে ১১ ঘণ্টার বেশি। বাকি দু’দিন মানে ঐ হলিডে becomes your holy-day. ছুটির দিনগুলো একটু বেশি ভালো লাগবে। নারায়ণ মূর্তির কথাটা ফেলে দেবার মত নয়, সেটা কে বোঝাবে শ্রমিক সংগঠনগুলোদের? নারায়ণ…নারায়ণ…
আপনি যতই বেশি বেশি কাজের কথা বলুন, সমালোচনা শুনতে আপনাকে হবেই। শুধু ঘাড় গুঁজে মুখ বুঝে কাজ করলে উৎপাদন ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়- এই কথা অনেকেই মানতে রাজি হচ্ছেন না। শ্রমিক সংগঠনগুলো এই প্রবীণ শিল্পপতির সমালোচনায় মুখর। তার মানে কি দেশের তরুণ প্রজন্ম আর কাজ করতে চায় না? তারা চায় না দেশের ইকোনমি চন্দ্রযান-৩ এর মত সাফল্য পাক। জিও ইকোনমির মাটি এখন চাঁদের মত। সেখানে সফট ল্যান্ডিং করতে গেলে হার্ড প্রিপারেশন করতে হবে। মানে তরুণ প্রজন্ম যদি সফট প্রিপারেশন করে তাহলে হার্ড ল্যান্ডিং হবে। দেশের ইকোনমি তাহলে…নারায়ণ নারায়ণ…
কিন্তু দেশের ইয়ং ব্লাডদের প্রবলেমটা কোথায়? তারা অলস, কর্মবিমুখ? একেবারেই না। আসলে ভূত রয়েছে সর্ষের মধ্যেই। বড়লোকের ঢাক তৈরি, গরীব লোকের চামড়ায়…
রাষ্ট্রপুঞ্জের অধীনস্থ আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল লেবার অর্গানাইজেশন একটা রিপোর্ট প্রকাশ করেছে। আর সেখান থেকে স্পষ্ট হচ্ছে দেশের তরুণ প্রজন্ম বা যাকে বলা যেতে পারে ইয়ং ওয়ার্ক ফোরস- তাদের অবস্থা একেবারেই ভালো নয়। আইএলও বলছে, ভারতের বিভিন্ন সংস্থার এমপ্লয়িরা সপ্তাহে ৪৭.৭ ঘণ্টা বা প্রায় ৪৮ ঘণ্টার কাছাকাছি কাজ করেন। দেশের ১০টা বৃহত্তম ইকোনমির দিকে তাকালে ভারতীয়দের পরিশ্রম সবথেকে বেশি। কিন্তু মুশকিল হচ্ছে, আয়-ব্যয়ের হিসেবে। দৈহিক এবং মানসিক পরিশ্রমে যে ব্যয় হচ্ছে, সেই তুলনায় আয় কোথায়? মানে, ভারতের এমপ্লয়িরা প্রতি সপ্তাহে গড়ে যত কাজ করেন, সেই তুলনায় বেতন তাঁরা পান না। আরও সহজ ভাবে বললে একেবারে লোয়েস্ট। কিরকম- একটা হিসেব দিচ্ছি।
ফ্রান্সের কর্মীরা সপ্তাহে ৩০ ঘণ্টার একটু বেশি কাজ করেন। ইনকাম মাথাপিছু ৪৬ লক্ষ টাকার বেশি। ভারতে পরিশ্রম করছেন কর্মীরা ৪৭.৭ ঘন্টা। আর ইনকাম থোরা কম- মাত্র ৭ লক্ষ মত। আচ্ছা, পুঁজিপতির দেশ আমেরিকার কথা ধরা যাক। তারা সপ্তাহে কাজ করে ৩৬.৪ ঘণ্টা মত। জার্মানরা কাজ করেন ৩৪.৩ ঘণ্টা মতন। ইতালিয়ানরা কাজ করেন ৩৬.১ ঘণ্টা মতন আর কানাডিয়ানরা কাজ করেন ৩২.১ ঘণ্টা মতন। শুধু ভারতীয়দের অবস্থাই একটু মাঠে মারা যাচ্ছে। পরিশ্রম বেশি কিন্তু আয় কম। তাহলে কি নারায়ণ মূর্তি বলতে চাইছেন, যে করে অধিক শ্রম, যেন তারে ডরে যম। লো ইনকামে নাহি খেদ বেশি পেলে বাড়ে মেদ… নারায়ণ নারায়ণ
ছিঃ ছিঃ…নারায়ণ মূর্তি এই কথা কেন বলবেন? তিনি বলছেন, যত পারো কাজ করো। কিন্তু ইনকাম কম হলে কাজেকম্মে আরও বেশি বেশি কি মন বসে কারো? অতএব নারায়ণ মূর্তির পাশে দাঁড়ালেন সজ্জন ব্যবসায়ী সজ্জন জিন্দল। তিনি অকপটে বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী এই বয়সে দিনে ১২-১৪ ঘণ্টা কাজ করছেন। তিনি নিজে এখনো ১২ ঘণ্টা কাজ করেন ডেলি। আর ইয়ং ম্যানরা কর্মবীর না হয়ে লেজিবীর হবে এটা অকল্পনীয় ব্যপার। এই লাইনে গাড়ি থামিয়ে নেমে পড়েছেন ওলার সহ প্রতিষ্ঠাতা মানে কো-ফাউণ্ডার। ভবিশ আগারওয়াল। তিনি বলেছেন, উন্নত দেশগুলোতে সকলে ডেলি চার-পাঁচ ঘণ্টা কাজ করে কারণ তাঁদের আগের জেনারেশন দাঁতে দাঁত চেপে কাজ করে গেছে- ঐ ১২ ঘণ্টা ১৪ ঘণ্টা।
সব শুনে মনে হচ্ছে কবে অমাবস্যা আর কবে পূর্ণিমা- সেসব ক্যালেন্ডারে দেখার সময় পান নি তাঁরা। ইকোনমিতে অমাবস্যা ছিল তো তাই পূর্ণিমা আনতে কর্মবিপ্লব একটু বেশিই করতে হয়েছে। ভারতের তরুণ প্রজন্মকেও তেমন একটা কিছু করতে হবে। অনেকে আবার মুখ বেঁকিয়ে সবার অলক্ষ্যে হাসছে। কারণ…যতই তুমি কাজ করো, মাইনে তোমার ১১২…মানে কাজ বেশি করে যতই দিনরাতের হিসেব গুলিয়ে ফেলুন, মাইনেটি আর বাড়ছে না। এ কী অলক্ষুণে কথা বলুন দেখি- নারায়ণ…নারায়ণ…
অতএব? আপনারা কী বলেন? বেশি কাজ করলে ফায়দা কার বেশি? কর্পোরেটের আয় বাড়লেও শ্রমিকের লাভ কোথায়? তাই কর্মবীর হয়ে কাজ করবেন সপ্তাহে ৭০ ঘণ্টা? খেয়াল রাখবেন দেশ এগোলে, আপনারাও এগোবেন। তাই সেটা একবার বলেই দেন, জানান আপনাদের মতামত কমেন্ট বক্সে। আর লাইক করুন, শেয়ার করুন। সঙ্গে ভুলবেন না কিন্তু সাবস্ক্রাইব করতে আমাদের চ্যানেল বিজনেস প্রাইম নিউজ।
জীবন হোক অর্থবহ