Trending
উদ্বোধন করা হল নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয়ের নয়া ক্যাম্পাস। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, বিদেশমন্ত্রী এস জয়শংকর, বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতিশ কুমার সহ আরও অনেকেই। নির্বাচনে জিতে এই প্রথম বিহার ভ্রমনে যান প্রধানমন্ত্রী। আর সেখানে গিয়ে দেশের তথা এশিয়ার গর্ব নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয়ের নয়া ক্যাম্পাস উদ্বোধন করেন তিনি। একইসঙ্গে নালন্দার সঙ্গে জড়িত গর্ব এবং ঐতিহ্যের কথা বলেন তিনি।
তিনি বলেন, বই পুড়লেও জ্ঞান ধ্বংস হয় না। ইতিহাস সাক্ষী আছে, ঘৃণা আর ঔদ্ধত্বের আগুনে কীভাবে ধ্বংস হয়েছিল এই মহাবিহার। তিনমাস ধরে দাউদাউ আগুনে জ্বলেছিল নালন্দার পাঠাগার। পুড়ে খাক হয়েছিল ৯০ লক্ষ বই। হাজার হাজার বৌদ্ধ ভিক্ষুকে জীবন্ত অবস্থাতেই পুড়িয়ে মারা হয়েছিল। কারও কারও মাথা কেটে ফেলা হয়। যাঁরা বেঁচে যান, তাঁরাও পালিয়ে যান সেখান থেকে। চোখের সামনে ধ্বংস হয়ে যায় নালন্দা। আজও এই দৃশ্যের কথা ভাবলে শিউড়ে ওঠে দুনিয়া। প্রায় ৮০০ বছর ধরে কেবল ভারত নয়। চিন, জাপান, কোরিয়া, ইন্দোনেশিয়া, পারস্য, তুরস্ক, শ্রীলঙ্কার মতো দেশের মেধাবী ছাত্রদেরও শ্রেষ্ঠ আশ্রয়স্থল ছিল নালন্দা মহাবিহার। যা কিনা তুর্কি যোদ্ধা মহম্মদ বিন বখতিয়ার খিলজি এবং তার হানাদার বাহিনীর আক্রমনে আর ঘৃণার আগুনে ছিন্নভিন্ন হয়ে যায়। রাতারাতি খাঁ খাঁ শ্মশানে পরিণত হয় শিক্ষার ই অনন্ত বিহার। বলা যায় সমগ্র এশিয়ার শিক্ষাজগতের কাছেই এই ক্ষতি ছিল অভাবনীয় ও অপূরণীয়। কেমন ছিল সেই পুরনো নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয়?
হাজার দশেক ছাত্র। দেড় থেকে ২ হাজার শিক্ষক আর প্রায় ৯০ লক্ষেরও বেশি বই নিয়ে পরিপূর্ণ ছিল শিক্ষার এই মহাবিহার। তবে এখানে সুযোগ পাওয়া মটেই সহজ ছিল না। দিতে হত কঠিন পরীক্ষা। মেধা এবং একমাত্র মেধাই ছিল এই বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার একমাত্র চাবিকাঠি। আর এই বিষয়ে আপোষ করা হত না রাজপরিবারে ক্ষেত্রেও। আর যারা সেই কঠিন পরীক্ষায় পাশ করে এই বিস্ববিদ্যালয়ে আস্তেন্ন, তাদের শ্রেষ্ঠত্ব ছিল তর্কাতীত। ছিলেন আর্যভট্টের মতো গণিতবিদ, নাগার্জুন, বসুবন্ধ, হিউয়েন সাং-এর মতো শিক্ষাগুরু। আর এখানকার শিক্ষাব্যবস্থা যে কতটা সমৃদ্ধ এবং সিস্টেমেটিক ছিল, সেই তখনকার সময়ে দাঁড়িয়ে, তা বোধ হয় আজকের দিনে দাঁড়িয়ে ভাবনাতেও আসবে না কারও।
বুধবার সেই মহান শিক্ষাকেন্দ্রের নতুন ক্যাম্পাস উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। শিক্ষাক্ষেত্রে ভারতের হৃতগৌরব ফেরাতে ১৭০০ কোটি টাকা ব্যয়ে নতুন ক্যাম্পাস গড়ে তোলা হয় রাজগীরে। কী কী থাকছে এই নতুন ক্যাম্পাসে? রাজগীরের নয়া ক্যাম্পাসে দুটি ব্লকে ৪০টি বড়সড় শ্রেণিকক্ষ রয়েছে। যেখানে ১৯০০ জন পড়ুয়ার বসার ব্যবস্থা রয়েছে। একেকটি শ্রেণিকক্ষে সর্বোচ্চ ৩০০ পড়ুয়া একসঙ্গে পঠনপাঠনে অংশ নিতে পারবেন। ক্যাম্পাসের হোস্টেলে ৫৫০ জন শিক্ষার্থীর থাকার ব্যবস্থা রয়েছে। এছাড়াও শিক্ষাকেন্দ্রের বিভিন্ন ধরনের অনুষ্ঠান, আলোচনা সভা ইত্যাদির জন্য ইন্টারন্যাশানাল সেন্টার, অডিটয়োরিয়ামও রয়েছে। অডিটোরিয়ামটিতে ২০০০ আসন রয়েছে। পাশাপাশি ক্যাম্পাসে রয়েছে স্পোর্টস কমপ্লেক্স এবং ফ্যাকাল্টি ক্লাবও।
লোকসভা ভোটের প্রচারে চারশো পারের দাবি তুলে ধাক্কা খেয়েছে বিজেপি। একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়নি মোদি-শাহর দল। এরপর প্রধানমন্ত্রীর শপথ নিয়েই একের পর এক প্রকল্প উদ্বোধন করছেন মোদি। মঙ্গলবার পিএম কিষাননিধির ১৭তম কিস্তি ২০ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দের পর এদিন শরিক নীতীশ কুমারের রাজ্য বিহারে যান মোদি। আর সেখান থেকেই নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয়ের নয়া ক্যাম্পাস উদ্বোধন করেন তিনি। জানান, আগামীতে দেশে তরুণদের শিক্ষার চাহিদা পুরনে একইরকম গ্ল্যামার ধরে রাখবে নালন্দা।
দেখতে থাকুন বিজনেস প্রাইম নিউজ। জীবন হোক অর্থবহ।