Agriculture news
আজকের কচিকাঁচারাই দেশের ভবিষ্যৎ। সেটা শুধু ভারত বলে নয়। গোটা বিশ্বে। আপনাদের একটা তথ্য দিই। বর্তমানে এই পৃথিবীর দুই বিলিয়ন মানুষ অপুষ্টির শিকার। পাঁচ বছরের নিচে থাকা ৬৯% শিশুর মৃত্যুর কারণ একটাই- আর সেটা ম্যাল নিউট্রিশন। অপুষ্টি একটা দেশকে সার্বিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ করে দেয়। সামাজিক, রাষ্ট্রীয় এবং অর্থনৈতিক দিক থেকে দেশের সার্বিক ডেভেলপমেন্টের জন্য শিশুদের অপুষ্টির শিকার করা যাবে না। আর অপুষ্টিকে দূরে হঠাতে পারবে একমাত্র দুধ। কিন্তু সেখানেও রয়েছে সমস্যা। কারণ ভেজাল খাবার আজকের দিনে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আর দুধে ভেজাল মানে সেটা শিশুদের ভবিষ্যৎকেই দূরে ঠেলে দিতে পারে। তাই দুধের পুষ্টিগুণ আরও বাড়াতে হবে। অন্তত আমাদের দেশে। আর যে কারণে লাগাতার পরিশ্রম করছেন বৈজ্ঞানিকরা। তেমনই একটা প্রচেষ্টা ধরা পড়ল বিজনেস প্রাইম নিউজের ক্যামেরায়। সম্প্রতি পশ্চিমবঙ্গ প্রাণি এবং মৎস্য বিজ্ঞান বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেয়ারি টেকনোলজি ফ্যাকাল্টির নাহেপ আয়োজন করল তিনদিনব্যাপী জাতীয় কর্মশালা। যেখানে বিষয় ছিল এনহান্সিং দ্য ফাংশনালিটি অফ ডেয়ারি ফুডস থ্রু ফর্টিফিকেশনঃ কোয়ালিটি অ্যান্ড চ্যালেঞ্জেস। বিস্তারিত জানতে হলে প্রতিবেদনটি দেখুন একেবারে শেষ পর্যন্ত।
দুগ্ধ উৎপাদনে বিশ্বে বিউগল বাজাচ্ছে ভারত। আমাদের দেশ সার্বিকভাবে এগিয়ে রয়েছে অন্যান্য দেশের থেকে। কিন্তু শুরুতেই যে বললাম, অপুষ্টি রয়েছে এতোকিছুর পরেও। অনেকেই আবার সমস্যা সমাধানের জন্য বিভিন্ন রকম ভিটামিন ট্যাবলেট এবং মিনারেলস নিয়ে থাকেন। সেটা ব্যয়সাধ্য এবং একটা বৃহৎ অংশের মানুষের পক্ষে সেটা গ্রহণ করা বেশ কঠিন। তার জন্য ফুড সেফটি অ্যান্ড স্ট্যান্ডার্ড অথরিটি অফ ইন্ডিয়া বা যাকে আমরা ফ্যাসাই বলে থাকি এই বিষয়ে গুরুত্ব দিয়ে কাজ করছেন ২০১৬ সালের অক্টোবর মাস থেকে। তারা খাদ্যদ্রব্যে সরাসরি মাইক্রো নিউট্রিয়েন্ট যুক্ত করার কাজটি করছে যাকে আমরা বলে থাকি ফরটিফিকেশন। আচ্ছা, আরেকটু ডিটেলে বলা যাক ফরটিফিকেশন বিষয়টা কী?
দেখুন, মাইক্রো নিউট্রিইয়েন্টের ঘাটতির ফলে মানুষের জীবনে বহুমুখী সমস্যা দেখা যায়। যে ঘাটতি দূর করতে মূল্যবান ট্যাবলেট এবং মিনারেলস খেতে হয়। তাই যদি আমরা আমাদের প্রধান খাদ্য চাল, আটা এবং দুধের মধ্যে দিয়ে ইক্রো নিউট্রিয়েন্ট মিশ্রিত ফর্টিফাইড খাদ্য, মিল্ক সস্তা দরে সহজলভ্য ভাবে গ্রহণ করতে পারি তবে অপুষ্টি জনিত সমস্যা অনেকাংশে কমতে পারে। সেক্ষেত্রে আমাদের দামি ট্যাবলেট এবং মিনারেলস খেতে হবে না। জনসংখ্যা বাড়ছে। পাল্লা দিয়ে বাড়ছে অপুষ্টিজনিত সমস্যা। তাই দুধ প্রক্রিয়াকরণের সময় যদি আমরা মাইক্রো নিউট্রিয়েন্ট মিশিয়ে দিতে পারি, বিশেষত ভিটামিন এ এবং ভিটামিন ডি- তাহলে কিন্তু বহুমুখী সমস্যা অনেকটাই কমবে। চোখের সমস্যা, স্কিনের সমস্যা, হাড়ের সমস্যা কমবে ফলে ভালো থাকা সম্ভব।
আমাদের বাংলায় গো-সম্পদের অভাব নেই। কিন্তু অভাব রয়েছে উন্নত জাতের দুগ্ধ উৎপাদনে। তাই উৎপাদন বৃদ্ধির প্রয়োজন রয়েছে। একইসঙ্গে মাইক্রো নিউট্রিয়েন্টের ঘাটতি মেটাতে এনরিচ মিল্ক প্রোডাক্টে পৌঁছতে হবে। তাই ফরটিফিকেশনের প্রয়োজন কোনভাবেই অস্বীকার করা যাবে না।
এই কর্মশালায় বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ফুড এন্ড নিউট্রিসিয়ান বিভাগের ৩৬ জন স্নাতকোত্তর ছাত্র-ছাত্রী, গবেষক অংশগ্রহণ করেন। যাদের কাছে ফরটিফিকেশনের গুরুত্ব শুধু তুলে ধরা হয়নি। একইসঙ্গে বলা হয়েছে কিভাবে দুধকে আরও এনরিচ করা যেতে পারে সেই বিষয়টা।
কর্মশালার উদ্বোধনী অনুষ্ঠান এবং প্রশিক্ষক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ডক্টর সুমিত আরোরা, প্রিন্সিপাল সায়েন্টিস্ট, ডেয়ারি কেমিস্ট্রি ডিভিশন, আইসিএআর – এন ডি আর আই , কার্নেল, হরিয়ানা, ডক্টর বিবেক শর্মা, প্রিন্সিপাল সায়েন্টিস্ট, ডেয়ারি কেমিস্ট্রি ডিভিশন, আইসিএআর — এন ডি আর আই , কার্নেল, হরিয়ানা, ডক্টর শান্তনু বনিক, হেড, আইসিএআর — এন ডি আর আই, ইস্টার্ন রিজিয়ন স্টেশন, কল্যাণী, অধ্যাপক পিনাকী রঞ্জন রায়, কো-অর্ডিনেটর, ন্যাশনাল ওয়ার্কশপ, ডক্টর লোপামুদ্রা হালদার, প্রিন্সিপাল ইনভেস্টিগেটার, NAHEP, এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন পশ্চিমবঙ্গ প্রাণী ও মৎস্য বিজ্ঞান বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্টার, এবং ডেয়ারি টেকনোলজি ফ্যাকাল্টি ডিন। এই জাতীয় কর্মশালায় শুধুই ফরটিফিকেশন, মিল্ক টেস্টিং নয় , কি করে এন্টারপ্রনিয়র হতে হয় সে বিষয়েও আলোকপাত করেন আলোচকরা।
সুব্রত সরকার
নদীয়া