Trending
গোল্ডেন গ্লোবসের পর এবার অস্কারের মঞ্চে নাটু নাটু। তেলুগু ছবির ইতিহাসে প্রথম তো বটেই, পরিচালক মিঃ রাজামৌলির কেরিয়ারেও এটা প্রথম। আরআরআর সিনেমার এই গানটি নিয়ে প্রথম থেকেই একটা তীব্র সম্ভাবনা ছিল। এবার সেই সম্ভাবনা অবশেষে সত্যিও হল। গানটি তৈরি করেছেন এম এম কীরাবাণী। তাঁর হাত ধরে এই গান পৌঁছে গেল আন্তর্জাতিক মঞ্চে। কিন্তু যদি বলি, এর পিছনেও একটা অদৃশ্য সমীকরণ কাজ করছে। মানে, একটা বড় প্রশ্নচিহ্ন তৈরি হয়েছে এই গানের অস্কার জেতা নিয়ে। ছোট্ট একটা পলিটিক্যাল স্ট্যান্ডপয়েন্ট আর কি। সেটাই একটু আলোচনা করব আপনাদের সঙ্গে।
রাজামৌলি দক্ষিণ ভারতের অন্যতম বড় পরিচালক। এখন অবশ্য তিনি শুধু আর দক্ষিণ ভারতের নন। বরং গোটা দেশে রাজামৌলি আজ নিজেই একটা ব্র্যান্ড। বাহুবলী থেকে শুরু করে আরআরআর। বিগ বাজেটের ছবি। পরপর ব্লকবাস্টার। আরআরআর সিনেমার গানগুলি তৈরি করেছেন এম এম কীরাবাণী। গানটা রিলিজ করার পর থেকেই তুমুল জনপ্রিয়তা পেতে শুরু করেছিল দেশব্যাপী। জুনিয়র এনটিআর এবং রাম চরণের দুর্ধর্ষ রসায়ন, তার সঙ্গে সিনেমাটোগ্রাফি এবং সর্বোপরি পরিচালনা- রাজামৌলির পুরো টিমকে স্বাগত জানিয়েছিলেন দেশের মানুষ। সিনেমা দেখে রাজামৌলির প্রশংসা করেছিলেন স্টিভেন স্পিলবারগ থেকে জেমস ক্যামেরন। নাটু নাটু গানের সঙ্গে বিশেষ একটি নাচের স্টেপ ভাইরাল হয়ে যায়। এবং বিদেশের মঞ্চে গানটাকে কিভাবে আরও বড় বড় অনুষ্ঠানে তুলে ধরা যায়, সেই নিয়ে পরিচালক থেকে প্রযোজক সকলেই ছিলেন গভীর ভাবনায়। অবশেষে তাঁদের স্বপ্ন এবং পরিশ্রম সত্যি হল। এই গানের হাত ধরেই ভারতের কাছে চলে এলো অস্কার। এতোক্ষণ পর্যন্ত ঠিক ছিল সবই। কিন্তু তারপরেই একটা ধোঁয়াশা তৈরি হল। বিষয়টা যদি একটু অন্য অ্যাঙ্গেল থেকে দেখা যায়, সেটাই।
আমরা সকলেই নাটু নাটু গানটার দৃশ্যায়ন দেখেছি। অতবড় ঝাঁ চকচকে প্রাসাদ, তার সামনে এতো সুন্দর মিস-এ-স, যাকে বলা যেতে পারে আর্ট ডিরেকশন। জায়গাটা দেখলেই যেন এক নিমেষে মাথাটা বোঁ করে ঘুরে যায়। অনেকের মনেই সেই সময় প্রশ্ন তৈরি হয়েছিল, এই গানটা যেখানে শুটিং করা হয়েছে, সেই জায়গাটা আসলে কোথায়? হয়ত উত্তরটা জানেন না। তাহলে বলে রাখি, গানে যে প্রাসাদপ্রম বাড়িটি দেখা যাচ্ছে, আসলে সেটা ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টের বাসভবনের সামনে। বিতর্ক বলুন আর নাই বলুন, তার সুতো রয়েছে এখানেই। তার কারণ…খুব সোজা।
রাশিয়ার সঙ্গে ইউক্রেনের যুদ্ধ লাগার পর, ভারত একতরফা রাশিয়ার পক্ষে হেঁটেছে। পক্ষে অর্থাৎ, রাশিয়ার থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয় নি ভারত। পশ্চিমা দেশগুলোর যাবতীয় সতর্কবাণী উপেক্ষা করেই। এখন বিষয়টা হচ্ছে, ভারত আজ নিজের ভাগ্য নিজেই রচনা করছে। ভারতের ভাগ্যবিধাতা আর কেউ নয়, খোদ ভারত ছাড়া। আর সেটা এতদিনে বুঝে গেছে পশ্চিমা দেশসহ মার্কিন মুলুক। যুদ্ধবিধ্বস্ত ইউক্রেনের পাশে যখন এই সব দেশ সম্মিলিতভাবে আওয়াজ তুলেছিল, তখন ভারতের একলষেঁড়ে মনোভাবটা কিন্তু অনেকেই পছন্দ করেনি। ভারতের অবস্থা এখন বিশ্বরাজনীতিতে এখন কেমন জানেন? ভারতের ওপর রাগ, ক্ষোভ সবই হতে পারে। কিন্তু দেশটার ইকোনমির ভবিষ্যতের দিকে তাকিয়ে আপনি কখনোই উপেক্ষা করতে পারবেন না। ভারতকে পাশে চাইছে সকলেই। আর আমরা সকলেই জানি, অস্কারের মঞ্চ বা গোল্ডেন গ্লোবের মঞ্চ মানেই সেখানে পুরো কর্তৃত্ব থাকে মার্কিন মুলুকের হাতেই। বিতর্ক দানা বাঁধছে ঠিক এখান থেকেই। মানে মোদ্দা কথা হচ্ছে, রাশিয়ার পক্ষপাতিত্ব নেওয়ার ব্যপারটা মার্কিন মুলুক একেবারেই ভালো চোখে দেখে নি। তাই ইউক্রেনের পাশে দাঁড়ানোর জন্য গানটির একের পর এক বিদেশী পুরস্কার জয়, যেন মার্কিন প্রশাসনের তরফ থেকেই একটা বার্তা ভারত সরকারের কাছে। প্রথমে গোল্ডেন গ্লোব, তারপর অস্কার। সাফ বাত এটাই যে, গানটা যদি ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টের বাসভবনের সামনে না-হত, তাহলে হয়ত রিহানা বা লেডি গাগাদের পিছনে ফেলে দেওয়াটা একটু কঠিন হয়ে যেত।
আপনার কি মনে হয় জানান কমেন্ট বক্সে। তবে প্রতিবেদন শেষ করার আগে একটা কথা। আরআরআর ছাড়াও এবার অস্কারের মঞ্চ আলোকিত করেছেন আরেক ভারতীয় পরিচালক। তাঁর সিনেমা দ্য এলিফ্যান্ট হুইস্পারার্স। সেরা স্বল্পদৈর্ঘ্যের তথ্যচিত্র হিসেবে খেতাব জিতে নিয়েছে সিনেমাটি। ছবিটি প্রযোজনা করেছেন গুনীত মোঙ্গা এবং পরিচালনা করেছেন কার্তিকি গনসালভেস। কিন্তু সব কিছুর শেষে একটাই প্রশ্ন। নাটু নাটু গানের এই বিশ্বভ্রমণের কারণ কি তবে শুধুই ইউক্রেন? আর এভাবেই বার্তা গেল ভারত সরকারের কাছে?
বিজনেস প্রাইম নিউজ।
জীবন হোক অর্থবহ